আজকের শিরোনাম :

‘জার্মানির সেই গতিটা এখন নেই, আরও উন্নতি দরকার’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১৭

জার্মানির চতুর্থ বিশ্বকাপের মহাসারথি মিরোস্লাভ ক্লোসা। ২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁর কাঁধে ভর করে শিরোপা জয়ের অনেকটা পথই পাড়ি দিয়েছিল দেশটি। চার টুর্নামেন্ট থেকে তাঁর করা ১৬ গোল এখনও বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ। এবার নতুন এক জার্মানি খেলবে কাতারে। তাঁদের ওপর সেভাবে আস্থা রাখতে পারছেন না বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এ তারকা। তবে একেবারে যে হতাশ তা-ও নয়। বিশ্বকাপ শুরুর লগ্নে এমন অনেক আশা-নিরাশার কথাই শুনিয়েছেন ক্লোসা।  এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য ক্লোসার সেই বিশেষ সাক্ষাৎকার-

প্রশ্ন: চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন, সেই আসরগুলো নিয়ে একটু বলবেন...

ক্লোসা: বিশ্বকাপে সব সময়ই বিশেষ কিছু থাকে, যেটা সবাইকে মুগ্ধ করে। আমি মনে করি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। শেষবার যখন বিশ্বকাপ খেললাম, ২০১৪ সালের কথা বলছি, সেই অনুভূতিটা সত্যিই আমাকে এখনও নাড়া দেয়। যদিও তার আগে আমরা ভালো করেছি। ২০০২ বিশ্বকাপে আমরা ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত হেরে যাই। তাতে অবশ্য আমার আফসোস নেই। যা পেয়েছি, তা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট।

প্রশ্ন: জার্মানি সব আসরেই ফেভারিট। প্রতিপক্ষ দলগুলোও তাদের নিয়ে চিন্তায় থাকে। এমনটা কেন?

ক্লোসা: জার্মানি চেষ্টা করে ফর্মটা ধরে রাখতে, আর আমাদের একতাটাও দারুণ। বিশেষ করে টুর্নামেন্ট শুরু হলে সবাই এক হয়ে পারফর্ম করে। এটাই আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি এবং অনেকদূর নিয়ে যেতে আমাদের সাহায্য করে। দলের গতি বা ফর্ম টুর্নামেন্ট চলাকালে ঠিক করা যায় না। আপনার প্রস্তুতি কেমন হবে, সেটার ওপরই এটি নির্ভর করে। টুর্নামেন্টে আপনি যদি সফল হতে চান, তাহলে আগেই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।

প্রশ্ন: এবারের দলের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ক্লোসা: আমি বলব, আমাদের গত কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। দলের যে গতি ছিল, সেটা এখন নেই। আমাদের আরও উন্নতি দরকার। তবে দলে বেশ কিছু তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, ভরসা এখন তারাই। আমি সব সময়ই দলগত পারফর্মে বিশ্বাসী। আমার বিশ্বাস, যদি প্রত্যেকে তার সেরাটা দিতে পারে, তাহলে দারুণ কিছু করা সম্ভব। আর প্রতিটি বিশ্বকাপেরই চমক থাকবে। আপনি হয়তো এমন কাউকে ধরে রাখলেন, যারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। কিন্তু তারা গ্রুপ পর্বও পেরোতে পারল না। আবার এমন দল, যাদের নিয়ে কেউ চিন্তাও করেনি, তারাই অনেকটা দূর চলে গেল। মাঝেমধ্যে বড় দলগুলোও হেরে বসে ছোটদের কাছে। এটাই তো বিশ্বকাপ।

প্রশ্ন: কারা ভালো করতে পারে। বলছিলাম কোন তারকাদের ওপর বাড়তি নজর থাকবে?

ক্লোসা: সচরাচর যাঁরা থাকেন- রোনালদো, মেসি। এবারও তাঁদের ওপর নজর থাকবে সবার। তবে সব দলেই স্পেশাল খেলোয়াড় থাকে, যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে ওই দেশের সমর্থকরা। হয়তো আমি-আপনি সেসব দেখতে পাই না। আমার মনে হয়, পারফরম্যান্স দেখেই সেরাটা বিচার হবে।

প্রশ্ন: কাতার নিয়ে অনেক বিতর্ক। আপনি কী বলবেন?

ক্লোসা: আমি মনে করি, বিশেষ কিছুই হবে। পুরোনো অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হচ্ছে, এটাও সবাইকে মাতিয়ে রাখবে। দর্শকও উপভোগ করার মতো ম্যাচ পাবে। সব মিলিয়ে কন্ডিশনও স্বাভাবিক থাকবে এবং চমৎকার একটা বিশ্বকাপ হবে।

প্রশ্ন: এখনও বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতা আপনি। কী মনে হয়, আপনার রেকর্ডটা কেউ ভাঙতে পারবে?

ক্লোসা: ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে আইকন মনে করি না। আইকন শব্দটার ওজন অনেক। হ্যাঁ, এটা সত্য যে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ১৬ গোল করা, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। আমার শুভকামনা থাকবে জার্মানির জন্য। তারা ভালো করুক- সেটাই আমার চাওয়া। এখনও দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় আছে। আমি মনে করি, তাদের দারুণ সম্ভাবনা আছে রেকর্ডটা ভাঙার। আমিও সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। তবে আমি নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলতে চাই না। জানিও না, কে নিশ্চিতভাবে রেকর্ডটা ভাঙতে পারব।

প্রশ্ন: সর্বশেষ ১৬ নম্বর গোলটি আপনি ব্রাজিলের বিপক্ষে করেছিলেন। মনে আছে সেই ৭-১ গোলের স্মৃতি?

ক্লোসা: এটা খুবই রোমাঞ্চকর ছিল। আমি নিজেকে মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করি, এই ১৬ নম্বর গোলটা কেন দুই প্রচেষ্টায় এলো। ব্রাজিলের গোলকিপার সত্যিই চমৎকার চেষ্টায় আমার প্রথম শটটা আটকে দেন। আমরা সেদিন ভালো ফুটবল খেলেছিলাম এবং গোল করার সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছিলাম। এটা খুবই দাপুটে একটা দলগত পারফরম্যান্স ছিল।

প্রশ্ন: চারটি বিশ্বকাপে ছিলেন। কোনটাকে সেরা হিসেবে বাছবেন?

ক্লোসা: কোনো সন্দেহ নেই, ২০১৪ বিশ্বকাপই আমার সেরা। সেই বিশ্বকাপের অনেক স্মৃতি এখনও আমার চোখে ভাসছে। বিশেষ করে যখন ট্রফিটা হাতে নিলাম, এই অনুভূতির কথা বলে বোঝানো যাবে না। এর বাইরেও বিশ্বকাপ নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি আছে, যেমন- ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়া, গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদির বিপক্ষে বড় জয়, এরপর আরও কিছু ঘটনা। এসব এখন বিশ্বকাপ এলেই মনে পড়ে।

প্রশ্ন: আপনার অবসরের পর মেসুত আবেগি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে তো আপনার অনেক স্মৃতি...

ক্লোসা: আমি এমন কয়েকজন খেলোয়াড়কে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলাম, যেটা আমার ক্যারিয়ার বদলে দিতে সাহায্য করেছিল। বিশেষ করে মেসুত; সে আমার জন্য ছিল স্পেশাল। তাঁদের মতো খেলোয়াড়দের পাশে খেলাটা সত্যিই আনন্দের ছিল। মেসুত খুবই দক্ষ ফুটবলার। সে সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে খুন করে ফেলত। আমার মনে হয়, ফুটবল হলো দ্রুততম খেলা, যেখানে যে যত দৌড়াতে পারবে, ততই সুযোগ আসবে।

-ফিফা।

 

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ