আজকের শিরোনাম :

বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস

রোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে রোগীকেই সম্পৃক্ত হতে হবে

  মোঃ শামীম আলম খান

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফার্মাসিষ্ট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার সাবেক কনসালটেন্ট মোঃ শামীম আলম খান।
আপনার সমস্যা বলুন, কতদিন যাবৎ? এর আগে কাউকে দেখিয়েছেন? কি কি ঔষুধ খাচ্ছেন? কেনইবা ভালো হচ্ছেন না! এ কথাগুলো একজন রোগীকে চিকিৎসকের কাছ থেকে সব সময় শুনতে হয়। এক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার ব্যাপার বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর সেফটি অর্থাৎ নিরাপত্তার ব্যাপারটা অনেক সময় অগচরে রয়ে যায়। ফলে রোগীর ক্ষতিগ্রস্থ বা প্রাণ নাশের ঝুঁকি থাকে। সময়ের প্রয়োজনে একটি বিষয় ভীষণ ভাবে জোড় দেওয়া হচ্ছে যে, রোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে রোগীকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং রোগীর কণ্ঠ আরো সোচ্চার হতে হবে। 

১৭ সেপ্টেম্বর “ওয়ার্ল্ড পেশেন্ট সেফটি ডে” অর্থাৎ “বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস”। বিশ্বের সকল রোগীর সেফটি বা নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের দেশসহ সকল দেশ এবং আন্তর্জাতিক বন্ধু ভাবাপন্ন দেশগুলো একক ও সামগ্রিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে ৭২ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে “গ্লোবাল এ্যাকশন অন পেশেন্ট সেফটি”- রোগীর সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ কর্মসূচী গৃহিত হওয়ার মাধ্যমে ১৭ সেপ্টেম্বরকে “ওয়ার্ল্ড পেশেন্ট সেফটি ডে” অর্থাৎ “বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস” হিসাবে ঘোষণা করে। রোগীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্ভূক্ত দেশসমূহ এক সাথে কাজ করার অঙ্গিকার করে। সেই সাথে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, সকলকে সম্পৃক্ত করা, সারা বিশ্ব যেন একই মনোভাব নিয়ে একসাথে কাজ করার মাধ্যমে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। 

এই বছর “বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস”- এর পতিপাদ্য বিষয় হলো- “এনগেজিং পেশেন্ট ফর পেশেন্ট সেফটি” অর্থাৎ রোগীর সম্পৃক্ততাই রোগীর নিরাপত্তা। একই সাথে “এলিভেটেট দ্যা ভয়েজ অফ পেশেন্ট ফর পেশেন্ট সেফটি” মানে রোগীর নিরাপত্তায় রোগীর কণ্ঠ সোচ্চার হোক- এই স্লোগান নিয়ে বিভিন্ন পোষ্টার, লিফলেট, ব্যানার, সেমিনার, স্যোসাল মিডিয়া, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের নিকট সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান চলছে। ডাটা বলছে, প্রাথমিক এবং বহিঃবিভাগ স্বাস্থ্য সেবায় প্রতি ১০ জনে ৪ জন অর্থাৎ ৪০% রোগী কোন না কোন ভাবে ক্ষতির সমক্ষিণ হচ্ছেন। এমনকি অনিরাপত্তাজনিত সেবা (অনসেফ কেয়ার)- এর কারণে প্রতি মিনিটে ৫ জন করে মারা যাচ্ছে। 

এবার আসা যাক, পেশেন্ট সেফটি বা রোগীর নিরাপত্তা বলতে কি বুঝায় এবং এই বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবসের মূল উদ্দেশ্য কি? প্রথমেই রোগীর নিরাপত্তা: আসলে একজন মানুষ যখন রোগাক্রান্ত হন তখন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় রোগী একজন চিকিৎসকের নিকট শরানাপন্ন হন। এবং যথাবিহীত সম্মানিত চিকিৎসক রোগীর শারিরীক অবস্থা ও ল্যাব সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে রোগের কারণ নির্ণয় করেন এবং যথারীতি ঔষুধ প্রেসক্রিপশন করেন। সেই সাথে নিয়মিত ঔষুধ খাবার উপদেশ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষ রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুসারে চিকিৎসক ছাড়াও নার্স, রোগীর নিকট আত্মীয়, রোগীর রক্ষণাবেক্ষক, হসপিটাল বা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপকসহ স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংযুক্ত সকলকে রোগীর বিষয়ে অবহিত করেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু তারপরও আমরা দেখেছি সকলের আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কোথায় না কোথায় অবহেলার কারণে রোগীর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়ায় এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে। আর তাইতো “পেশেন্ট সেফটি বা রোগীর নিরাপত্তা বলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে- প্রতিরোধযোগ্য এমন সম্ভাব্য ক্ষতিসমূহ যাতে রোগীদের না হয় অর্থাৎ অনুপস্থিত থাকে এবং রোগীকে চিকিৎসা স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর ঝুঁকিসমূহ যাতে সর্বনিম্ন স্তরে আনা হয়।

শুধু অনুন্নত দেশ নয়, উন্নত দেশসমহও কখনও কখনও স্বাস্থ্যসেবার কোন স্তরে অবহেলার কারণে রোগীর স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হয় এবং রোগী ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রোগী যখন স্বাস্থ্যসেবার নিয়োজিত চিকিৎসক, সেবিকা, ফার্মাসিষ্ট ছাড়াও আত্মীয় স্বজনের বা পরিবারের সদস্যের সাথে নিজেও যদি নিজের যত্নে অংশীদার হয় তবে রোগীর সেফটি বা নিরাপত্তাসহ রোগীর সন্তুষ্টি, এমনকি আরোগ্য লাভেও উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়। আর তাইতো এবার বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবসে রোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে রোগীকেও এগিয়ে আসতে আহবান জানানো হচ্ছে। 

রোগী যদি তার রোগ, নির্ধারিত চিকিৎসা, ঔষুধ, ঔষুধের মাত্রা, ঔষুধের সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকেন এবং নিজে ও নিজের পরিবার সদস্যবৃন্দ, যারা রোগীর সেবায় নিয়োজিত আছেন, সকলেই যদি নিয়ম মেনে চলেন তবেই সম্ভাব্য চিকিৎসা ত্রুটি বা মেডিকেশন ইরোর হবার ঝুঁকি কমবে। সেই সাথে এ্যাটিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, ইনফেকশনজনিত সার্জারী, সেপসিস, শারীরিক ও মানসিক পেসার ইনজুরি, বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ডিসিস ইত্যাদি হবার সম্ভাবনা কমে যাবে। রোগীকে এ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা ও সেবনবিধি সঠিক ভাবে মানতে হবে। যে মাত্রায় যতদিন খেতে বলা হয়েছে ততদিনের কোর্স অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ব্লাড পেসার, ডায়াবেটিস রোগের ঔষুধের সেবনে বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে প্রতিদিনের মাত্রা বাদ পড়ে না যায়। যে কোন ঔষুধ গ্রহনের পর যদি অনাকাক্ষিত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তবে অবস্যই নিয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা সদস্য, চিকিৎসক, নার্স, সম্ভব হলে ফার্মেসিতে- যেখান থেকে ঔষুধ কিনেছে সেখানেও অবহত করতে হবে। রোগীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় রোগীর এই সম্মুখযাত্রা উক্ত রোগীসহ সকল রোগীর নিরাপত্তায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। 

পরিশেষে, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, রোগী যদি তার স্বাস্থ্য রক্ষায় সকল সময় সজাগ থাকেন তবে তা তার নিরাপত্তার স্বার্থে ফলাফল উল্লেযোগ্য। এটি প্রমাণত যে, রোগী নিজেকে সম্পৃক্ত করার কারণে রোগীর সম্ভাব্য ক্ষতির ১৫% কমেছে, কমেছে চিকিৎসা ত্রুটি, অনেক জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আর তাইতো বলা হচ্ছে, রোগী ও রোগীর পরিবার যদি রোগীর স্বাস্থ্য রক্ষা সংক্রান্ত এবং রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে সজাগ থাকেন তবেই রোগীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে আর সেই সাথে বিশ্ব রোগী নিরাপত্তা দিবস পালন সার্থক হবে। 
 

মোঃ শামীম আলম খান  : ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফার্মাসিষ্ট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার সাবেক কনসালটেন্ট।

এই বিভাগের আরো সংবাদ