আজকের শিরোনাম :

ত্রিপুরা নির্বাচনে একজোট চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাম ও কংগ্রেস, চাপে বিজেপি?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩৯

বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরায় ১৬ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন। ক্ষমতাসীন বিজেপি যেমন ফিরে আসতে মরিয়া, তেমনই এই নির্বাচনে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি- বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোট বেঁধে ভোটে লড়ছে।

তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ময়দানে নেমেছে ত্রিপুরার সাবেক মহারাজের উত্তরাধিকারী প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের নেতৃত্বাধীন উপজাতীয় দল তিপ্রা মোথাও।

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় মেলার মাঠে সিপিআইএমের দপ্তর থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে কংগ্রেস দপ্তরের মধ্যে দূরত্বটা এক কিলোমিটারও নয়।

কিন্তু এই দুটি শক্তি চিরকালই থেকেছে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৭৭ সালে মাস ছয়েকের জন্য অবশ্য দুই বিপরীত মেরুর দুই দল কাছাকাছি এসেছিল, একটা সমঝোতা করে সরকারও চালিয়েছিল। কিন্তু বাকি সবসময়েই বাম আর কংগ্রেস দুই মেরুতে অবস্থান করেছে।

এবারের ভোটের আগে দুই মেরুর দুই দলকে মিলিয়ে দিয়েছে এদের থেকে আবার ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে যাদের মতাদর্শগত অবস্থান, সেই ক্ষমতাসীন বিজেপি।

বামফ্রন্টের লাল ঝাণ্ডা আর কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকা এখন একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে ভোটের প্রচারে। নির্বাচনী আসন সমঝোতার ফলে ৪৩টি আসনে লড়ছে বামফ্রন্ট আর ১৩টিতে কংগ্রেস। একটি আসনে তারা এক নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে।

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি কীভাবে এক হলো?
সিপিআইএমের নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী পবিত্র কর বলছিলেন, ‘বিজেপি গত পাঁচ বছর ধরে যে অপশাসন চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা এক জোট হই, সেটাই মানুষ চাইছিলেন। বামফ্রন্টই যেহেতু মূল বিরোধী শক্তি, তাই বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আমরাই সবথেকে বেশি মার খেয়েছি। কিন্তু পরে যখন কংগ্রেসও কিছু করতে গেছে, তারাও বিজেপির হাতে আক্রান্ত হয়েছে। কোনও বিরোধী শক্তিকেই তো কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেয় না এই সরকার। এখন আশু প্রয়োজন গণতন্ত্র বাঁচানো। আর কংগ্রেস তো গণতান্ত্রিক শক্তি, ধর্মনিরপেক্ষ দল। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছে বিজেপিকে সরাতে।’

আসন ভাগ নিয়ে দুই দলের আলোচনা মাঝে ভেস্তে যেতে বসেছিল। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঠিক আগে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়।

দুই বিরোধী শক্তি এক হওয়ায় কি কিছুটা চাপে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল?
বিজেপির মুখপাত্র নব্যেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, ‘এই সমঝোতা তো হয়েছে একেবারে উপরের স্তর থেকে। কিন্তু সাধারণ কর্মী সমর্থকরা তো নেতাদের সঙ্গে নেই। মানুষের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই জোট করেছে নেতারা। কংগ্রেসের সাবেক সাধারণ কর্মীরা বিজেপির সঙ্গে আছে। সিপিএম আমলে যেসব সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের ওপরে অত্যাচার হয়েছে, বাড়ি পোড়ানো হয়েছে, তারা কী করে বাম প্রার্থীদের ভোট দেবে?’

তিনি আরও বলছিলেন, কংগ্রেসের একটা অংশ বাম-বিরোধী ছিল ঠিকই কিন্তু আরেকটা অংশ তলে তলে সিপিএমের হয়েই কাজ করত, যে জন্য সিপিএম আড়াই দশক একটানা ক্ষমতায় থেকে যেতে পেরেছিল। 

তবে নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই প্রধান বিরোধী দল একজোট হয়ে যাওয়ার ফলে কিছুটা চাপে আছে বিজেপি।

তারা ভোটের প্রচারে অমিত শাহ থেকে শুরু করে তাবড় নেতাদের নিয়ে আসছে। ভোট ব্যাঙ্ক যাতে অটুট থাকে তাই কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়ে জয়ী হয়েছিলেন এমন সবাইকে এবারও বিজেপি টিকিট দিয়েছে, যাতে তাদের সমর্থকদের ভোট তাদের ঝুলিতেই আসে।

ভোটের ময়দানে সাবেক মহারাজের দলও
ত্রিপুরার সাবেক রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের নতুন দল তিপ্রা মোথাও ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

তাদেরও দলে টানার চেষ্টা করেছিল বাম-কংগ্রেস আর বিজেপি – দুই তরফই। কিন্তু তারা পৃথকভাবেই লড়াই করছে। তিপ্রা মোথা উপজাতীয়দের দল হলেও তারা উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত ২০টি আসনের বাইরে ২২ অ-উপজাতি কেন্দ্রেও প্রার্থী দিয়েছে। এই ২২টি আসনে ভালো সংখ্যক উপজাতি ভোটার আছেন।

বিজেপি বিরোধী ভোট সেক্ষেত্রে কি বাম-কংগ্রেস আর তিপ্রা মোথার মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে?

‘মানুষের সেন্টিমেন্ট এবার একদমই বোঝা যাচ্ছে না। মানুষের কোন অংশ যে কোন পক্ষকে ভোট দিতে পারে, তার একটা আঁচ আমরা পেতাম। কিন্তু এত বছর ধরে আমি নির্বাচন কভার করছি, এবারের মতো অবস্থা কখনও দেখি নি। সম্ভবত সবাই চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করছেন। একেবারে ইভিএমেই নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা। তবে তিপ্রা মোথা যে অ-উপজাতীয় আসনগুলোতে প্রার্থী দিয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটিতে তারা বাম-কংগ্রেস জোটকে সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’

এর বাইরে আরও একটা পক্ষ আছে, যদিও তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে না রাজনৈতিক দল বা বিশ্লেষক কেউই। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও ত্রিপুরার নির্বাচনে নেমেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, অভিষেক ব্যানার্জী মঙ্গলবার আগরতলায় সভা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিয়মিত যাতায়াত করছেন ত্রিপুরায়।

কিন্তু তারা আগের কয়েকটি নির্বাচনের মতোই এবারও বিশেষ কিছু করতে পারবে না বলেই অভিমত সবার।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ