আজকের শিরোনাম :

হাসান আহমেদ খান

তাঁর ফিরে আসায় আজ অনন্য বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ২০:২৫ | আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৫:৩২

আজ ১৭ মে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগ সন্ধিক্ষণের দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার ও আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদশ গড়ার প্রত্যয়ে গণতন্ত্রের দিগন্ত উন্মোচনের দিন।  ৪২ বছর আগে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারে গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা হিসেবে দেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা।

১৫ আগস্টের কলঙ্কিত হত্যাকাণ্ডে বিদেশে থাকায় দৈবক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দীর্ঘ ছয়বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বাংলার মানুষের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ সরিয়ে নতুন দিনের প্রত্যয়ে দেশে ফেরেন।

সেদিন বিকেল চারটায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে চেপে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক (তৎকালীন কুর্মিটোলা) বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রকৃতি ছিল যেন উচ্ছল, প্রায় ৬৫ মাইল বেগে কালবৈশাখী ঝড় বইছিলো।

আকাশ সেদিন ক্রন্দনরত ছিল, অবিরত বর্ষণ ধারার মধ্যেও বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত ছিল লাখ লাখ জনতার ঢল। তারা জাতির পিতার কন্যাকে একনজর দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল।

বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম হয়েছিল সেদিন। মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

সেদিন তিনি আরও বলেন, ‘আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।‘

বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বিনির্মাণে বারবার আঘাত ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন শেখ হাসিনা। কখনও সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে পড়ে, কখনও নির্বাচিত সরকারের নিপীড়নের শিকার আবার কখনও দলের অভ্যন্তরে। তারপরও তিনি আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করতে সক্ষম হয়েছেন।

১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছেন। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করেছেন সংকট ও ষড়যন্ত্রের। কখনও অপকৌশলের আশ্রয় নেননি। ১৫ আগস্টের হত্যার বিচার তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁকে অন্তত ২১ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে সক্ষমতার জানান দিয়েছেন।

ঢাকার যানজট কমানোর লক্ষ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ ও চালু করেছেন। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ চলমান। গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও অন্য অবকাঠামোর নির্মাণ তাঁর যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধিতে শেখ হাসিনার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি, দীর্ঘদিনের স্থল সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে তাঁর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে। দেশের অবকাঠামে উন্নয়েনে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া ও তা বাস্তবায়ন করা।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী দিনে বাংলাদেশকে রক্ষায় নিয়েছেন বদ্বীপ পরিকল্পনা। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, সবার জন্য বিদ্যুৎ, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রম, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সবার জন্য ঘর।

এছাড়া কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম মূলধারার সাথে যুক্ত রাখতে তিনি কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দশ লক্ষাধিক নাগরিকের ভরণ পোষণের ব্যবস্থায় তার মানবিকতার স্বীকৃতি দেশ ছাপিয়ে তিনি বিশ্বনেত্রী।

বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন করে সারাবিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পাদন এবং রায় কার্যকর করা হয় তার সরকারের আমলে।

শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের জন্য রোল মডেল। সম্প্রতি শেখ হাসিনা ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ব্রিটেনে যান । সেখানে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী । তাঁর দুই কন্যার আইডল শেখ হাসিনা এমনটি জানান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী । শেখ হাসিনার কর্ম, জীবন ও নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক আজ বিশ্বে চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাঁর জীবনের আলেখ্য উপমা নিয়ে  ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফা আক্তার পপি হাসুমণির পাঠশালা নামে একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় হাসুমণির পাঠশালা নামে শাখা থাকবে।

যেখান থেকে শিশুরা বাল্যকাল হতে শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে। কিভাবে তিনি একটি পিছিয়ে পড়া জাতিকে আধুনিক স্মার্ট ও যুগোপযোগী করে তুলেছেন এবং বিশ্বের কাছে নিজেদের মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন।

চার দশক আগে দেশে ফিরে ‍তিনি গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত করতে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। তাঁর এই চলার পথ ছিল কণ্টকময়। সামরিক শাসনের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বাংলার মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে বারবার জীবনের হুমকিতে পড়েছেন। তারপরও কখনও নিজেকে গুটিয়ে নেননি। তিনি স্বদেশে ফেরায় দেশ ও জাতি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। 

হাসান আহমেদ খান:  লেখক : সাবেক সহ-সম্পাদক , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ