আজকের শিরোনাম :

‘ঢাকা শহরে গ্যাসের লাইনের যে অবস্থা, ভূমিকম্প হলে বড় বিপদ’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৫ | আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:১৯

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেছেন, ‘তিতাসের গ্যাস সরবরাহ লাইন বেশ পুরোনো, সেটা জেনেও তিতাস তাদের গ্যাস সঞ্চালন লাইন সংস্কার করে না। তাদের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে গতকাল রাতের ঘটনা ঘটেছে। ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্যাস প্ল্যান্ট বিস্ফোরণ হয়ে সামনে যে বিপদ ঘটবে, সেটা আমাদের কল্পনার বাইরে। তিতাসের উচিত নাগরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে সরবরাহ লাইন জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা।’ ম তামিমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন।

প্রশ্ন: সোমবার (২৪ এপ্রিল) গ্যাস লিকেজের জন্য তিতাস অতিরিক্ত গ্যাসের চাপকে দায়ী করেছে। বলা হচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ লাইনে অতিরিক্ত গ্যাস থাকার কারণে গ্যাস লিক করেছে। এই ব্যাখ্যা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

ম তামিম: ঈদের ছুটির কারণে অধিকাংশ কলকারখানা ও গৃহস্থালিতে গ্যাসের চাহিদা কমে যাওয়ায় সরবরাহ লাইনে গ্যাস উদ্বৃত্ত ছিল। চাহিদা কমে যাওয়ার পরেও তিতাস গ্যাস সরবরাহ না কমানোয় গ্যাসের অতিরিক্ত প্রেশারে আগে ঢাকা শহরে যেসব ছোটখাটো লিকেজ ছিল, সেগুলো দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে গেছে। গতকাল গ্যাসের লিকেজ নিয়ে তিতাসের যে বক্তব্য, সেটা আমার মনে হয় যুক্তিযুক্ত। 

প্রশ্ন: আগে আমরা শুনতাম, ঢাকা শহরের বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় গ্যাসের লিকেজ হচ্ছে। কিন্তু গতকাল (সোমবার) ঢাকার অধিকাংশ জায়গায় লিকেজ ধরা পড়ার কারণ কী? 

ম তামিম: ঢাকা শহরে তিতাসের যেসব বিতরণ লাইন আছে, সেগুলো ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। এই পুরোনো লাইনগুলো নিয়মিত সংস্কার করা দরকার। কিন্তু তিতাস সেটা করে না। এর ফলে যেটা হয়েছে, আগে কোনো জায়গায় ছোটখাটো লিকেজ থাকলেও পাইপ লাইনে গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থাকার কারণে গ্যাসের প্রেশার ছিল কম। ফলে ওই সব ছোটখাটো ফুটো দিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস বের হয়ে যায়নি। কিন্তু গতকাল সরবরাহ লাইনে অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ থাকায় পুরো ঢাকা শহরে থাকা অসংখ্য ফুটো দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে গেছে। আগে ছোটখাটো লিকেজ অথবা সরবরাহ লাইনে জং ধরে থাকলে, সেগুলো গতকাল গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে এক্সপোজ হয়ে গেছে। 
 
প্রশ্ন: গ্যাসের এই লিকেজ আমাদের সরবরাহ লাইনের বড় দুর্বলতাকে ফুটিয়ে তুলেছে কি না? 

ম তামিম: তিতাসের গ্যাস সরবরাহ লাইনে লিকেজ আছে, সেটা আমরা আগে থেকে জানতাম। গতকালের ঘটনা লিকেজের ব্যাপকতাকে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। কাল ঢাকা শহরে যেভাবে লিকেজ ধরা পড়েছে, সেটা একটা বিশাল বিপদের কারণ হতে পারত। গ্যাস সরবরাহ লাইনের দীর্ঘদিনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গতকাল এ ঘটনা ঘটেছে। গতকালের ঘটনায় আমাদের গ্যাস সরবরাহ লাইনে যে প্রচুর লিকেজ আছে, সেটার একটা পরীক্ষাও হয়ে গেল। 

প্রশ্ন: ঢাকা শহর এমনিতেই একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের লাইন এমনিতে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। তার ওপর তিতাসের লাইনের যে ত্রুটি ধরা পড়েছে, সেটা নাগরিক নিরাপত্তায় বড় একটা হুমকি কি না?

ম তামিম: ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের লাইন সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। তার ওপর আমরা গতকাল দেখলাম, ঢাকা শহরের সব জায়গায় তিতাসের সরবরাহ লাইনে প্রচুর ফুটো রয়েছে। তিতাসের সরবরাহ লাইনের বর্তমান যে অবস্থা, তার ওপর যদি ভূমিকম্প হয়, তাহলে ঢাকা শহরে বড় বিপদ, যেটা আমাদের কল্পনারও বাইরে। ভূমিকম্পের সময় মূল সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিতে হয়। আমি জানি না, তিতাসের সে রকম কোনো ব্যবস্থা আছে কি না। ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিতাস কীভাবে গ্যাস সরবরাহ লাইন ম্যানেজ করবে, সে রকম প্রস্তুতি তাদের থাকা উচিত। অনেক ভালো ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও ভূমিকম্পের সময় গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন ধরে যায়। সরবরাহ লাইনে আমাদের মতো দুরবস্থা থাকলে আর তো কোনো কথা নেই। 

প্রশ্ন: গ্যাস সরবরাহ লাইনে তিতাসের দুর্বলতা আছে, সেটা সবাই জানে। কিন্তু তারপরও সরবরাহ লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভার হোলিংয়ের জন্য তিতাস কি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে? 

ম তামিম: আমরা দেখে আসছি, তিতাস সব সময় অ্যাডহক বেসিসে কাজ করে। কোথাও একটা লাইনে ফুটো দেখা গেছে, কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে তিতাস সেখানে সাময়িকভাবে সেই ফুটো সংস্কার করে। গ্যাস সরবরাহ লাইন আমূল সংস্কার করার কোনো পদক্ষেপ আমরা এখনো তিতাসের পক্ষ থেকে দেখিনি। আমরা অনেক দিন ধরে দেখে আসছি, তিতাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ করবে কি না, সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। গতকালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিতাসের উচিত সরবরাহ লাইনে গ্যাসের সরবরাহ বিষয়ে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে সরবরাহ লাইন সংস্কার করা। গ্যাস সরবরাহ লাইনে এখন যে অবস্থা, তাতে ভবিষ্যতে বড় বিপদ হতে পারে। 

প্রশ্ন: গতকালের ঘটনায় দেখা গেল, তিতাস গ্যাসের লিকেজ বন্ধ করার জন্য সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে আপাতত আর কোনো টেকসই পদক্ষেপ তিতাস নিতে পারে কি না? 

ম তামিম: গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে পাইপলাইনের লিকেজ বন্ধ করার যে পদক্ষেপ তিতাস গতকাল নিয়েছে, সেটা কয়েক ঘণ্টার জন্য নিতে পারে। তবে সেটা কোনো টেকসই পদক্ষেপ নয়। বাসাবাড়িতে এক-দেড় ইঞ্চির ছোট ছোট সরবরাহ লাইনের পাশাপাশি যেসব বড় লাইন আছে, সেগুলোর লিকেজ চিহ্নিত করে তিতাসকে বন্ধ করার উপায় বের করতে হবে। ঢাকা শহরে কোথায় লিকেজ আছে, সেটা বের করতে তিতাসের উচিত প্রথমে ম্যাপিং করা, যাতে তারা সরবরাহ লাইনের লিকেজ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা চিত্র পায়। 

প্রশ্ন: দেশের গ্যাস-সংকট নিরসনে জনগণের টাকা ব্যয় করে অতিরিক্ত দামে বিদেশ থেকে এলএনজি নিয়ে আসছে সরকার। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, লিকেজের কারণে মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রায় ২ শতাংশ অপচয় হয়, যা প্রায় ৬ মিলিয়ন ঘনফুট। একদিকে বেশি দামে গ্যাস আনছি, অন্যদিকে আমরা অপচয়ও করছি। 

ম তামিম: কিছুদিন আগেও আমরা টাকার অভাবে গ্যাস আনতে পারিনি। তিতাসের অদক্ষতার কারণে আমাদের মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। লিকেজের কারণে প্রায় ৬ মিলিয়ন ঘনফুট প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে। তিতাসের গ্যাস চুরি মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সিস্টেম লসে যাচ্ছে। এটা আমাদের জ্বালানি খাতের জন্য অনেক বড় বোঝা। তিতাস যদি সরবরাহ লাইনের লিকেজগুলো সংস্কার না করে, তাহলে প্রতি বছর কয়েক শ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হবে। আবার এলএনজি এনে অপচয় করার মতো বিলাসিতাও আমাদের মানায় না। তিতাসের উচিত ফরেন কারেন্সি সাশ্রয়ে গ্যাস অপচয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া।


সৌজন্যে : আজকের পত্রিকা।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ