আজকের শিরোনাম :

নিপাহ ভাইরাস : মায়ের কাছ থেকে অ্যান্টিবডি পায় নবজাতক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:১১

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানী এবং সহযোগীদের একটি নতুন গবেষণার ফলাফল ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে যে, নবজাতক সন্তান মায়ের কাছ থেকে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায়। এই গবেষণা প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি থেকে অন্যজনে সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রবাহের নতুন তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) আইসিডিডিআর,বি এই তথ্য জানায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৭১ শতাংশ। এছাড়াও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে গুরুতর স্নায়বিক জটিলতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই জটিলতা আরও খারাপ হয়।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নিপাহ ভাইরাসে ফরিদপুর জেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সী একটি মেয়ে এবং তার মা সংক্রমিত হয়। তাদের উভয়েই খেজুরের কাঁচা রস পান করেছিল। দুঃখজনকভাবে শিশুটি মারা যায় এবং মা গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার শিকার হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে ওই নারী আবার গর্ভধারণ করেন এবং তিনি প্রসবের পূর্বে জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্স কর্তৃপক্ষের নিবিড় তত্ত্বাবধানে সেবা পেয়েছেন। ২০২১ সালের আগস্টে তিনি একটি সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দেন। রুটিন সারভাইভার ফলোআপের অংশ হিসেবে নবজাতকের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ভার্টিকেল ট্রান্সমিশন বা মা থেকে থেকে শিশুতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাদ দেওয়ার জন্য রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। যদিও পরীক্ষা করে র‍্যাপিড ও পিসিআর টেস্টে নিপাহ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু অ্যান্টি-নিপাহ আইজিজি-এর একটি উচ্চ টাইটার দেখতে পাওয়া যায়। এভাবেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মা থেকে সন্তানের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল এন্টিবডি পৌঁছেছে।

এই গবেষণার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআর,বি-র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের অন্তর্গত ইমার্জিং ইনফেকশন্স শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট এবং ডেপুটি প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর ড. সৈয়দ মইনুদ্দীন সাত্তার বলেন, “আমাদের জানা মতে, এই গবেষণাই প্রথম নিপাহ ভাইরাসভিত্তিক ইমিউন প্রপার্টিজের ভার্টিকেল ট্রান্সফার বা মা থেকে শিশুতে পরিবাহিত হওয়ার প্রমাণ নিশ্চিত করে। ভাইরাস নিউট্রিলাইজেশনের কার্যকারিতা এবং নবজাতকের সুরক্ষার সম্ভাব্যতার বিষয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। এটি নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে গর্ভবতী ও কম বয়সী নারীদের জন্য টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি রেফারেন্স হিসেবেও কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।”

মানুষকে খেজুরের রস খাওয়া থেকে সতর্ক করতে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন বলেন, “সম্প্রতি আমরা মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করছি এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার প্রয়াস দেখছি। এটি যে কী ধরণে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস খাচ্ছে। আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পান করতে নিষেধ করছি, রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক এটি অনিরাপদ।”

আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি-র তত্ত্বাবধায়নে জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্সের প্রশংসা করে বলেন, "আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শনাক্তকরণ,  রোগের সংক্রমণের ধরণ এবং মারাত্মক সংক্রমণের বিরুদ্ধে থেরাপিউটিকস এবং ভ্যাকসিন তৈরিতে নতুন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহে বিশ্বের দীর্ঘতম নিপাহ ভাইরাস সার্ভেইল্যান্স পরিচালনা করছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি সফল প্রচেষ্টা এবং আমি আশা করি আমরা শিগগিরই নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা বের করতে পারব যা অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে।"

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ