আজকের শিরোনাম :

‘প্রামাণ্যচিত্রটি জাতির পিতার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২, ১৩:২০ | আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১৩:৩৪

সৈয়দ আশিক রহমান
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র ২০২০ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে সৈয়দ আশিক রহমান প্রযোজিত ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ প্রামাণ্যচিত্রটি। ইতিমধ্যে এই প্রামাণ্যচিত্রটি তুরস্ক, ফ্লোরিডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সসহ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের উদ্যোগে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ উপলক্ষ্যে প্রদর্শিত হয়েছে ২০২১ সাল জুড়ে। প্রামাণ্যচিত্রটির বিষয় নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রযোজক, বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড এর পরিচালক ও আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান এর সাথে কথা বলে বিস্তারিত জনানো হচ্ছে এই প্রতিবেদনে-

প্রশ্ন:    এই অসাধারন প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়ে কেমন লাগছে?
সৈয়দ আশিক রহমান:    অবশ্যই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া আনন্দের ও গর্বের। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ওপর নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি আমরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসা থেকেই করেছি। এই পুরস্কার আমাদের প্রেরণাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। 

প্রশ্ন:    কোন ইচ্ছা বা পরিকল্পনা থেকে আপনি এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন?
সৈয়দ আশিক রহমান:    ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে মুজিব     জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধুর     রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করব। প্রমাণ্যচিত্রটি নির্মাণ কাজ শেষ     হয় ২০২০ সালে এবং সেন্সর পায় ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। প্রমাণ্যচিত্রটির গবেষণা, গ্রন্থনা ও পরিচালনা করেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু। 

এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, ২০১৫ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৪০ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘মৃতুঞ্চয়ী প্রাণ’, ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ওপর নির্মিত ‘প্রেক্ষাপট ৭ই মার্চ’, ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘নন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনা’ এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা অনূর্ধ-১৯ আন্তর্জাতিক নারী গোল্ডকাপ উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব’-এর ওপর ৯টি অনু-তথ্যচিত্র আরটিভির ব্যানারে নির্মাণ করেছিলাম। উল্লেখ্য, এই তথ্যচিত্রগুলিও     নির্মাণ করেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার গ্রহণ করছেন সৈয়দ আশিক রহমান

প্রশ্ন:    ২ঘন্টা ২৭ মিনিটে কি করে সম্ভব হলো বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনকে তুলে ধরা?
সৈয়দ আশিক রহমান:    এই প্রামাণ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রপূর্ণ রাজনৈতিক জীবনকে সাত পর্বে দেখানো হয়েছে।  বঙ্গবন্ধুর উন্মেষ পর্ব (১৯২০-১৯৪৭), বঙ্গবন্ধুর জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ (১৯৪৭- ১৯৫৪), বঙ্গবন্ধুর উত্থান পর্ব  (১৯৫৫-১৯৬৩), স্বাধিকার আন্দোলন ও অভ্যুত্থান পর্ব  (১৯৬৩-১৯৬৯), ঐতিহাসিক নির্বাচন পর্ব (১৯৭০), স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পর্ব  (১৯৭১) এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, বিশ্বনায়ক ও প্রয়াণ পর্ব  (১৯৭২-১৯৭৫)। 

প্রামাণ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন যেমন বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে, তেমনি উঠে এসেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগণের অবিস্মরণীয় অবদান। সেই     সঙ্গে বাংলাদেশকে ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষের বিভিন্ন কর্মকান্ডও তুলে ধরা হয়েছে।     বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে কার্যকরভাবে তুলে ধরার জন্য ইংরেজি সাব-টাইটেলসহ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি বড় ভূমিকা রাখছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। প্রামাণ্যচিত্রটি ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন     ফেস্টিভাল, সিনেমা হল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শিত হয়েছে। যারাই ছবিটি দেখেছেন তাঁরা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এর গবেষণা, গ্রন্থনা ও দূর্লভ ফুটেজের জন্য।

প্রশ্ন:    পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই প্রামাণ্যচিত্রটি কি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?
সৈয়দ আশিক রহমান: পরবর্তী প্রজন্ম দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নির্মাণ করবে। আর তাঁদের সামনে অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমি মনে করি, এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে  বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন যেভাবে উঠে এসেছে, তা থেকে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অনেক অজানা ও অনালোচিত তথ্য। এটাই এই প্রামাণ্যচিত্রটির অন্তর্নিহিত শক্তি। 

প্রশ্ন:    আপনার প্রযোজিত চলচ্চিত্র যদি একদিন ও সাপলুডু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ এ ২টি শাখায় পুরস্কার পেয়েছে, জন্মভূমি চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে এবং জাতিসংঘের সদর দফতরে প্রদর্শিত হয়েছে, একজন সফল প্রযোজক হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প সামনের দিনগুলোতে কেমন হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?
সৈয়দ আশিক রহমান:    আমি মনে করি আমাদের ইন্ডাষ্ট্রির সবচেয়ে বড় সংকট এখন দক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা এবং মৌলিকতা। মুক্ত বিশ্বে আমাদের দর্শকরা যে ধরণের প্রযুক্তিগত নির্মাণ দক্ষতার সাথে পরিচিত হচ্ছে আমাদের দেশের নির্মাণগুলোতে সে দক্ষতার ছোঁয়া অনেক কম। সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক অসাড়তা। একটি গল্পের প্রেক্ষাপটে কেউ একটি দৃশ্যকে যেভাবে শুটিং করে থাকে অন্যরাও এই ভাবে সেটিকে করার চেষ্টা করে। উপস্থাপন কিংবা প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে নতুনত্ব একেবারেই দেখা যায়না। মৌলিকতার সংকটও চরম ভাবে দেখা দিয়েছে। আমাদের জীবনবাস্তবতা ও পারিবারিক সামাজিক প্রেক্ষাপটের চেয়েও অন্যদেশের অন্যদের গল্পের আদলে আমাদের গল্পের ভিত্তি নির্বাচন করা হয়। ফলে দর্শক কিছুক্ষণ একটি চলচ্চিত্র দেখার পর এই ৩টি সংকটের মুখোমখি হন এবং মুখ ফিরিয়ে নেন। বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই প্রতিটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু একটি ইন্ডাষ্ট্রিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই নয় বরং চলচ্চিত্র সংগঠন এবং সরকারি উদ্যোগ এই ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।    

প্রশ্ন:    সামনের দিনগুলোতে প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র নিয়ে আর কি কি পরিকল্পনা করছেন?
সৈয়দ আশিক রহমান:    আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐহিত্য নির্ভর আরো বেশকিছু বিষয় আমরা নির্বাচন করেছি যেগুলোর উপর     তেমন কোন পূর্ণাঙ্গ কাজ নেই। জাতী হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য সাংস্কৃতিক     কাঠামোগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের টিম কাজ শুরু করে দিয়েছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও আমরা সৃষ্টিশীল মৌলিক গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি। কারণ বাংলাদেশের মানুষ পরিবারের সাথে সে চলচ্চিত্রটি দেখতে পারবে সেটিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ