আজকের শিরোনাম :

‘উচ্চমূল্যের পোশাকেও সামর্থ্যের প্রমাণ দিচ্ছে বাংলাদেশ’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:২১

প্রশ্ন : পোশাক রপ্তানিতে সুট ও ব্লেজার কী ধরনের মূল্য সংযোজন করছে?

ফারুক হাসান : তৈরি পোশাকের শত পণ্যের মধ্যে সুট ও ব্লেজার বেশ স্পর্শকাতর। ফরমাল এবং পার্টি ড্রেস সাধারণত দায়িত্বশীল ফ্যাশন সচেতনরাই পরে থাকেন। এ কারণে ফেব্রিক্স থেকে ফিনিশিং- সব ক্ষেত্রেই বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন হয়। বিলাসী ভোক্তার গায়ে শোভা পায় উচ্চমূল্যের এই পোশাক। প্রতি বছরই এর রপ্তানি বাড়ছে। এর মাধ্যমে উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে বাংলাদেশের সামর্থ্য প্রমাণিত হয়েছে। মৌলিক পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের ভালো ইমেজ আগে থেকেই রয়েছে। আমরা যে এখন উচ্চমূল্যের সব পোশাকপণ্যে ভালো করতে পারি সেটি বিবেচনায় বাংলাদেশকে আস্থায় নিয়েছে বড় বড় ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের মতো বাজারে কদর পাচ্ছে আমাদের সুট ও ব্লেজার। ফলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, পোশাক খাত এবং এ খাতের ইমেজ সমুন্নত রাখতে বড় ধরনের মূল্য সংযোজন করেছে সুট ও ব্লেজার।

প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে রপ্তানির গতিধারা কেমন?

ফারুক হাসান : চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সুট ও ব্লেজারের রপ্তানি আয়ে ৩০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে। এ ধরনের উচ্চমূল্যের পোশাকের কারণেই রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হচ্ছে। গত তিন মাসের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। বৈশ্বিক সংকটে এত বেশি হারে রপ্তানি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। রপ্তানি আয়কে সাজানোও বলেছেন কেউ কেউ। বাস্তবতা হচ্ছে, গত কয়েক মাসে এই সুট ও ব্লেজারের মতো উচ্চমূল্যের পোশাকের রপ্তানি ব্যাপক বেড়েছে। এ কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিমাণে আমাদের রপ্তানি খুব না বাড়লেও পণ্যমূল্যে রপ্তানি বেশ বেড়েছে। আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে। সম্ভাবনা বিবেচনায় আমাদের সুট ও ব্লেজার রপ্তানি এখনও খুব বেশি নয়। এই রপ্তানিতে আমি নিজেও খুব বেশি সন্তুষ্ট নই। কিন্তু সম্ভাবনাটা খুব আশাজাগানিয়া। অর্থাৎ রপ্তানি এখন যা হচ্ছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি করার সুযোগ রয়েছে আমাদের সামনে। পলো শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজারের মৌলিক পোশাকের দেশ হিসেবে আমাদের যে ইমেজ, তার বিপরীতে সুট ও ব্লেজারের মতো পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি শুরু করা আমাদের জন্য সাহসের। ব্র্যান্ড ও ক্রেতার ভালো সাড়ায় এ খাতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি আসছে। আমরা উদ্যোক্তারা জানছি, বুঝছি।  শ্রমিকরাও কারিগরি দিকগুলো রপ্ত করছেন। সুতরাং জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের পোশাকে বর্তমানের চেয়ে আগামী আরও উজ্জ্বল।

প্রশ্ন : সুট ও ব্লেজার উৎপাদনে বড় কোনো সমস্যা আছে কি?

ফারুক হাসান: বিশেষ কোনো দুর্বলতা আমি দেখছি না। তবে প্রায় পাঁচ দশক ধরে সাধারণ পণ্য উৎপাদনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে বিশেষায়িত পণ্য হিসেবে সুট ও ব্লেজার উৎপাদনে আসা সহজ নয়। এ ছাড়া ব্র্যান্ড ইমেজ বড় সমস্যা। তবে আমাদের অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসিসহ অন্য কিছু পদক্ষেপের ফলে ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ছে। এ লক্ষ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ উইক করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে মিশন যাচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশ এবং ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা বিজিএমইএ ভবনে আসছেন। তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ফন ট্রটসেনবাগও আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আমি কোনো ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ না করেই বলছি, উচ্চমূল্যের পোশাকের বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সব ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাই এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী।

প্রশ্ন : মানসম্পন্ন সুট উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সুতা-কাপড়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং কারিগরি সামর্থ্য কতটুকু? এ ক্ষেত্রে নিখুঁত ফিনিশিংও গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে সেটা কীভাবে হচ্ছে?

ফারুক হাসান: নিখুঁত সুট ও ব্লেজারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেটি ঠিক। আমাদের এখানে এই সংকট এখনও রয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে প্রায় সব কারখানায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সোলার প্যানেল স্থাপনে অর্থায়নসহ কারিগরি বিষয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি এবং কারিগরি দিক সম্পর্কে জানছি আমরা। ফেব্রিক্সে সমস্যা আছে। স্থানীয়ভাবে আমরা ওভেনের ফেব্রিক্স খুব কমই পাচ্ছি। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ জোগান স্থানীয়ভাবে হচ্ছে। সে কারণে সুট ও ব্লেজারের ফেব্রিক্সে এখনও আমদানি নির্ভরতা রয়েছে।

প্রশ্ন : তৈরি পোশাকের সার্বিক রপ্তানি পরিস্থিতি কেমন?

ফারুক হাসান: ভালো-মন্দ মিলিয়েই চলছে। পোশাকের বাণিজ্য আন্তর্জাতিক। সে কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভালো হলে রপ্তানি ভালো হয়, আবার খারাপ হলে তার অভিঘাতও থাকে। করোনার প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ইউরোপ-আমেরিকায় অর্থনৈতিক সংকটের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারছি পণ্যের সঙ্গে বাজারবৈচিত্র্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা- এসব বাজারে কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি, কোন মৌসুমে কোন পোশাকের কদর থাকে- এসব নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। গত মেইড ইন বাংলাদেশ উইকে শুধু ইরাক থেকেই ৫০ জন ক্রেতা প্রতিনিধি এসেছিলেন। এসব উদ্যোগের ফলে আগামীতে অপ্রচলিত বাজারের হিস্যা আরও বাড়বে। তবে মূল সমস্যা এখন গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। বিদ্যুতের দাম মোটামুটি সহনীয় হলেও শিল্পে গ্যাসের দাম এত বেশি হারে বাড়ানোর কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। তারপরও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ভালো করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এ কারণে আমরা গ্যাসের দাম পুনর্বিবেচনা করতে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছি।

 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু হেনা মুহিব। 
সৌজন্যে : দৈনিক সমকাল।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ