আজকের শিরোনাম :

কে বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই

  আবদুল মান্নান

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:১২ | অনলাইন সংস্করণ

বিএনপি নামের হাইব্রিড রাজনৈতিক দলটি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের মানুষ শুনে আসছে দেশে নাকি গণতন্ত্র নেই। থাকলে রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনা নন, খালেদা জিয়া অথবা তাঁর স্বনামধন্য ছেলে তারেক রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতেন। ক্ষমতা হারিয়ে কিছুদিন দলটি ঘোর বা শকের মধ্যে ছিল। দলের বড় নেতা হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেশব্যাপী শুরু করলেন ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস। মরল মানুষ আর গবাদি পশু। ক্ষতি হলো কয়েক শ কোটি টাকার জনসম্পদ। এর আগে দেশে এক ধরনের রাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য শেখ হাসিনাকে পথের কাঁটা মনে করে তাঁকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেখ হাসিনা এই দফায় তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। সব ঠিক থাকলে সামনের বছর জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপিকে কিভাবে ক্ষমতায় বসানো যায় সেই এজেন্ডা নিয়ে এরই মধ্যে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের মিত্ররা মাঠে নেমেছে। সমস্যা হচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারারুদ্ধ। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানকে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই তারেক রহমান ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে পলাতক। তিনি একাধিক দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলা মামলা ও অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশি পাসপোর্টও সারেন্ডার করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিও যাতে দলের পদে থাকতে পারেন তার জন্য বিএনপি দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে। কে বলে দেশে গণতন্ত্র নেই?

বাংলাদেশের রাজনীতি বৈচিত্র্যে ভরা। এটি এমন একটি দেশ, যেখানে একজন সেনাপ্রধান দেশের ক্ষমতা দখল করে নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে পারেন। নিজেই একমাত্র প্রার্থী হয়ে দেশের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করার দায়ে অভিযুক্তদের দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য সংবিধানে দায়মুক্তি আইন সংযোজন করতে পারেন এবং তাঁদের নানাভাবে পুরস্কৃত করতে পারেন। এই ব্র্যান্ডের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় খুনিদের কেউ কেউ সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। এমন গণতান্ত্রিক দেশ বিশ্বে আর কি কোথাও আছে? বাংলাদেশে গণতন্ত্র এতই খোলামেলা যে এখানে চরের পীর থেকে শুরু করে হাঁটুসমান স্বঘোষিত নাবালক রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও গণতন্ত্র ফেরি করার দোকান খুলে বসতে পারেন। এই দেশে গণতন্ত্র এতই উন্মুক্ত যে এখানে বাম ঘরানার খুচরা রাজনৈতিক দলগুলো একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজপথে ২০ জনের মিছিল নিয়ে ‘বুলন্দ’ আওয়াজ ও দাবি তুলতে পারেন বর্তমান সরকার পদত্যাগের।

বাংলাদেশে রাজনীতির নামে এসব যখন চলছে তখন বিশ্বে দেখা দিল ভয়াবহ কভিড মহামারি। পুরো বিশ্বের অর্থনীতিসহ সব কিছু স্থবির হয়ে পড়ল। এবার বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা বগল বাজাতে লাগল এই বলে এই যাত্রায় সরকারের আয়ু শেষ। রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ মরে পড়ে থাকবে, তাদের কবর দেওয়ার মানুষও থাকবে না। দেশে দেখা দেবে ভয়াবহ খাদ্যাভাব। শেখ হাসিনা ও সরকারের আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এর কোনোটাই যখন হলো না তখন এই গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা কিছুটা লা-জওয়াব, কিছুটা হতাশ। কভিড মহামারি মোকাবেলায় ও নিজ দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য যে পারদর্শিতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করতে ভুল করেনি জাতিসংঘ, আইএমএফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কভিড মহামারির ধাক্কা শেষ হওয়ার পরপরই দুই বিশ্ব মোড়ল রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে শুরু করে দিল এক ভয়াবহ যুদ্ধ। শুরু করেছিল রাশিয়া, আর তাতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন জোগালো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটুক তার ঢেউ বিশ্বের আরেক প্রান্তে লাগতে বেশি সময় লাগে না। দেশে দেশে দেখা দিল অর্থনৈতিক টানাপড়েন। কমল রপ্তানি আয়। বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স। করোনাকালের এই কঠিন সময়ে বিদেশে অনেক বাংলাদেশি চাকরিচ্যুত হলেন। কর্মরতদের জীবনযাত্রার ব্যয় গেল বেড়ে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেল। এরই মধ্যে দেশে গণতন্ত্রের লেবাসধারীরা ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক ভয়াবহ গুজবের কারখানা চালু করে দিল। তাদের ভাষ্য মতে, আজ এই ব্যাংক দেউলিয়া, হয়তো কাল অন্য আরেকটা। এমনিতে কভিড মহামারি ও ইউরোপের যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষকে সঞ্চয়ে হাত দিতে হয়েছে। সবচেয়ে ভোগান্তির কারণ হলো জ্বালানি তেল ও সংশ্লিষ্ট অতিগুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজরে মূল্যবৃদ্ধি। ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিল রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অবরোধ বা স্যাংশন। যুক্তরাষ্ট্র কখনো বুঝতে চাইল না তাদের এই ধরনের গণবিরোধী পদক্ষেপের ফলে অন্য দেশে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সময় নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় বাণিজ্যিক পার্টনার। অবস্থানগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। একাত্তরে সেই দেশের প্রশাসন বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও তাদের দেশের মানুষ সব সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে, সহায়তা দিয়েছে।

এদিকে অন্য আর দশটা উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ পড়ল। শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন, তখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো। তাঁর এই তিন মেয়াদের শাসনামলে সেই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। বাংলাদেশকে তার শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সেই সব জিনিসেরও দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার বাংলাদেশমুখী প্রবাহ কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা সোশ্যাল মিডিয়া আর দলের কার্যালয়ের সামনে মাইক বেঁধে ঘোষণা করলেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার পথে। তাঁরা ভুলে গেছেন যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির আকার ৭৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ৪৭০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্ব মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে এখন ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। ধারণা করা হয়, কোনো দেশের সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে তাতে একটি দেশ স্বস্তিতে থাকে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সক্ষমতা আছে। ব্রিটেনে একসময় এই পরিসংখ্যান দেড় মাসে নেমে এসেছিল। সেখানে কোনো মাতম শোনা যায়নি।

যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে, তথাপি একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইল। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর কাছে সদস্য দেশগুলো ঋণ চায়, আর তাদের কাজই হচ্ছে সব কিছু যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেওয়া। ওটা তাদের ব্যবসা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কর্মকর্তারা দলবলসহ বাংলাদেশে এলেন। কয়েক দিন অবস্থান করলেন। সব কিছু যাচাই-বাছাই করলেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করলেন। ঋণ নেওয়া আর ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করলেন। এদিকে দু-একজন গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা ছুটলেন ওয়াশিংটনে। দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন, যাতে বাংলাদেশকে কোনো ঋণ দেওয়া না হয়। মঞ্চে আবির্ভাব ঘটল আইএমএফের সাবেক এক পথভ্রষ্ট এদেশীয় কর্মকর্তার। তিনিও এখন গণতন্ত্র ফেরি করার একটি দোকান খুলেছেন। আইএমএফের কর্মকর্তারা সফর শেষে সংস্থার সদর দপ্তর ওয়াশিংটনে ফিরে গেলেন। সেই ফেরিওয়ালা সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে নসিহত করলেন বাংলাদেশের আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। আইএমএফের কর্মকর্তাদের ঋণ অনুমোদন করার কোনো ক্ষমতা নেই। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই নালায়েকরা বাংলাদেশের সব মানুষকে তৃতীয় শ্রেণির বেকুব ভাবেন। কর্মকর্তাদের কাজ হচ্ছে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক তো সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের। এটি যেকোনো দেশের ব্যাংকের বেলায়ও সত্য। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ঘুরে গেলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী। কয়েক দিন থেকে তিনি বাংলাদেশ কঠিন সময় মোকাবেলা করার যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করলেন।

গত সোমবার আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাঁরা বাংলাদেশের চাহিদার অতিরিক্তসহ মোট ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছেন। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের ৪৭৬.১৭ মিলিয়ন ডলারের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার এই অর্থ আসায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৬৯ বিলিয়ন ডলার। এই অনুমোদন দেওয়ার আগে তারা সব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। তবে যেকোনো ঋণের মতোই এই ঋণেও আইএমএফের কিছু শর্ত আছে, যার অন্যতম হচ্ছে অর্থনৈতিক খাতে কিছু জরুরি সংস্কার আনা। দুর্নীতি কমিয়ে আনা ও অভ্যন্তীরণ উৎস থেকে বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ। বাংলাদেশে এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া যে খুব জরুরি।

ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলে তার দায়দায়িত্ব একান্তভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের। পরিচালনা পর্ষদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি করার এখতিয়ার বাংলাদেশের ব্যাংকের, যা সব সময় যে সঠিকভাবে করা হয় তা বলা যাবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকঋণ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ছিল সময়োপযোগী। আরেকটা কাজ জরুরি হয়ে পড়েছে. আর তা হচ্ছে ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানতের ওপর আবগারি শুল্কসহ নানা অজুহাতে অর্থ কর্তন বন্ধ করা। কোনো কোনো ব্যাংক তো আমানতকারীদের লেনদেনের তথ্যের যে খুদে বার্তা সেল ফোনে পাঠায় তার জন্য আমানতকারীদের কাছ থেকে চার্জ কাটার রেওয়াজ চালু করেছে। এটিএম বুথে লেনদেনের ক্ষেত্রে রসিদের জন্যও টাকা কাটা হয়। ব্যাংকে টাকা রাখলে যে তা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, অনেক ক্ষেত্রে তা হয় উল্টো। এর ফলে মানুষ ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে নিরুৎসাহ হয়। এটি বিশেষ করে ঘটে অবসরে যাওয়া আমানতকারীদের ক্ষেত্রে। তখন তাঁর নিজের জমানো অর্থ অপ্রয়োজনীয় খাতে, যেমন—জমি বা সোনা ক্রয় বাবদ ব্যয় করেন, এতে বাড়ে মুদ্রাস্ফীতি। দুর্নীতি বাংলাদেশে আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও তা এখনো কিন্তু সর্বগ্রাসী। এই দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত? অবশ্যই এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও একটি বড়সংখ্যক ব্যবসায়ী। এই সত্য তো অনুধাবন করতে হবে। সব সময় আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। নিজের সমস্যা নিজেকে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতিকে কেউ সম্মান করে না। তাঁর সময় যেমন তা সত্য ছিল, ৫০ বছর পরেও তা আরো বেশি সত্য।

গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা যখন কিছুতেই সরকারের কৌশল ও কর্মপদ্ধতির কাছে পেরে উঠছেন না তখন মাঠে নামালেন এক শ্রেণির স্বঘোষিত পণ্ডিত। তাঁরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সভাকক্ষ ভাড়া করে নতুন তর্কের অবতারণা করলেন এই বলে যে এই বছর নাকি সরকার বাচ্চাদের স্কুলের বইয়ে এই কথাটি জুড়ে দিয়েছে মানুষের উৎপত্তি বানর, যা মোটেও সত্য নয়। এই জ্ঞানপাপীরা কেউই কিন্তু বাচ্চাদের বইয়ে কী আছে তা খুলে দেখেননি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন যে কেউ নতুন দোকান খুলে তা ফেরি করতে পারেন।

সব শেষে বলি, গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালারা যত সহজে বাংলাদেশে দোকান খুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেন, তা আর কয়টি দেশে পারেন?

 লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক।

এই বিভাগের আরো সংবাদ