আজকের শিরোনাম :

সংবাদপত্র যদি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হয়, তাহলে অন্য তিনটি স্তম্ভের খবর কি?

  মোশাররফ হোসেন মুসা

২৭ মে ২০২৩, ০৯:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

মোশাররফ হোসেন মুসা
সরকার কর্তৃক কোনো সাংবাদিক নিগৃহীত হলে সকলের মুখে একটি কমন কথা শোনা যায় তাহলো- 'সংবাদপত্র  হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ'। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগে, অন্য তিনটি স্তম্ভ যদি গণতান্ত্রিক নিয়মে কার্যকর না থাকে তাহলে চতুর্থ স্তম্ভের কাজ  কি ?

 আমেরিকার তৃতীয় রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসন আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র রচনা কালে সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রকে চতুর্থ স্তম্ভ বলেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন- ১৭৮৭ সালে বৃটেনের হাউস অব কমন্সের এক বিতর্ক সভায় এডমন্ড বার্ক সর্ব প্রথম সংবাদ মাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে ঘোষণা দেন। অন্য তিনটি স্তম্ভ হলো- আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ।  ভুলে গেলে চলবে না,  যেসব দেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, যেসব দেশে  গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, সেসব দেশে এ উদাহরণটি খাটে । যাহোক বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় বেশিহারে আলোচনা হয় যখন কোনো সাংবাদিক গ্রেফতার কিংবা নিগৃহীত হলে। আগেই বলা হয়েছে- উদাহরণটি  পুরোপুরি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বেলায় প্রযোজ্য। এখন প্রশ্ন হলো- সংবাদপত্রগুলো গণতন্ত্র বিশ্বাস করে কি না? অথবা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করছে কি না( আমার বিশ্বাস, দেশের অধিকাংশ পত্রিকার  সাংবাদিক সরকারের তিনটি বিভাগের নাম, তাদের  কাজ কি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান রাখার প্রয়োজন মনে করেন না )।

 উদাহরণ হিসেবে 'প্রথম আলো' পত্রিকাটি  আনা যায়। ওই পত্রিকাটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কি কি কাজ করেছে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো বুদ্ধিজীবী শ্রেণী কিংবা সচেতন পাঠক সমাজ তৈরি করতে সচেষ্ট কি না? আমি তো মনে করি, ওই পত্রিকা পড়ে যুব সমাজ একেকজন প্রতিক্রিয়াবিদ ছাড়া অন্য কিছু হন না। অনেকের জানা রয়েছে, এ পত্রিকায় তালিকাধারী  ব্যক্তিরা ফরমায়েসি লেখা লিখে থাকেন। কারো পুরো নাম লেখার স্বাধীনতাও নেই( তবে পত্রিকাটি বিখ্যাত ব্যক্তিদের পুরো নাম ঠিকই লিখে থাকে)।  একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের তিনটি বিভাগ সমান তালে কার্যকর থাকতে হয়। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্রে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে পৃথক পৃথক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান( স্বাধীন নির্বাচনিক বোর্ড, স্বাধীন স্থানীয় সরকার, স্বাধীন ন্যায় পাল, স্বাধীন দুর্নীতি দমন বিভাগ  ইত্যাদি) থাকতে হয়। এসব বিষয়ে প্রথম আলোর নির্দিষ্ট ভুমিকা আছে কি? বরং অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সখ্যতা, বিদেশি দুতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ, এনজিওদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ইত্যাদি কাজে আগ্রহী থাকতে দেখা যায়। এমনকি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কুবুদ্ধি এই পত্রিকাটি প্রথম  দিয়েছিল( ডাকসুর সাবেক জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী ২০০০ সালে এক জরিপে দেখান, যদি বিএনপি- জামায়াত জোট করে নির্বাচন করে তাহলে ২১০ সিট, আর আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টি জোট করে নির্বাচন করে তাহলে ২০০ সিট পাবে। তার জরিপটি 'প্রথম আলো' চার পৃষ্টা ব্যাপী ছেপেছিল এবং বিএনপি ২০০১ নির্বাচনে এ তত্ত্ব কাজে লাগায়)। এ পত্রিকায় প্রথম সারির  বিশ জন লেখক আছেন, যারা মাথায় অন্য বিশ্বাস রেখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন( ইদানীং ওই পত্রিকার কয়েকজন সাংবাদিক ওই পত্রিকা থেকে বের হয়ে আরেকটি পত্রিকা বের করেছেন)।  অথচ গণতন্ত্র এমন একটি মতবাদ বা সংস্কৃতি- যা মাথায় ধারণ করতে হয়, হৃদয়ে লালন করতে, তারপর মুখে প্রচার করতে হয়। 

তাহলে যে পত্রিকাটি গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের পক্ষে কাজ করে না, সরকারের তিনটি বিভাগ কার্যকর করার পক্ষে সচেতন পাঠক শ্রেণী, এমনকি নির্দিষ্ট বুদ্ধিজীবী শ্রেণী তৈরি করে না, সে সংবাদ পত্রটি কিংবা এজাতীয় সংবাদপত্রগুলো চতুর্থ স্তম্ভ নিয়ে মায়াকান্না কেন করে ?

লেখক: গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।

এই বিভাগের আরো সংবাদ