‘ভারত বালাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৬ | আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর উপলক্ষে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল-এএনআই একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। এএনআই সম্পাদক স্মিতা প্রকাশ গৃহীত সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ বাংলায় ভাষান্তর করেছেন সাইফুর রহমান তপন। এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল-
এএনআই: আমরা আপনার ভারত সফরের অপেক্ষায় আছি। আপনি বলবেন, এ সফরে আপনার অগ্রাধিকারগুলো কী?
শেখ হাসিনা: দেখুন, ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের মৃক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছে, তা আমরা সবসময় স্মরণ করি। তা ছাড়া ১৯৭৫ সালে পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও আমরা পরস্পর খুবই নিকট প্রতিবেশী। আমি সবসময় প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখার ওপর গুরুত্ব দিই। এ বন্ধুত্ব শুধু নেতৃত্বের জন্য নয়; জনগণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমার এ সফরে আমি ভারতের জনগণ, প্রধানমন্ত্রী ও নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে যেতে চাই। দু'দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বন্ধন মজবুত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
এএনআই: আমি অনেকবার বিভিন্ন পশ্চিমা মিডিয়াকে আপনার কাছে জানতে চাইতে দেখেছি- কীভাবে ভারত ও চীনের মতো শক্তির সঙ্গে আপনি ভারসাম্য রক্ষা করেন?
শেখ হাসিনা: আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত পরিস্কার- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমার বাবা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটা উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণেও এ কথা বলেছিলেন। আমরা তাঁর সেই আদর্শ অনুসরণ করি। আমার কথা হলো, আমাদের নজরকে নিবদ্ধ করতে হবে জনগণের দিকে- কীভাবে তাদের একটু ভালো থাকার ব্যবস্থা করা যায়; কীভাবে তাদের জীবনমান উন্নত করা যায়। আমাদের লক্ষ্য শুধু সেটাই হবে। আমি সবসময় বলি, আমাদের শত্রু একটাই- সেটা হলো দারিদ্র্য। জনগণকে কীভাবে ভালো রাখা যায়, কীভাবে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যায়- সেটাই মূল কাজ। জনগণ বলতে আমি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত মানুষদের কথা বলছি। আমি সবসময় মনে করি, ভারত ও চীনের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে; তবে তাতে নাক গলানো আমার কাজ নয়। আমার কাজ হলো আমার দেশের উন্নয়ন করা। ভারত আমাদের খুবই নিকট প্রতিবেশী; আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা আছে, এটা ঠিক। কিন্তু অনেক সমস্যারই আমরা সমাধান করেছি। গঙ্গার পানি চুক্তি, স্থলসীমা ও সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা আপনি জানেন। আমাদের দেশের অনেকেই উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে ছিল; পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে আমি তাদেরকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছি। ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। বহু দেশ এ ধরনের সমস্যায় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। একটা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের মধ্য দিয়ে আমরা তার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আমি ভারতের সব সংসদ সদস্য এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানাই সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত চুক্তিটি কার্যকর করার জন্য।
হ্যাঁ, পশ্চিমের লোকেরা আমাকে এ প্রশ্নটি করে- কীভাবে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করছি। আমার বক্তব্য হলো, প্রতিবেশীদের মধ্যে সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা যায়। ভারত ও চীনের মধ্যেও কিছু সমস্যা আছে। তবে তার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সেগুলো সমাধান করা যায়। পাশাপাশি থাকলে কিছু সমস্যা তৈরি হতেই পারে। এগুলো সমাধানের জন্য আমাদেরকে অব্যাহতভাবে আলোচনা চালাতে হবে। আর আমাদের উন্নয়নের জন্য যারাই সহায়তা দিতে চায়, তা আমরা নিই। তবে সেটা আমাদের জন্য উপযুক্ত হতে হবে।
এএনআই: সম্প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং আপনি ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কানেকটিভিটি তৈরির কাজ চলছে বাংলাদেশ ও ভারত বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে।
শেখ হাসিনা: প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) আমি প্রথম দরজা খুলে দিই; দু'দেশের মধ্যে বাস যোগাযোগ চালু করি। অটল বিহারি বাজপেয়িজি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমাদের দুটো সমুদ্রবন্দর- চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর; ২০১৮ সালে আমরা একটা চুক্তি স্বাক্ষর করি বন্দর দুটোর ব্যবহার বিষয়ে। এখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ফলে দু'দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। বাংলাদেশও এ থেকে উপকৃত হবে। শুধু সমুদ্রবন্দর নয়; আমি চট্টগ্রাম ও সিলেট- এ দুটো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ভারতকে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তাব করেছি। আমাদের আরেকটা বিমানবন্দর আছে। সেটা হলো সৈয়দপুর বিমানবন্দর। আমি এটাকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছি।
শুধু ভারত নয়; নেপাল, ভুটানও এটা ব্যবহার করতে পারে।
এএনআই: শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখে অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন; বিশেষ করে চীনা ঋণ ফাঁদের কারণে দু'দেশের তুলনা টেনে; বাংলাদেশের উচিত শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশ এ রকম কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে আছে?
শেখ হাসিনা: একেবারেই না। আমাদের অর্থনীতি এখনও খুব মজবুত। আমরা কভিড মোকাবিলা করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। তারপরও আমরা ভালো করছি। আমাদের ঋণের যেগুলো যতটুকু শোধ করার কথা, আমরা তা নিয়মিত করছি। শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের ঋণের অনুপাতও কম। খুব হিসাবনিকাশ করেই আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিচ্ছি এবং আমরা এগোচ্ছি। ফলে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়ার কোনো শঙ্কা আমার মাঝে নেই। শুধু তাই নয়; কভিডের সময় আমাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য আমরা একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছি। জনগণকে আমি আহ্বান জানিয়েছিলাম নিজের খাদ্য নিজেকে উৎপাদন করা জন্য। এবং এ জন্য তাদের যা যা সহযোগিতা দরকার ছিল, আমি দিয়েছি। এরই মাঝে এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অবশ্যই যুদ্ধের একটা প্রভাব অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের ওপরেও পড়েছে; যেহেতু আমাদের অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। এ পরিস্থিতিতেই কিছু লোক বলা শুরু করল- বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে। তবে আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি যে, না- আমরা তা হবো না। কারণ বাংলাদেশ যখনই কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে তখনই এর সুফল কতটুকুু, তাও হিসাব করেছে। এ হিসাব ছাড়া স্রেফ টাকা খরচ করার জন্য কোনো প্রকল্প আমি নিতে দিইনি।
এএনআই: পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা সমালোচনা করে যে, সার্কভুক্ত দেশগুলো পরস্পরকে সহযোগিতা করে না; এ ধরনের অন্য জোটগুলো যেমনটা করে থাকে। কিন্তু আপনি ভ্যাকসিন মৈত্রী দেখেছেন; আপনার দেশ থেকে, ভারত থেকে শিক্ষার্থীদের স্বদেশে ফিরতে কীভাবে দুটো দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে, তাও দেখেছেন।
শেখ হাসিনা: এটা সত্য। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ দিই। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে আটকে পড়া ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরও স্বদেশে ফিরতে সহযোগিতা করেছেন। এর মাধ্যমে আপনারা অবশ্যই বন্ধুত্বের এক নিদর্শন রেখেছেন।
এএনআই: তবে এ ধরনের সহযোগিতা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির প্রশ্নে অনেক সমস্যা চলে আসে। এ ধরনের নদীর সংখ্যা ৫০টিরও বেশি। এসব নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টি গতি পাচ্ছে না। এমনকি যে তিস্তা চুক্তি বহু বছর আগে হওয়ার কথা ছিল, তা এখনও হয়নি। এবার কি এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি ঘটতে পারে?
শেখ হাসিনা: বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। আপনি জানেন, আমরা হলাম ভাটির দেশ। পানি আসে ভারত থেকে। কাজেই ভারতের এ বিষয়ে একটু বেশি উদার হওয়া উচিত। কারণ এটা দু'দেশের জন্যই ভালো হতে পারে। আমাদের জনগণ পানির অভাবে প্রায়শ দুর্ভোগে পড়ে। বিশেষ করে তিস্তায় পানি না পাওয়ার কারণে আমরা ফসল ফলাতে পারি না; অনেক সমস্যা মোকাবিলা করি। আমি মনে করি, এটা খুব দ্রুতই সমাধান হওয়া উচিত। আপনাদের প্রধানমন্ত্রী বেশ আন্তরিক এ ব্যাপারে, আমি জানি। তবে সমস্যাটা আপনাদেরই দেশের ভেতরে। আমি মনে করি, এটার সমাধান হওয়া জরুরি। আমরা চুক্তির মাধ্যমে শুধু গঙ্গার পানি বণ্টন করতে পারছি; অথচ এ ধরনের মোট ৫৪টা নদী আছে। সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এর সমাধান হওয়া দরকার।
এএনআই: ঠিক বলেছেন, কিন্তু এটা প্রধানত ভারতের ওপর নির্ভর করছে।
শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, ভারতের ওপর। ভারতের উচিত আরও উদারতা দেখানো।
এএনআই: আপনি সম্প্রতি আপনার দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে, হিন্দুদের বলেছেন- এ দেশে আমার যতটুকু অধিকার আছে; আপনাদেরও ততটুকু অধিকার আছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের আশ্বাস খুবই স্বস্তিকর। তারপরও ভারতীয়রা এমন সব ভিডিও দেখতে পায়, যেখানে হিন্দু মন্দির ভাঙা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন এবং কমসংখ্যক হলেও ঘটনাগুলো ঘটছে। আপনি কি মনে করেন, এখানে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর মতোই স্বাচ্ছন্দ্যে আছে?
শেখ হাসিনা: আমরা যতদিন ধরে ক্ষমতায় আছি, এ বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আমি সবসময় তাদেরকে বলি, আপনারা আমাদের দেশের নাগরিক। এ দেশের মালিক আপনারা। তারপরও কিছু ঘটনা ঘটে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থাও নিই। মাঝেমধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। তবে আপনি জানেন, শুধু বাংলাদেশে নয়; এ ধরনের ঘটনা ভারতেও ঘটে। আমি মনে করি, উভয় দেশেরই এ বিষয়ে উদারতা দেখানো উচিত। বাংলাদেশ একটা সেক্যুলার রাষ্ট্র। এখানে অনেক ধর্ম বিরাজমান। ধর্মীয় সম্প্রীতিও আছে এখানে। কাজেই যখনই একটা দুটো ঘটনা ঘটে, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। বিশেষ করে সরকার, আমার দল ও দলের লোকেরা এ বিষয়ে খুবই সজাগ। দ্রুত ব্যবস্থা নিই আমরা। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা উভয় দেশ থেকেই নেওয়া উচিত। পরস্পরকে সহযোগিতা করা উচিত।
এএনআই: ব্লগ ও সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি হয়- বাংলাদেশকে ইসলামী চরম পন্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
শেখ হাসিনা: দেখুন, চরম পন্থা সব দেশেই আছে। এমনকি ভারত বা বিশ্বের যে কোনো দেশের দিকে তাকালে তা আপনি দেখতে পাবেন। আজকাল সামাজিক মাধ্যম একটা খুব বাজে জিনিসে পরিণত হয়েছে। কেউ একজন একটা কিছু লিখল ওখানে; শুধু ব্লগার নয়, অন্য কোনো ধর্মের কেউ কিছু লিখল সেখানে, অমনি লোকজন বেরিয়ে গেল। তবে আমরা এসব খুব শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। আমরা কখনোই এসব সমর্থন করি না। প্রত্যেকেরই- আমি এখানে প্রতিটি ধর্মের কথা বলছি- নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার আছে। কারোরই এমন কিছু বলা উচিত না যাতে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। এটা ভালো না। এবং যে কোনো উৎসবে এখানে আমরা সবাই মিলে আনন্দ করি।
এএনআই: রোহিঙ্গারা আমাদের ওখানে কিছু আছে; আপনার এখানে আছে অনেক। এটা একটা মানবিক বিষয়। একটা দাবি খুব জোরালো হচ্ছে যে, রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা দরকার। তবে তা হতে হবে নিরাপদে। এ পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
শেখ হাসিনা: আমাদের জন্য এটা একটা বিরাট বোঝা। ভারত একটা বিশাল দেশ। তার জন্য এদেরকে জায়গা দেওয়া কঠিন বিষয় না। তবে আপনাদের ওখানে এদের সংখ্যাটা খুবই কম। আমাদের এখানে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে। আমরা এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলছি; প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলছি, যাতে সবাই এমন কিছু ব্যবস্থা নেয়; যার ফলে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। এটা ঠিক, মানবিক কারণে আমরা এদেরকে এখানে জায়গা দিয়েছি। আপনি জানেন, ওদের সবাইকে কভিড টিকা দিয়েছি আমরা। কিন্তু আর কতকাল ওরা এখানে থাকবে? ওরা আশ্রয় শিবিরে আছে; সেখানে পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের কেউ কেউ মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত; কেউ সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত; কেউ নারী পাচারে জড়িত। দিন দিন এসব ঘটনা বাড়ছে। যত দ্রুত তারা দেশে ফিরবে ততই আমাদের জন্য ও মিয়ানমারের জন্য মঙ্গল। ওদের এটা বোঝাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা এ নিয়ে ওদের সঙ্গে; আসিয়ান, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলছি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতও এ বিষয়ে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এএনআই: আপনি কি চান, আপনার ছেলে রাজনীতিতে আসুক?
শেখ হাসিনা: দেখুন, ও এখন প্রাপ্তবয়স্ক। ফলে বিষয়টা ওরই ওপর নির্ভর করে। তবে ও এখন দেশের জন্য কাজ করছে। যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা তৈরি করছি; এই যে স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ- এত কিছু, সবই ওর আইডিয়া। আপনি জানেন, ও আমাকে এসব বিষয়ে সহযোগিতা করছে। তবে এ জন্য দল বা মন্ত্রণালয়ে কোনো পদ নিচ্ছে না। এমনকি আমাদের দলীয় সম্মেলনে প্রবল দাবি উঠেছিল এ বিষয়ে। তখন আমি তাকে বলি- যাও, মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে বলো, তুমি কী চাও। আমার কথা শুনে সে মাইক্রেফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল- না, এ মুহূর্তে আমি দলের কোনো পদে বসতে রাজি নই। বরং যাঁরা এখানে দলের জন্য পরিশ্রম করছেন, তাঁদেরই পদ পাওয়া দরকার। আমি কেন সেটা দখল করে রাখব? আমি মায়ের সঙ্গে আছি। দেশের জন্য কাজ করছি; মাকে সহযোগিতা করছি। এটাই আমি করে যেতে চাই। এই হলো তার চিন্তা। কাজেই ওকে আমার বাধ্য করতে হবে না; বলতে হবে না- এটা করো।
এএনআই: পশ্চিমা মিডিয়া বলছে, বাংলাদেশে কার্যকর বিরোধী দল নেই। আপনার দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই কেন?
শেখ হাসিনা: দেখুন, বর্তমানে আমাদের বিরোধী শিবির দুর্বল নয়, অনেক শক্তিশালী। তারা আমাকে বহুবার হত্যা করার চেষ্টা করেছে। তবে আমি বেঁচে গেছি। প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়েছে; আমি জানি না, কীভাবে বেঁচে গেলাম! আমার দলের লোকেরা মানবঢাল তৈরি করে নিজেরা স্প্নিন্টার খেয়েছে, তবে আমাকে নিরাপদ রেখেছে। আমার সভায় গুলি করা হয়েছে; আমি বেঁচে গেছি। আমার সভায় ওরা বিশাল বোমা পেতে রেখেছিল। কিন্তু একজন সাধারণ লোক এটা চিহ্নিত করে ফেলে। কাজেই আমি বেঁচে যাই। যা হোক, কথা হচ্ছিল বিরোধী দলের শক্তি নিয়ে। আমাদের দেশে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি- উভয়েই তৈরি হয়েছে সামরিক স্বৈরশাসকদের হাতে। প্রথমে তারা ক্ষমতা দখল করে; এর পর রাজনীতিবিদ বনে যায়। স্রেফ পোশাক পাল্টে রাজনৈতিক নেতা হয়ে যায়। ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে তারা সরকার গঠন করে। ক্ষমতায় বসে কেউ যখন দল গঠন করে; সাধারণত এদের সঙ্গে তৃণমূলের লোকদের কোনো সংযোগ থাকে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটা রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালে দলটা গঠিত হয়। আমাদের শিকড় হলো আমাদের জনগণ।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ