আজকের শিরোনাম :

‘নিদেনপক্ষে গুরুতর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেবে টিকা’

  আতাউর রহমান কাবুল

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ; ইউজিসি অধ্যাপক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা। সম্প্রতি করোনাভাইরাস ও ভ্যাকসিন সহ বিভিন্ন বিষয় কথা বলেছেন একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আতাউর রহমান কাবুল। সাক্ষাৎকারটি এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য নিচে হুবহু তুলে ধরা হল:

কভিড ভ্যাকসিন বা টিকায় মৃত্যুর আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে।

এটি অনেকটাই গুজব। এরই মধ্যে পৃথিবীতে কোটি কোটি টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও প্রচুর মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন। বিভিন্ন দেশে যাঁরা মারা গেছেন বলা হচ্ছে, তাঁরা হয়তো অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এসব মৃত্যু কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলেই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে টিকা নিলে মৃদু উপসর্গ; যেমন—টিকার স্থানে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, গা ম্যাজম্যাজ করা, জ্বর আসা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এসব জটিলতা সাময়িক। প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করলেই তা উপশম হয়ে যায়। তাই অমূলক বা ভিত্তিহীন কথায় কান না দিয়ে টিকা নেওয়া উচিত।

কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে এত বিতর্ক কেন?

বিতর্কটি অমূলক। অবৈজ্ঞানিক তথ্য ছড়িয়ে বিতর্ককে উসকে দেওয়া হয়েছিল। অক্সফোর্ড বিশ্বের একটি নামকরা ইউনিভার্সিটি। এই ইউনিভার্সিটি-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ডের ফর্মুলা তৈরি করেছে। সেই ফর্মুলা অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড নামের টিকা তৈরির কাজটি করে দিচ্ছে। অর্থাৎ টিকার আবিষ্কারক কিন্তু অক্সফোর্ড। তারা এশিয়া মহাদেশের মার্কেটিংয়ের কাজ হয়তো সেরামকে দিয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিগুলো এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসা করে। যেমন-বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্যামসাংয়ের পণ্য অ্যাসেম্বল হলেও প্রযুক্তি কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের। তাদের মনিটরিংয়ে সেটি চায়নায়ও উৎপন্ন হতে পারে। ঠিক তেমনি সেরামের টিকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সরাসরি মনিটরিং রয়েছে। এটি সেরামের টিকা নয় বা ভারতের টিকাও নয়। ভারতের টিকার নাম কোভ্যাক্স।

এখানে একটি কথা বলা দরকার যে বিশ্বের ১২৩টির মতো দেশ কিন্তু টিকার বাইরে আছে এখনো। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার, সে পরিমাণ কিন্তু সরবরাহ করতে পারছে না। অথচ আমরা অতি সহজেই কিন্তু পেয়ে গেছি। এতে বরং খুশিই হওয়ার কথা। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই।

অতি সম্প্রতি কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি হয়তো বোঝেননি এবং ভালোও হয়ে গেছেন। এই অবস্থায় তো তাঁর ইমিউনিটি ডেভেলপ করার কথা। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির টিকা নেওয়া ঠিক হবে?

কারোর কভিড পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হওয়ার তিন মাস পর টিকা নেওয়া উচিত। কেননা এই সময় পর্যন্ত তাঁর ভেতর করোনার ইমিউনিটি ডেভেলপ করে, এ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু করোনার পর যে ইমিউনিটি ডেভেলপ করে, তা সাময়িক। তাই ওই অবস্থায় ইমিউনিটির জন্য টিকা নিলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলা যায়। ইমিউনিটি বোঝার জন্য অবশ্য অ্যান্টিবডি টেস্টের কথাও বলা হচ্ছে।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, বাতব্যথা, কিডনি ও লিভারের রোগীরা কি টিকা নিতে পারবেন?

এই গ্রুপের রোগীরা সবাই টিকা নিতে পারবেন। তাঁদের বরং টিকা নেওয়া বেশি জরুরি। কেননা এই অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি বেশি জটিল হতে পারে; তাঁদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। করোনার টিকা শতভাগ সুরক্ষা না দিলেও সংক্রমণের পর গুরুতর হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। হয়তো বা সংক্রমণ হলেও হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হবে না। এসব বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত। 

কভিড আক্রান্ত বা উপসর্গ রয়েছে, তাঁরা নিতে পারবেন?

যাঁরা আক্রান্ত বা যাঁদের মধ্যে কভিড উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাঁদের টিকা দিতে গিয়ে অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই তাঁদের কমপক্ষে ১৪ দিন পর, সম্পূর্ণ উপসর্গমুক্ত নিশ্চিত করে তারপর টিকা দেওয়া উচিত।

প্রথম ডোজের কত দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে?

প্রথম ডোজের আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজের কথা বলা হচ্ছে। তবে প্রথম ডোজ নেওয়ার এক মাস, দুই মাস বা তিন মাস পর্যন্ত যেকোনো সময় পরবর্তী ডোজের টিকা নেওয়া যাবে।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে?

শুধু মাস্ক নয়, টিকা নেওয়ার পরও করোনার স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। টিকা শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। ফলে করোনাভাইরাস টিকা নেওয়া ব্যক্তিটিকে সুরক্ষা দিতে পারে বা তার মৃদু সংক্রমণ হতে পারে। তবে সমস্যা হলো তাঁর মাধ্যমে টিকা না নেওয়া কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তিনি জটিল অবস্থায় পড়তে পারেন।

কারা টিকা নিতে পারবেন না?

কভিড-১৯ টিকা কারা নিতে পারবেন, কারা পারবেন না-এ নিয়ে অনেকেই ধন্দে আছেন। রোগটি সাধারণত বয়স্ক ও কোমর্বিডদের ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং ৮০ শতাংশ মানুষ উপসর্গহীন বা মৃদুু উপসর্গযুক্ত হয়ে থাকেন। ফলে ভ্যাকসিনটির টার্গেট গ্রুপ হচ্ছে মূলত বয়স্ক ও কোমর্বিডরা। যারা এই টিকাটি নিতে পারবে না তারা হলো :

১৮ বছরের নিচের বয়সীরা।
আগে অন্য কোনো টিকায় বড় ধরনের রি-অ্যাকশন হয়েছিল এমন ব্যক্তি।
জটিল অ্যালার্জি আছে এমন রোগী। তবে অ্যালার্জি বা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে আছে এমন ব্যক্তিদের বাধা নেই।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে যাঁদের। তবে নিয়ন্ত্রণে থাকলে সমস্যা নেই।
গর্ভবতী নারী বা দুগ্ধপান করাচ্ছেন এমন মা। তবে সিডিসি বলছে, দুগ্ধদানকারী মা, যাঁদের কভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে নিয়মিত আসতে হয় তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শে টিকা নিতে পারবেন।
গুরুতর অসুস্থ অথবা হাসপাতালে ভর্তি আছেন এমন রোগীরা।
কভিড-১৯-এ আক্রান্ত আছেন এমন ব্যক্তি।

ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে কোন বিষয়গুলো ভাবা উচিত?

ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে কিছু তথ্য ভ্যাকসিনেশন সরবরাহকারীকে জানানো উচিত। যেমন :

গুরুতর কোনো অ্যালার্জি আছে কি না?
ওই সময় জ্বর আছে কি না?
রক্তক্ষরণসংক্রান্ত রোগ আছে বা রক্ত পাতলা এমন রোগী কি না?
তিনি ইমিউনোকম্প্রামাইজড কি না বা এমন কোনো ওষুধ ব্যবহার করছেন, যা ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে?
কেউ গর্ভধারণ করার পরিকল্পনা করছেন কি না?
এরই মধ্যে অন্য কোনো কভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছেন কি না।

সৌজন্যে : দৈনিক কালের কণ্ঠ

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ