আজকের শিরোনাম :

পাকিস্তানি (পশ্চিম) পত্রিকায় ৭ মার্চের ভাষণ : আইয়ুব খানের বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া

  ড. এম এ মোমেন

১১ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

ড. এম এ মোমেন
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর করাচির ‘দ্য ডন’ ৮ মার্চ ১৯৭১ শিরোনাম সংবাদ করে : চার দফা দাবি পূরণ হলে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যাবে। শুরুতে পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোও নির্বাচনের রায় মেনে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। সেদিনের সংবাদের সূচনা অংশটুকু :

সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আজ ঘোষণা করেছেন তার চার দফা দাবি পূরণ হলে সংসদে যাবেন। অপরাহ্নে রমনা রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব তার চার দফা পেশ করেন :
১. সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
২. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে সরিয়ে নিতে হবে।
৩. সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে।
৪. নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা বাংলাদেশের সব সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছেন এবং বাঙালিদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার খাজনা ও কর দেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

শেখ মুজিব ঘোষণা করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না। জনগণের দাবি আদায় করতে চান। করাচির ডন পত্রিকায় চার দফা নিয়ে পাকিস্তানি নেতাদের যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয় তা আংশিক অনূদিত হলো।

পশ্চিম পাকিস্তানের বদহাওয়ালপুর ইউনাইটেড ফ্রন্টের নেতা এবং নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য আকবর বুগতি শেখ মুজিবুর রহমানের পেশ করা চার দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য অবিলম্বে এই দাবিগুলো পূরণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত রাতে জারি করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকদের একজন এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান বিশ্বাসী।

শেখ মুজিব বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তার জানাশোনা। তিনি জানেন, শেখ মুজিব পাকিস্তানের সংহতি অখণ্ডতার প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক সংগ্রামে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে যারা অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করছেন তারা তার বিপুল জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত এবং তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা নস্যাৎ হওয়ায় তারা বিরক্ত।

শেখ মুজিবুর রহমানের অভিযোগ যে, বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তাকে উপেক্ষা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। কারণ তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় একমাত্র তিনিই পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখতে পারেন। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমিও জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।’

পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান আজ প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খানকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি যেন অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তান সফর করে বিবদমান জাতীয় সমস্যাগুলো শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে নিষ্পত্তি করেন।

তিনি আইনজীবী, ছাত্র, অন্য বুদ্ধিজীবী ও শ্রমিক নেতাদের আহ্বান জানান যে, জাতীয় একটি কনভেনশনের মাধ্যমে তারা প্রধান জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করেন।

তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করার প্রশ্নে শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া শর্ত নিয়ে কারো দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু তিনি যা করেছেন তা তো অপ্রত্যাশিত নয়।

নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে জনগণই ক্ষমতার উৎস। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একজন রাজনীতিবিদ (জুলফিকার আলী ভুট্টো) তার দলের গুরুত্ব কতটা তা প্রকাশ করতে গিয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকেও একটি রাজনৈতিক শক্তি আখ্যা দিতে দ্বিধা করেনি। একই নেতা দেশের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করে একটি ধারণা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যে তিনি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন। লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারে সংশোধন, পশ্চিম পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মহিলা আসনের নির্বাচনে স্থগিতকরণ, ১-৩ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা এবং একই নেতার সঙ্গে ৫-৬ ঘণ্টা সভা করে ২৫ মার্চ নতুন তারিখ ঘোষণা করা, সব মিলিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এসব থেকে শেখ মুজিবুর রহমান যে একটি ভিন্ন ধারণা পাবেন এটাই স্বাভাবিক।

নসরুল্লাহ খান সতর্ক করে দিয়েছেন ব্যক্তিত্বের লড়াইয়ে কে জিতবেন তা নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন নয়, এই দ্ব›েদ্ব যে দেশের অখণ্ডতা বিনষ্ট হচ্ছে সেটাই প্রধান উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে প্ররোচিত করছে। এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা চরম কোনো ঘোষণা দিয়ে বসেন কিনা। খোদাকে ধন্যবাদ তিনি এই আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে গেছেন এবং চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা দেননি।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান তদন্তের যে দাবি জানিয়েছেন, তা অবশ্যই বৈধ এবং বিচার বিভাগীয় ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা উচিত। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার মন থেকে অবিশ্বাসের অনুভূতি দূর হয়। তিনি বলেন, দেশ চালাতে এবং পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সহায়তা করা উচিত। (দ্য ডন, করাচি ৯ মার্চ ১৯৭১)

২০ মার্চ ১৯৭১ শনিবার
১৯৬৯-এ ক্ষমতা হারানো পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ২০ মার্চ তার ডায়েরিতে লিখেছেন, শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার সমান্তরাল সরকার গঠন করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়ার সঙ্গে গতকাল আর একটি বৈঠক করেছেন, বের হওয়ার সময় তাকে উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। ঠিক করা ছিল দুপক্ষের বিশেষজ্ঞরা বসে কোনো কোনো বিষয়ের নিষ্পত্তি করবেন। ইয়াহিয়ার পক্ষে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা, জাস্টিস কর্নেলিয়াস এবং এডভোকেট জেনারেল অফিসের কোনো এক কর্নেল হাসান। তাদের কারোরই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কাজেই মুজিবুর রহমানকে সন্তুষ্ট করতে তারা যদি এ অঞ্চলের স্বার্থের জলাঞ্জলিও দেন, আমি বিস্মিত হব না। এর মধ্যে ভুট্টো হুমকি দিয়ে বসেছেন, যদি পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ বলি দেয়া হয় তা বলে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করবেন। তিনি আসলে যা বলতে চাইবেন তার মানে হচ্ছে, তার ও তার লোকদের ভাগে যদি কিছু না পড়ে তা হলে সমস্যার সৃষ্টি করবেন। ভুট্টোর আশঙ্কা, দৌলতানা ও অন্যরা মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করবেন। পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য কোনো ভালোবাসা থেকে নয়, তার ব্যক্তিগত স্বার্থ যে ক্ষুণ্ন হচ্ছে সে কারণেই তার হৃদয়ে এত রক্তক্ষরণ। একটি সামরিক ভাষ্যমতে, জনগণ অস্ত্র-ব্যাপারি ও অন্যান্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ করেছে এবং তা অবাধে ব্যবহার করে যাচ্ছে। আর স্থানীয় সাংবাদিক সম্প্রদায় কোথাও কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেই তা সেনাবাহিনী করেছে বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

আমার আশঙ্কা, বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হলে- তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণেই হোক, কি অনড় তিক্ত সম্পর্কের কারণেই হোক, এই সেনাদের চাপের মুখে গুলিবিনিময় করে বেরিয়ে আসতে হবে। সঙ্গে নারী, শিশু ও প্রচুর গার্হস্থ্য তৈজসপত্র যখন থাকে এমনকি স্থলপথেও সেনা প্রত্যাহার করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়ে। কিন্তু ভয়াবহ সংকট তখনই সৃষ্টি হয়, যখন যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, চারদিকে অজস্র খাল-বিল-নদীর বাধা ডিঙিয়ে বন্দরে আসতে হয়, সরু জলপথে জলযান বিপন্ন হয়ে পড়ে- গভীর সাগরে না পড়া পর্যন্ত এই বিপন্নতা কাটে না। যদি পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে মোড় নেয়, তাহলে এই সেনাদের জন্য স্থানীয় কমান্ডারদের জরুরি কোনো উদ্ধার পরিকল্পনা থাকবে বলে আমি আশা করি।

নিজ নিজ উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়ার সঙ্গে আর এক দফা বৈঠক করেছেন। মনে হয়েছে, ইয়াহিয়া মুজিবুর রহমানকে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জন উপদেষ্টার একটি বহর নিয়ে ভুট্টো ঢাকার দিকে পা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। ইয়াহিয়ার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তার কিছু কিছু উত্থাপিত বিষয়ের সন্তোষজনক আশ্বাস পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আলোচনার জন্য ব্রোহিকেও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওয়ালি খান, দৌলতানা এবং মুফতি মাহমুদ আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। ভুট্টোও পিছিয়ে পড়ে থাকতে চান না। তার উদ্বেগ, অন্য কেউ একটা চাকরি পাওয়ার আগেই তাকে পেতে হবে।

এই ক্রান্তিকালে ইয়াহিয়া যদি ধ্বংসাত্মক কোনো সমঝোতা কিংবা মারাত্মক কোনো ভুল করে ফেলেন- তা হলে এটা তার নির্বাহীদের কারণে, যাদের তিনি দুর্বল করতে করতে পৌরুষত্বহীনের পর্যায়ে নেমে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে রাজনীতিবিদরা তাকে কেবল চুক্তির শর্তই বাতলে দিতে পারেন না, চাইলে কেন্দ্রীয় সরকারকে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো শুইয়ে ফেলতে পারেন; মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশে যেমন করছেন- নতুন পরিভাষা অনুযায়ী সমান্তরাল সরকার চালিয়ে যেতে পারেন। আর এর ফলে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে গেছে এবং তারা আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি আত্মরক্ষার সময় করজোড়েই তা করতে হচ্ছে।

বেসামরিক প্রশাসনের পক্ষে খুদে দোকানদার ও ছোট অপরাধীদের বিচার করা ছাড়া রাষ্ট্রের সুস্থতা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়ার মতো সব উদ্যম হারিয়ে ফেলেছে এই সেনাবাহিনী- তারা বেসামরিক প্রশাসনের হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে সেনাদলের চলাফেরা ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।

তারা রাস্তায় ব্যারিকেডের মুখোমুখি হচ্ছে, জনতা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। এসবের মোকাবিলা করা খুব কঠিন কাজ নয়, কিন্তু কোনো একটা প্রতিহত করতে গেলে গোটা প্রদেশে প্রচণ্ড চিৎকার শুরু হয়ে যায়- প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং নতি স্বীকার করে। আর এর ফলে সেনাবাহিনীর সম্মান, মনোবল ও খ্যাতি লুটিয়ে পড়ে- মূলত ওপরের দুর্বল ও অবিবেচক নেতৃত্বের কারণে।

২৩ মার্চ ১৯৭১, মঙ্গলবার আইয়ুব খান লিখেছেন : আজ পাকিস্তান দিবস। আজ কোনো উদযাপন নেই। আমার মনে হয় দেশ এখন এমনই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় যে উদযাপন করার মতো মানসিক অবস্থা কারোরই নেই।

২৬ মার্চ, শুক্রবার আইয়ুব খান লিখলেন : ইয়াহিয়া গত রাতে (ঢাকা থেকে) করাচি ফিরে এসেছেন, ভুট্টো এখনো সেখানে। এটা স্পষ্ট, একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে কিংবা ভবিষ্যৎ সংবিধান কেমন হবে, তা নিয়ে মুজিবুর রহমান, ভুট্টো ও ইয়াহিয়ার মধ্যে গ্রহণযোগ্য কোনো চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি।

আধঘণ্টার মধ্যে ইয়াহিয়া রেডিওতে ভাষণ দিচ্ছেন। তার ভাষণ থেকে অবস্থা আরো কিছুটা বোঝা যাবে, কিন্তু বিকাল ৫টার খবর পূর্ব পাকিস্তানে একটি গভীর ঘোলাটে অবস্থার বিবরণ দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে, সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ কতগুলো কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এবারই প্রথম এই প্রশাসন দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলল। এই শক্তি নিয়ে দেখা যাক তারা কত দূর যেতে পারে। তারা যদি সত্যিই কিছু করতে চায়, তাহলে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী মুজিবুর রহমান, ভাসানী ও অন্যদের দেখে নিতে হবে। টিক্কা হয়তো তা করতে চাইবেন, কিন্তু ইয়াহিয়া তাকে কত সময়ের জন্য কতটা সমর্থন দেবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ইয়াহিয়া পিছিয়ে যেতে পারেন। কোনো রাজনৈতিক চাপ সহ্য করার মতো ক্ষমতা তার নেই।

যে বিশ্বাসের বিস্তৃতি ব্যাপক, বলপ্রয়োগ কিংবা প্রতিরোধ করে তা বিনষ্ট করা যায় না। কাজেই মনে হচ্ছে এসব কুৎসিত ব্যবস্থা ও প্রতিরোধ আসলে (পূর্ব পাকিস্তানের) বিচ্ছেদটাকেই ত্বরান্বিত করছে। (উদ্ধৃতি : বিদেশির চোখে ১৯৭১)

 

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

এই বিভাগের আরো সংবাদ