আজকের শিরোনাম :

আনোয়ার ইব্রাহিম - রাজনীতির এক আইকনিক নিদর্শন

  আলাউদ্দিন মল্লিক

১২ মার্চ ২০২৩, ১২:২২ | অনলাইন সংস্করণ

আলাউদ্দিন মল্লিক
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান 
২৪ নভেম্বর ২০২২ মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিম শপথ নেয়ার মাধ্যমে ২৫ বৎসরের প্রতীক্ষার অবসান হল। ১৯৮১ সালে নতুন মালয়েশিয়ার শুরুর নায়ক ড. মাহাথির মোহাম্মদের একনিষ্ঠ পার্শ্বচর হিসেবে যাত্রা শুরু করে ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে চলে আসা ইব্রাহিম হঠাৎ ১৯৯৮ এর ২ রা সেপ্টেম্বর মন্ত্রী পরিষদ হতে বরখাস্ত হন। ইব্রাহিম এর দায়িত্বে থাকা  মালয়েশিয়ার অর্থনীতি এশিয়ান আর্থিক সঙ্কট  (১৯৯৭-৯৮) এর মধ্যে পড়ে - যার ফলে মালয়েশিয়ার জিডিপি ১৯৯৬ সালে ১০০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ১৯৯৮ সালে ৭২.২  বিলিয়নে সঙ্কুচিত হয় যা ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার অর্থনীতির জিডিপি ১৯৯৬-এর স্তরে ফিরে আসেনি।

আনোয়ার ইব্রাহীম
আনোয়ার ইব্রাহীম (জন্ম ১০ আগস্ট ১৯৪৭) মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পেনাং রাজ্যের চিরোক তক্কুন গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইব্রাহীম আব্দুল রহমান একজন হাসপাতালের কর্মচারী ছিলেন এবং পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তার মা চে ইয়েন হুসেন একজন গৃহিণী ছিলেন। তার শিক্ষাজীবন তার নিজ গ্রামে শুরু করেন। তিনি মালয় কলেজ কুয়ালা কানজার থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ মালয় থেকে মালয় স্টাডিজ এ অনার্স এবং ১৯৭৪-৭৫ সালে জেলে থাকা অবস্থায় মাস্টার্স সমাপ্ত করেন।

আনোয়ার ইব্রাহীম তার ছাত্রজীবনে ১৯৬৮-১৯৭১ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মালয়েশিয়ান মুসলিম স্টুডেন্টস এর সভাপতি ছিলেন। একই সময়ে তিনি ইউনিভার্সিটি অব মালয়া মালয় ল্যাংগুয়েজ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়া সংগঠিত হলে এর সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা ও প্রো কমিটির সদস্য ছিলেন এবং একই বছর তিনি মালয়েশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল এর ২য় সভাপতি নির্বাচিত হন।

আনোয়ার ইব্রাহীম একজন ইসলামপন্থী নেতা (যিনি মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা ও ২য় সভাপতি) হওয়ার পরেও ১৯৮২ সালে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের উদারপন্থী দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অরগনাইজেশন এ যোগ দেন এবং সাংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দ্রুত পরিবর্তন করতে থাকে। ১৯৮৩ সালে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, ১৯৮৪ সালে কৃষি মন্ত্রী এবং ১৯৮৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রী হন। শিক্ষা মন্ত্রীর পদ তার মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ উপ -প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বার খুলে দেয়।

শিক্ষা মন্ত্রী হওয়ার পর আনোয়ার "ন্যাশনাল স্কুল কারিকুলাম " প্রনয়ণ করেন। মালয়েশিয়ার জাতীয় ভাষার নাম "বাহাসা মালয়েশিয়া " থেকে বাহাসা মেলায়ু এ পরিবর্তন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাতে অধিষ্ঠিত ছিলেন।  

সংস্কার আন্দোলন, পার্টি গঠন, অভিযোগ খন্ডন, শেষে প্রধানমন্ত্রী 
প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ আনোয়ারকে উপ -প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করলে, আনোয়ার ও তার সমর্থকরা "সংস্কার আন্দোলন "(ইংরেজি: refomasi movement) শুরু করে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বারিসন ন্যাশনাল সরকারের নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বিলোপ করা। ১৯৯৮ সালে কুয়ালালামপুরে এ্যাপেক সম্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও অন্যান্য এ্যাপেক প্রতিনিধিদের সামনে আনোয়ার ও তার সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে ভাষণ দেন।

সংস্কার আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি গঠন করে। এবং ৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে parti Islam se Malaysia, ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন পার্টি ও নব গঠিত ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি নিয়ে "বারিসন অল্টারনেটিভ" নামে বিরোধী জোট গঠন করেন। ২০০৩ সালের আগস্টে আনোয়ারের পরামর্শে তার স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি ও মালয়েশিয়ান পিপলস্ পার্টি একীভূত করে পিপলস্ জাস্টিস পার্টি গঠন করে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে PKR, PAS এবং DAP মিলে পাকাতান রাকাত নামে জোট গঠন করেন। যা ২০০৮ সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ৩১টি আসন জয়লাভ করে বিরোধী দলে পরিণত হয়। 
এরপর ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১২ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন।

নির্বাচনে আনোয়ারের জোট বিজয়ী পর মাহাথির মোহাম্মদ তাকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেয়ার কথা বলেছিলেন। ১৬ মে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি আবারো রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। বুধবার রাজকীয় ক্ষমার বিষয়ে আলোচনার পর তাকে মুক্ত ঘোষণা করে ক্ষমা প্রশ্নে গঠিত কমিটি।

বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নেওয়ার সময় মাহাথির চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, জোট ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। তবে এর দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তি নিশ্চিত করে তার কাছে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন তিনি। শপথ নিয়ে মাহাথিরও বলেছিলেন, দ্রুতই আনোয়ারের মুক্তি নিশ্চিত করবেন তিনি।বন্ধু থেকে শত্রু, শত্রু থেকে ফের বন্ধু।

মাহাথির মোহাম্মদ এবং আনোয়ার ইব্রাহিম দুজন প্রথমে বন্ধু, তারপর শত্রু ও পরে জোটের মিত্র হয়েছেন। তাদের এমন পরিবর্তনশীল সম্পর্কই গত তিন দশক ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি জোটের ভবিষ্যৎও এই দুজনের সম্পর্কের ওপরই নির্ভর করছে।

আনোয়ার ইব্রাহিম ও মাহাথির মোহাম্মদ একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। কিন্তু মতপার্থক্যের জেরে ১৯৯৮ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সরিয়ে দেন মাহাথির। এরপর সমকামিতার অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের ধারাবাহিকতায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে হটাতে তারা আবার মিত্রে পরিণত হন।

মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত নাম আনোয়ার ইব্রাহিম। এক সময় মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আনোয়ার ইব্রাহিম তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছেন।

এই আনোয়ার ইব্রাহিম ইস্যুতেই মাহাথিরকে পশ্চিমা গণমাধ্যম সাফল্যের সঙ্গে চিত্রিত করতে পেরেছিল যে, মাহাথির আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে আসীন করতে পারলেও তার উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি সংকটাপন্ন। তৃতীয় বিশ্বের গড়পড়তা কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকের কাতারেই তার স্থান। উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোনো কুলীন নেতার মর্যাদা তার জন্য 'নৈব চ নৈব চ'।

কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ নজির সৃষ্টি করেছেন মাহাথির। উন্নয়ন দর্শন ছাড়াও ভুল স্বীকার, ক্ষমা প্রদর্শন, এবং শত্রুকে মিত্র হিসেবে মেনে নেয়ার মতো কয়েকটি বিষয় মাহাথিরের কাছ থেকে শেখার আছে বিশ্ব নেতাদের। তবে এতদিন যারা বলে আসছিলেন যে, মাহাথির উন্নয়নের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, সদাশয় স্বৈরাচার এবং বিরোধী দলীয় মতামত কম গ্রাহ্য করেছেন, এবারের অনন্য পর্বে তাকে সেই অভিধায় ফেলা যাবে না। শত্রুকে মিত্র হিসেবে মেনে নিয়ে যে অনন্য নজীর স্থাপন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনধিক দুই বছর তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। এরপর সম্ভবত আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা ছাড়বেন। আসলে ‘সম্ভবত’ নয়, আনোয়ার ও তার স্ত্রীর (নবনিযুক্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়ান আজিজা) সঙ্গে তার পরিষ্কার সমঝোতার ফল হলো, তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে সক্ষম হওয়া। এটাও এক পরিহাস যে, তিনি একদা তথাকথিত সমকামিতার অভিযোগে মিত্র থেকে শত্রুতে রূপান্তরিত হওয়া যে আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগারে পুরেছিলেন, সেই আনোয়ারের আশীর্বাদ ও তার দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবেই মাহাথির (দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৮-২০২০) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। চুক্তি ছিল দুই বৎসর পর আনোয়ার ইব্রাহিম হবেন প্রধানমন্ত্রী।  কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ তার কথা রাখেননি।  আর সুযোগের সৎব্যবহার করে এরপর মুহিদ্দীন ইয়াসিন (২০২০-২০২১) আর ইসমাইল সাবরি বিন ইয়াকোব (২০২১-২০২২) পর্যন্ত আরো দুইজন প্রধানমন্ত্রীর গদি বাগিয়ে নেন।  এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ - সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।

মাহাথির - আনোয়ার দ্বৈরথ: বিজয় কার ভাগ্যে 
ফের দল বদল, পুত্রায় যোগ দিলেন মাহাথির মোহাম্মদ: ফের দল বদল করলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। এবার তুলনামূলক কম পরিচিত পার্টি ‘বুমিপুতেরা পারকাসা মালয়েশিয়া’ তথা পুত্রা নামের দলে যোগ দিয়েছেন ৯৭ বছর বয়সী এই নেতা। মাহাথিরের প্রতিষ্ঠিত পার্টি পেজুয়াং তানাহ এয়ারের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরমিন বানিয়ান পাহামিন সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, মাহাথির মোহাম্মদসহ আরও ১৩ জন পেজুয়াং সদস্য পুত্রায় যোগ দিয়েছেন।

মাহাথিরের দ্বিতীয় ক্ষমতা আহরণ: ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। অবসর থেকে ফিরে ৯২ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদ আবারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নামেন। এ যাত্রায় কারাবন্দি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট গঠন করেন মাহাথির। তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে পাকাতান হারাপান জোট জয়লাভ করে। পতন হয় ৬১ বছর ক্ষমতায় থাকা জোট ব্যারিসান ন্যাশনালের- প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির। 

মাহাথির কথা রাখলেন না: সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি করার বিষয়টি থাকলেও এ নিয়ে গড়িমসি করেন তিনি। আর এতেই বাধে বিপত্তি। ২০২০ সালে পাকাতান হারাপান জোট ভেঙে যাওয়ায় সংকটে পড়ে দেশটি - এতে আনোয়ার ইব্রাহিম কাঙ্খিত প্রধানমন্ত্রিত্ব পেলেন না । 

ব্যক্তি বিচারে মাহাথির: গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি; প্রধানমন্ত্রী মাহাথির নানা পরিকল্পনা নিয়ে দেশে সত্যিকার পরিবর্তন করতে একদল অনুসারীকে নিয়ে মহাযজ্ঞ পরিচালনায় ব্যস্ত।  মালয়েশিয়া ক্রমান্বয়ে বিশ্বের কাছে একটি রোলমডেল হয়ে উঠছে - সবাই মাহাথির প্রশংসায় ব্যস্ত। কিন্তু সব কিছুর পিছনে থাকে অন্ধকার একটি দিক: মালয়েশিয়া উন্নত হয়ে উঠছে আর অন্যদিকে দেশের জেলখানাগুলো পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে।  যে কোন প্রতিবাদ মূলসহ উপড়ে ফেলা হচ্ছে; গণতান্ত্রিক সব অধিকার সংকুচিত হতে হতে প্রায় নিঃশেষ। আমলাতন্ত্রের অন্যতম একজন তাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, " END RESULT JUSTIFY THE MEANS" এর কারণে আর পশ্চিমা মিডিয়ার কল্যানে মাহাথির পার পেয়ে গেছেন। মালয়েশিয়ার উন্নয়ন আর দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে ভাল একটা জীবনের দিকে নেওয়ার মহা উদ্যোগ চলমান তার সমালোচনা পর্যন্ত বরদাস্ত করতে রাজি নয় দেশের জনগণ। দ্বিতীয় পর্যায়ে (২০১৮-২০২০) প্রধানমন্ত্রী হওয়া আর ক্ষমতা সংহত করার প্রক্রিয়ায় তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমকে দেয়া তার প্রতিশ্রুতি রাখেন নি। এমনকি সর্বশেষ নতুন একটি দলে যোগদান তাঁর আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টাকে ইঙ্গিত দেয়।  তাঁর সম্পূর্ণ জীবনটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক - ক্ষমতার মোহ তাঁর রক্তে। 

আনোয়ার ইব্রাহিম - রাজনীতির এক ফিনিক্স পাখি: উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার প্রায় ২৫ বছর পর পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মতো ভস্মস্তূপ থেকে আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এই দীর্ঘ সময় তিনি বিরোধীদলীয় রাজনীতিক ও আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

এখন পর্যন্ত ব্যাপক স্বীকৃতি নিয়ে এগিয়ে মাহাথির; আনোয়ার দীর্ঘ ২৫ বৎসর পর নিজের দাবিটি প্রতিষ্ঠিত করে দেখালেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দুইজনের মধ্যে কে বিজয়ী হবেন।  মাহাথির দ্বিতীয় ক্ষমতা গ্রহণ হিসেবে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গল্পটি শুনিয়েছেন তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এটি তাঁর একটি বড় পরাজয়। আর আনোয়ার মাত্র শুরু করলেন। যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশটিতে বিরাজমান তাতে ভবিষ্যৎ বেশ অন্ধকার; আনোয়ার হয়ত আরো বেশি ভূমিকা রাখবেন - আর মাহাথিরের তেমন কোনো সুযোগ নেই।  তবে ভবিষ্যৎ বলে দেবে কে শেষ হাসিটা হাসবে।

আলাউদ্দিন মল্লিক : প্রধান সমন্বয়ক, আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯) ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ