আজকের শিরোনাম :

করোনা : ফের সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২২, ১১:১১

দেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী। সংক্রামক এ ব্যাধিতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা বর্তমানে পঞ্চাশের নিচে। একই সঙ্গে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুও নেই। পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তাতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভাইরাসের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ আবারো বাড়তে পারে।

গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। বিশ্বে কভিড-১৯ রোগে মোট মৃত্যু দেশগুলোর সরকারের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে তিন গুণ বেশি। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে দেশে সরকারিভাবে মৃতের যে সংখ্যা জানানো হয়েছে তার চেয়ে প্রকৃত মৃত্যু ৯৫ লাখ বেশি হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়ার কারণে মৃতের সংখ্যা কম হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৭২। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ৩২২ জন। ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৪ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন, মারা যান ৬৪৩ জন, মার্চে ৮ হাজার শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৮৫ জন। সর্বশেষ এপ্রিলে ১ হাজার ১১৪ জনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলেও ৫ জনের মৃত্যু হয়। দেশে এ পর্যন্ত ১৪ কোটির কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

দেশে করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যানে উন্নতি থাকলেও তাতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই উল্লেখ করে রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, সংক্রমণ এখনো রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশে আবারো করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। করোনা এমনই একটি সংক্রামক রোগ যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। বাংলাদেশে এখন করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তার মানে এই নয় যে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা নেই। যেকোনো সময়ই সংক্রমণ বাড়তে পারে। সংক্রমণ বাড়লেও যেন হাসপাতালে চাপ না বাড়ে এজন্য টিকা প্রদান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ভাইরাসের গতিবিধির দিকেও নজর রাখতে হবে। এমনও হতে পারে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে নতুন কোনো ধরনের করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

এ রোগতত্ত্ববিদ মনে করেন, সংক্রমণ বাড়লে যেন ব্যবস্থা নেয়া যায় এজন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। অবহেলা না করে সচেতনভাবে প্রস্তুতি নেয়া ভালো। হাসপাতালগুলো থেকে মূলত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সেখানে রোগীরা যান। তাই সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মাস্ক পরার বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি।

ডব্লিউএইচও বলছে, করোনা যখন অতিমারীর পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন এতে আক্রান্ত রোগীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পায়নি। ফলে তাদের মৃত্যু প্রভাবিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যবস্থা নেয়ার আগেই করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনার সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা পরিসংখ্যানে দেখতে পারছি। তবে কখনই সংক্রমণ বাড়বে না, এমনটি ধারণা করা যাবে না। বর্তমান পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এক মাসের বেশি সময় ধরে করোনার বিষয়ে আমাদের মধ্যে উদাসীনতা দেখা গেছে। যা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনসচেতনতা, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ, টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত রাখতে হবে।

করোনাকে এখনো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করছে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, পরিসংখ্যান যেমনই থাকুক না কেন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেকোনো সময় সংক্রমণ বাড়লেও আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব এমন প্রস্তুতি রয়েছে।

 

খবর বণিক বার্তা।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ