আজকের শিরোনাম :

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই সেফ এক্সিট সুবিধা নিয়েছেন!

  অজয় দাশগুপ্ত

১৮ মে ২০২৩, ১১:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

অজয় দাশগুপ্ত
‘সেফ এক্সিট’ শব্দদুটি একই দিন (১৪ মে) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উচ্চারণ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন পল্টন এলাকায় এক সমাবেশে, যা ডাকা হয়েছিল শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ‘সেফ এক্সিট’ বলেছেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনের সমাবেশে, যা আয়োজিত হয়েছিল ‘বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে।

বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, ঈদের পর সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। ১৫ এপ্রিল বিএনপির এক শীর্ষনেতা রাজশাহীতে বলেছিলেন, ঈদের পরই সারা দেশে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এ সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না দলের নেতাকর্মীরা, এমন সংকল্পও ব্যক্ত করা হয়। বিএনপির আরেক নেতা ২০ এপ্রিল বলেছিলেন, ‘ঈদের পর আমরা কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নামব। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।’

দুটি খবরই প্রকাশ করেছিল বহুলপ্রচারিত সংবাদপত্র প্রথম আলো।
 
ঈদ ছিল ২২ এপ্রিল। তিন সপ্তাহ পর ১৩ মে পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে আয়োজিত সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের কাউকেই কাফনের কাপড় পরা অবস্থায় দেখা যায়নি। তবে একটি পত্রিকা ১৩ মে-র সমাবেশের পর তাদের অনলাইনে খবর দিয়েছিল: সমাবেশে যোগদানকারীদের রাজপথের সভাস্থলে বসার জন্য সতরঞ্চি ও তেরপলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনেকে দৈনিক পত্রিকা বিছিয়ে বসেছিলেন।
 
একটি কৌতুক রয়েছে এমন: এক লোক ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার জন্য নদীতে নামার পর ‘সংকল্প পরিত্যাগ করে’ তীরে উঠে আসে। কৌতূহলী একজন জানতে চান: কেন প্রাণ বিসর্জন দিতে গিয়েও উঠে এলেন? উত্তর এলো: ‘পানি যে ঠান্ডা।’ সবাই হেসে উঠল। একজন বলল: প্রাণ বিসর্জন করার জন্য ঠান্ডা পানি বেশি কার্যকর হতো।
 
বিএনপির পল্টন অফিসের সামনের সমাবেশে যোগদানকারীরা ১৪ মে নিজ নিজ ঘরে ফিরে গিয়েছে কিনা, সেটা জানা যায়নি। রাজনৈতিক গলাবাজি কমবেশি সব দেশেই রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নির্বাচনের ফল মানবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

পাকিস্তান আমলে নিজে দেখেছি, মধুর ক্যান্টিনের কর্মিসভা, বটতলার ছাত্রসমাবেশ কিংবা পল্টন ময়দানের জনসভায় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তার পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সাগরেদ গভর্নর মোনায়েম খানকে ‘বঙ্গোপসাগরে তুলার বস্তার মতো’ ছুড়ে ফেলার কথা বলে অনেক ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতা তুমুল করতালি পেয়েছেন। স্বাধীনতার পর জাসদ নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্‌গার করেছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং তার দলের নেতারাও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে রাজপথের সংগ্রামের মাধ্যমে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ এটা করতেই পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এরপর টানা প্রায় ১৭ বছর তারা ক্ষমতার বাইরে। এ সময়ে দলের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গিয়েছেন।
 
‘হামলা-মামলার শিকার’ হওয়ার ঘটনাও অনেক। জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর এ দলটি গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তবে এ পদ নয়, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কারণে। এ পদ ব্যবহার করে তিনি বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান পরিবর্তন করেন একক সিদ্ধান্তে। বিএনপি গঠনের সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সদ্য গঠিত দলটি নির্বাচনে জাতীয় সংসদের তিন ভাগের দুই ভাগের বেশি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের সুবিধাবাদীরা বুঝে গিয়েছিল জিয়াউর রহমানের দলে যোগ দেয়া মানেই ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেয়া। মন্ত্রী-এমপি হলে তো ভালোই, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা মিলবে বিএনপিতে যোগ দিলে। দলের আদর্শ-উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার দরকার নেই, জেল-জুলুম সহ্য করার শঙ্কা নেই।
 
সে এক সোনালি সময় ছিল বিএনপির। সে তুলনায় গত ১৭ বছর বেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে দলটি। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই ‘রাজপথের দল’। পাকিস্তান আমলে মাত্র বছর দুয়েক পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষমতায় ছিল। দলের শীর্ষনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন মাত্র এক বছর, সেটাও কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার হিসেবে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে। ততদিনে আওয়ামী লীগ এ ভূখণ্ডের প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সফলতার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়ের সম্ভাবনা দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে মনোনয়ন পেতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বারবার জোর দিয়েছেন আদর্শভিত্তিক রাজনীতির ওপর। যেকোনো উপায়ে নির্বাচনে জয়ের জন্য আদর্শ বিসর্জন দিতে তিনি রাজি ছিলেন না। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করবে, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আর যদি সংখ্যাগুরু না হতে পারি আইনসভায়, আওয়ামী লীগই বিরোধী দল হয়ে কাজ করবে। রাজনীতি স্বচ্ছ থাকবে, জগাখিচুড়ি হবে না। আদর্শহীন লোক নিয়ে ক্ষমতায় গেলেও দেশের কাজ হবে না। ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার হতে পারে।’ [পৃষ্ঠা ২৪৯]

তখন শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স মাত্র ৩৩ বছর। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী–এই তিন নেতার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। তাদের সামনেই শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে নিজের ধারণা দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি ছয় দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। এরপর তাকে ফাঁসিতে মারার আয়োজন করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, বাংলার মানুষের অধিকার চাই।’
 
বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারেন। খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. জিল্লুর রহমান খান লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তাক করলে তার নির্ভীক উচ্চারণ ছিল: ‘যদি বাঙালিরা তাদের জাতির পিতাকে হত্যা করতে চায়, তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর পরিণতি বাঙালিদের জন্য শুভ হবে না। ... তাকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রকেও তারা হত্যা করবে এবং মানবিকতা বিদায় নেবে।’ [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মোহনী নেতৃত্ব এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম, পৃষ্ঠা: ২৬১]
 
বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে চাইবে, এতে দোষের কিছু নেই। এ জন্য নির্বাচন হচ্ছে প্রকৃষ্ট পন্থা। যদি রাজপথের সংগ্রাম গড়ে তুলে সরকারের পতন ঘটাতে পারে, তারও গ্রহণযোগ্যতা থাকে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে তাদের রাজপথের সামর্থ্য দেখাতে পেরেছে। ১৯৯০ সালেও দেখিয়েছে। বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা এখন পর্যন্ত এটা করে দেখাতে পারেনি। তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম কোন ভরসায় ‘সেফ এক্সিটের’ কথা বলেন। এ দলের অন্যতম প্রধান নেতা তারেক রহমানের মতো ‘সেফ এক্সিটের’ ব্যবস্থা কি তারা শেখ হাসিনার জন্য করতে চাইছে? খালেদা জিয়াও কিন্তু একধরনের ‘সেফ এক্সিট’ পেয়েছেন। তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে দুর্নীতির মামলায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মানবিক বিবেচনায়’ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত রয়েছেন কারাগারের পরিবর্তে নিজ বাসভবনে। স্বজনরা তার সাক্ষাৎ পাচ্ছেন। দলের নেতারাও দেখা করতে পারছেন নিয়মিত। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়া-আসার পথে দলের কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে পারছেন। স্পষ্টতই তিনি যেকোনো ধরনের বার্তা মুখে বা ফোনে দিতে পারেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাকে বাসা থেকে বের হতে দেয়নি পুলিশবাহিনী। গত তিন বছরে এমন কিছু ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। বিএনপি নেতারা বলছেন খালেদা জিয়া গৃহবন্দি। কিন্তু তিনি কি সেটা পরখ করেছেন? নাকি সরকারের এমন কোনো লিখিত বা অলিখিত ‘আদেশ’ রয়েছে তার কর্মকাণ্ড ও চলাচলের বিষয়ে, যা তিনি মেনে চলছেন? ‘আমি শেখ হাসিনার সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না। ফের জেলে পাঠিয়ে দিলেও তা মেনে নেব’–তিনি যদি বাড়ির বাইরে এসে এমনটি বলেন, কেমন হবে পরিস্থিতি? বিএনপির নেতাকর্মীরা কি এমন ডাকে কাফনের কাপড় পরে সাড়া দেবে?
 
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পর তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে, যা ততদিনে বাংলাদেশের শত্রুরাষ্ট্র। পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেকটা সময় শেখ মুজিবুর রহমানের কেটেছে কারাগারে। তবে তাকে ১৯৭১ সালের আগে কখনো পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি রাখা হয়নি। কিন্তু ১৯৭১ সালে তাকে এ ভূখণ্ডে বন্দি রাখার সাহস করেনি পাকিস্তানি জান্তা। এ সময়ে তাকে প্রহসনের বিচারে হত্যার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে এলে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আরাম-আয়েশে বসবাসের ব্যবস্থার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। সে সময় ঢাকায় বন্দি ফজিলাতুননেছা মুজিবের কাছেও এ ধরনের প্রস্তাব গেছে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথগ্রহণ করা বাংলাদেশ সরকারের কাছেও প্রস্তাব গেছে: স্বাধীনতা কিংবা শেখ মুজিবের মুক্তি, একটি বেছে নিতে হবে। উত্তর এসেছে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং অন্য নেতাদের কাছ থেকে: আমরা স্বাধীনতা চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিও চাই।
 
স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের লাখ লাখ কিশোর-যুবক তখন অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। ফজিলাতুননেছা মুজিব রণাঙ্গনে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পাঠিয়েছিলেন দুই তরুণ পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামালকে। তার সামনেও কিন্তু ‘সেফ এক্সিটের’ প্রলোভন ছিল। তিনি পুত্রদের নিজের কাছে রাখতে পারতেন, অন্য দেশেও পাঠিয়ে দিতে পারতেন ‘সুখে-শান্তিতে’ জীবন কাটানোর জন্য। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরমানন্দে এ ব্যবস্থা করে দিত বইকি!
 
খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার পুত্র তারেক রহমানের জন্য ‘সেফ এক্সিট’ ব্যবস্থা করেছিলেন। তারেক রহমানের নামে অনেক মামলা ছিল। বন্দি থেকেই সব কটিতে মেলে জামিন এবং এ জন্য খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। [ডেইলি স্টার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮]
 
তারেক রহমান সেই যে ‘সেফ এক্সিটে’ গেলেন, আর ফিরলেন না! খালেদা জিয়া টেলিভিশনে বলেছিলেন, ‘তারেক রাজনীতি করবে না।’ তিনি অশ্রুসিক্ত ছিলেন, সন্তানের মাথায় পরম স্নেহ-মমতায় হাত বুলিয়ে বিমানবন্দরগামী গাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল তারেক রহমানের স্ত্রী ও কন্যা। ‘সেফ এক্সিট’ বটে!
 
২০০৭ সালের মে মাসে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই শেখ হাসিনাকে সেফ এক্সিট দিতে চেয়েছিল। তিনি চিকিৎসার জন্য আমেরিকা গিয়েছিলেন। ফেরার সময় বলা হলো, রাজনীতি ছেড়ে প্রবাসেই থাকুন। অর্থের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু তিনি ফিরে আসেন বন্দি হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরে দলের নেতাকর্মীদের যেতে দেয়া হয়নি। কিন্তু তারা বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি সুধা সদন পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পথ ‘লোকারণ্য’ করে ফেলে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়েছিল।
 
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দিল্লি থেকে নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। জিয়াউর রহমান তখন ক্ষমতায়। তার প্ররোচনায় ‘শেখ হাসিনার আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়। কিন্তু তিনি ১৭ মে ফিরে আসেন লাখ লাখ মানুষের অভিনন্দনে সিক্ত হয়ে।
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম নিশ্চয়ই আমাদের রাজনীতির ইতিহাসের এ অধ্যায় সম্পর্কে অবগত। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যে ‘সেফ এক্সিট’ সুবিধা নিয়েছেন, সেটাও তার জানা।

লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

সৌজন্যে : সময় সংবাদ

এই বিভাগের আরো সংবাদ