আজকের শিরোনাম :

‘মানসিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২১, ১২:০৪

জাকিয়া আনাম মনোবিজ্ঞানী এবং দর্পণ কাউন্সেলিং ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতায় এর প্রভাবসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুহিনা ফেরদৌস

প্রশ্ন : মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জাকিয়া আনাম : মন, মানুষ, মানসিক- আমাদের দেহ ও মন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেহের বিষয়গুলো দেখা যায়, তাই আমরা শরীরের অসুখ, সমস্যাগুলো বুঝতে পারি। মন তো দেখা যায় না। মন তাহলে কী? মন হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। মানুষের শরীরের অনেক অর্গান আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্গান মস্তিষ্কো ও হূিপণ্ড। আমরা সবকিছু মস্তিষ্কে ধারণ করি। এ পর্যায়ে বলব, মানসিক স্বাস্থ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীর ভালো আছে কিন্তু আমরা মানসিকভাবে হয়তো সুস্থ নেই। মানসিকভাবে যদি সুস্থ না থাকি তাহলে আমরা অনেক কিছুই করতে পারব না। কারণ আমরা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য দ্বারা চালিত হই, যা আমরা বুঝতে পারি না; কারণ মানসিক এ বিষয়গুলো দৃশ্যমান নয়। শরীরের যেমন অসুখ হয়, মনেরও তেমনি অসুখ হতে পারে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের সমান গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। এটা বোঝার জন্য প্রথমে আমাদের মনের অবস্থাকে চিহ্নিত করতে হবে। তবে সমস্যা ও রোগ দুটির মধ্যে তফাত আছে। এই যে মন ভালো লাগছে না-এটা কি আমার সমস্যা না রোগ, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রশ্ন : গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালে বিষণ্নতা মানুষের উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। মন খারাপের কোন পর্যায়কে আমরা বিষণ্নতা বলব?

জাকিয়া আনাম : এমনি যদি কারো মন খারাপ থাকে, তাকে কিন্তু আমরা বিষণ্নতা বলি না। অনেক কারণেই মন খারাপ থাকতে পারে, যা বিষণ্নতা নয়। বিষণ্নতা আমরা তখনই বলব যখন কোনো ব্যক্তির দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকবে এবং সে কোনো আনন্দ-ফুর্তিতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহী হবে না। দুই সপ্তাহের বেশি যখন কারো এ অবস্থা চলে তখন তাকে আমরা বিষণ্নতা বলতে পারি। আরো একটা উপসর্গ হচ্ছে ঘুম। বিষণ্নতায় ঘুম কমে যেতে পারে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ঘুম বেড়েও যেতে পারে। কেউ হয়তো কম খাচ্ছে, কারণ তার খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। বিষণ্নতায় আক্রান্ত কেউ আবার বেশি খাচ্ছে। কারো ওজন বেড়ে যাচ্ছে। কেউ হয়তো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহের বেশি যদি কেউ এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, তবে তাকে বিষণ্নতা বলা হয়। তখন অবশ্যই মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হতে হবে। তারাই বলতে পারবেন মূল সমস্যাটা কী হয়েছে।

প্রশ্ন : প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি? মহামারী মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রাখছে?

জাকিয়া আনাম : কভিড-১৯ যখন শুরু হয় তখন আমরা জানতাম না যে এটা পরবর্তী সময়ে মহামারীর আকার ধারণ করবে। করোনার শুরুতে আমরা অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। এ সময় আমরা লকডাউন, সামাজিক দূরত্বের মতো শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। সংক্রমণ এড়াতে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। নিয়মিত কাজে যেতে পারিনি। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়েছে। কঠোর লকডাউনের সময় সবকিছু থমকে থাকায় স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির ওপর। গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ক্ষতির মুখে পড়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়। শুরুতে কেউ জানত না, এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে আমাদের ঠিক কতদিন যেতে হবে। চারদিকে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে কোনটা ঠিক কোনটা ঠিক নয়, আমরা তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সব মিলিয়ে ভয়াবহ অস্থির মানসিক অবস্থার মধ্যে সময় কেটেছে। এখন আমরা ‘নিউ নরমালের’ সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখছি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবার মধ্যেই মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে। আমরা কথায় কথায় বলি না যে খুব স্ট্রেস হচ্ছে। এ স্ট্রেস মানেই তো মানসিক চাপ, যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। এবার বলব এ ধরনের বিষয়গুলো শরীরের আর কী কী ক্ষতি করে তা নিয়ে। অনেকেই আছেন খুব বেশি রাগী, অল্পতেই রেগে যান। রাগ আমাদের লিভারকে প্রভাবিত করে। শোক কিংবা দুঃখ ফুসফুসকে দুর্বল করে দেয়। আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি তখন তা আমাদের পাকস্থলীর ক্ষতি করে। কারণ যখন কেউ উদ্বিগ্ন থাকে তখন খাবার হজমের শক্তি কমে যায়। ভয় আমাদের কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সার্বিক এ চাপগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। বিভিন্ন ধরনের আবেগ ভিন্ন ভিন্নভাবে মানুষের শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। এভাবে করোনা অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বাড়তি মানসিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের মন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।

প্রশ্ন : মানসিক স্বাস্থ্য তাহলে সরাসরি আমাদের কর্মক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত?

জাকিয়া আনাম : কভিডকালে আমরা লকডাউন, সামাজিক দূরত্বের মতো শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। সামাজিক দূরত্ব বা সোস্যাল ডিসট্যান্সিং শব্দটি তো পশ্চিমাদের দেয়া। আমরা এটিকে সামাজিক দূরত্ব না বলে যদি ‘শারীরিক দূরত্ব’ বলি তাহলে বিষয়টি আরো সহজ করে সবাইকে বোঝানো যায়। করোনার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষকে আরো বেশি সামাজিক হওয়ার কথা বললে আমার মনে হয় আমাদের মানসিক সমস্যাগুলো আরো অনেক কমে যেত। এখনো আমরা করোনার সঙ্গে বসবাস করছি। এখন আমরা যদি ভিড়ের জায়গাগুলোয় মাস্ক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারি তাহলে আমরা আমাদের স্বাভাবিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারব। এভাবে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে আরো সচল রাখতে সক্ষম হব। একজন মানুষ যখন বিষণ্নতায় ভোগে, সে তখন কোনো কাজ করতে পারে না। কাজ করতে না পারলে উৎপাদনশীলতা কমে যায়, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। কেউ যখন বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে। বিষণ্নতার আক্রান্ত মানুষ সবসময় সবকিছু নেতিবাচকভাবে দেখে। যে মানুষটি বিষণ্নতায় আক্রান্ত, সে কিন্তু সাদা আর কালোর মাঝখানের ধূসর কিছু থাকলে তা দেখতে পায় না।

প্রশ্ন : গবেষণা তথ্য বলছে, দেশের প্রায় ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা রয়েছে। নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা আরো বেশি। পুুরুষের তুলনায় নারীরা কি বেশি এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন?

জাকিয়া আনাম : আমাদের নারীরা আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছেন কিন্তু কিছু সমস্যা এখনো বিদ্যমান। একজন নারীকে সংসার, সন্তান সামলে কাজের জায়গায় নিজের দক্ষতা-সক্ষমতার প্রমাণ রাখতে হচ্ছে। পুরুষদের এ চ্যালেঞ্জটা কম। সন্তান জন্মের পর প্রতিটা মা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যায়। প্রতিটা মায়ের এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। একজন নারী, তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। তিনি মা হলেন, পরিবারের সবাই একসময় নবজাতক সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। সন্তান হওয়ার পর আগের স্বাভাবিকতায় ফিরতে একজন মায়ের সময় লাগে। আবার সন্তানের জন্য বাড়তি যত্নটা, সময়টা তাকেই করতে হয়। এ সময়টায় কি আমরা তাকে প্রয়োজনীয় মানসিক সমর্থন দিই? আমাদের এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করা জরুরি।

প্রশ্ন : আমাদের দেশের নারীদের একটি বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। অনেক সময় কর্মস্থলে তারা  নানা নিগ্রহের শিকারও হচ্ছেন? এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতায় কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?

জাকিয়া আনাম : আমি যদি তৈরি পোশাক শিল্পের কথা বলি তাহলে নারীরা এখানে যাদের অধীনে কাজ করছে, তাদের প্রায় সবাই পুরুষ। নারীরা তাদের অধীনস্থ। এ নারীরাই বিভিন্ন ধরনের নিগ্রহের শিকার। কেউ যদি দীর্ঘদিন এ ধরনের পরিবেশে কাজ করে, স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে কাজের প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হবে, যা সরাসরি তার উৎপাদনশীলতায় প্রভাব ফেলবে। এদিকে আবার ওভারটাইম রয়েছে। অনেক সময় বাড়ি ফিরতে ফিরতে তাদের রাত হয়ে যায়। যাতায়াতের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের পাশাপাশি বাইরের পরিবেশেও তারা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। উৎপাদনশীলতায় গতি আনতে সর্বপ্রথম তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। যেন কাজে যাওয়া-আসার সময়টিকে তারা কোনো হুমকি মনে না করেন। তাছাড়া কারখানার সুপারভাইজার থেকে শুরু করে এ ধরনের পদগুলোয় নারীদের নিয়োগ দিতে হবে। এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের শিল্পের জন্য অনেক বেশি ইতিবাচক  হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কী ধরনের আইন বা নীতিমালা আছে? তা যথেষ্ট কিনা? 

জাকিয়া আনাম : আমাদের এখানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আইন ২০১৮ আছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এছাড়া আইনের তেমন প্রয়োগও হয় না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি ২০১৯-এর খসড়া করা হয়েছে কিন্তু তা এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। সরকারের কাছে আমি দ্রুত এটিকে অনুমোদন দেয়ার আবেদন করব।

প্রশ্ন : দর্পণ প্রায় ১২ বছর ধরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। এ পর্যায়ে আপনাদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাই?

জাকিয়া আনাম : দর্পণের যাত্রা আজ থেকে ১৪ বছর আগে, ২০০৭ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছি। আমি চাইতাম সবসময়ই মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে কাজ করতে। কীভাবে করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এর মধ্যে সংসারজীবনে প্রবেশ করি। এখন যেমন অনেক কিছু করা মেয়েদের জন্য সহজ হয়েছে, আমাদের সময়ে এতটা সহজ ছিল না। আমাকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে কিন্তু কখনো হাল ছাড়িনি। সবসময় চেয়েছি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে। ১৪ বছর ধরে আমি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে যাচ্ছি। দপর্ণ কাউন্সেলিং ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান আমার মস্তিষ্কপ্রসূত উদ্যোগ এবং এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি দর্পণের শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র এবং প্রবীণ নিবাস রয়েছে।

প্রশ্ন : আমাদের দেশে অন্তত তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আছে বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিপরীতে আমাদের চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন, এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র এক হাজার। এক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?

জাকিয়া আনাম : মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে কাজগুলো করতে হবে। যারা শহরে বাস করছেন, শুধু তারাই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। যারা গ্রামীণ এলাকাগুলোয় বাস করেন, তারা কিন্তু এ সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটা উপজেলায় মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম নিয়োগ দিতে হবে—যেখানে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, বিশেষায়িত নার্স ও একজন সমাজকর্মী থাকবেন। যারা মানুষের কাছে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরি করবেন। গ্রামেগঞ্জে কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে তাকে জিনের আছর বা খারাপ বাতাস লেগেছে বলা হয়। ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। এগুলো রোগীকে আরো বেশি নাজুক করে। আমরা যারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছি, তাদের জন্য সরকারের সহযোগিতা ভীষণভাবে কাম্য। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এককভাবে কাজগুলো করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা এখানে আর্থিক অনেক বিষয় রয়েছে। সবাইকে যদি আমরা সাইকো এডুকেশন দিতে না পারি তাহলে তারা আজীবন অজ্ঞতা ও অন্ধকারের মধ্যে থেকে যাবে। প্রতি বছর বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে নামমাত্র বরাদ্দ দেয়া হয়। এ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে আমরা একটি মানসিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তৈরির কথা বলব। বিদেশে যেমন সব পর্যায়ে কাউন্সেলর বা সাইকোলজিস্ট থাকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। আমাদের দেশেও এ ধরনের প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে। আপনি যেমন বললেন, দেশের মোট জনগণের মধ্যে তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যা বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিপরীতে তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন, এমন বিশেষজ্ঞের সংখ্যা মাত্র এক হাজার। তাই আমাদের বেশি করে মনোবিজ্ঞানী, মনোবিদ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের জন্য পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং নিয়োগ দিতে হবে।

 

সৌজন্যে : দৈনিক বণিক বার্তা।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ