স্বাধীনতা দিবসের কিছু ভাবনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৪

স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম। আমাদের জাতীয় দিবস হিসেবে যতগুলো দিন রয়েছে, স্বাধীনতা দিবস তার মধ্যে অন্যতম। এ দিনটি শুধু ঐতিহাসিক তাৎপর্যেই অসাধারণ নয়, নবীন জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার শপথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার দিন হিসেবেও অনন্যসাধারণ। মূলত ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। এর পরপরই শুরু হয় প্রতিরোধ ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন করার প্রত্যয়ে দৃঢ়চিত্ত বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ দিনটি একটি মাইলফলক। স্বাধীনতা যেকোনো জাতির জীবনে আরাধনার বিষয়, এক গৌরবোজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ২৬ মার্চ বাঙালি স্বজাত্যবোধের প্রথম স্বীকৃতি। স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লিখিত কোনো সাধারণ শব্দ নয়, নয় কোনো রাজনীতিবিদের বারবার উচ্চারিত অনর্থক বাণী। "স্বাধীনতা" হলো বাংলাদেশ নামক দেশটির নব সূচনার জন্য দুর্ভিক্ষ, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, বৈষম্য অনাচার দূরীকরণে শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্ষিতা নারীসহ আপামর জনসাধারণ ও কৃষকের ঘাম ঝরা শ্রমের সংমিশ্রণ এবং চিন্তায়-বোধে-মননে এর চেতনা ও আদর্শ লালনের মহান প্রত্যয়। কিন্তু এ কথা অনিবার্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও জনমানসের সার্বিক মুক্তি এখনো আসেনি। অগণিত প্রাণ ও একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল মূলত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক, নৃ-তাত্ত্বিক এমনকি মনস্তাত্ত্বিক কারণে। পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে সমাজের নানা স্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রয়োগের তুলনায় অপপ্রয়োগ বেশি ঘটছে। জর্জ বার্নাড শ’র মতে, ‘স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব’। তাই জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, উগ্রবাদ, মাদক, ধর্ষণসহ স্বাধীনতাবিরোধী সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় আইনের শাসন নিশ্চিত, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে জনমানসের সার্বিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারলে স্বাধীনতা আরো অর্থবহ হবে বলে বিশ্বাস করি। সত্যিই স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাংলার মাটিতে লাখো মা-বোনের স্বামী, সম্ভ্রম হারানোর ইতিহাস। হত্যা, লুটপাট, অনিয়ম, ধর্ষিতা নারীর আর্তনাদের বিরুদ্ধে বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগের সংমিশ্রণ এটি। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরা ছিনিয়ে এনেছিল লাল সবুজের এক টুকরো বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার এতকাল পরও বাংলার বুকে নারীরা অনিরাপদ। প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণ-সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটে স্বাধীন এই বাংলায়। তখন খুব কষ্ট পাই।দেশের তরে জীবন দিতে বিন্দু মাত্র চিন্তা করেনি সেই  বীরাঙ্গনাদের ত্যাগে গড়া এই বাংলাদেশে নারীদের আজ মুক্তবিহঙ্গের মতো চলা দায়। স্বাধীনতার নিবিড় আবেগে শত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে যাক বাংলার পিছিয়ে পড়া নারীসমাজ। নারীরা একাত্তরের মতো হয়ে জেগে উঠুক আরেকবার। প্রতিটি নারীই যেন পায় স্বাধীনতার স্বাদ, স্বাধীনতার মাসে এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

এবিএন/অমিত বণিক/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ