আজকের শিরোনাম :

৫০ বছরের যুবলীগ পরশের ছোঁয়ায় মনি খুঁজে পেয়েছে

  মোঃ রোমান আকন্দ

০৮ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩১ | অনলাইন সংস্করণ

১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ সংগঠক, মুজিব বাহিনীর প্রধান ও সর্বাধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যেই যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাঁচ দশক ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারও নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ দেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সেই ধারাকে অব্যহত রেখে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির জেষ্ঠ্যপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ। 

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একদিন শেখ মনিকে বলেন, ‘ছাত্রজীবন পেরিয়েছে, অথচ যৌবন পেরোয়নি এরকম বহু যুবক এখন আদর্শহীন, লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এখন অলস ও অকর্মণ্য জীবনে লক্ষ্যহীন হয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িত হচ্ছে। এদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগাতে পারলে একটি যুবশক্তি তৈরি হবে, যে শক্তির ভেতর থেকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। দেশ ও সমাজের ভবিষ্যতের রূপকার হবে এই যুবসমাজ।’

এর কিছুদিন পরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতেই এক যুব কনভেশনের মাধ্যমে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ সংগঠক, মুজিব বাহিনীর প্রধান ও সর্বাধিনায়ক, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, প্রখ্যাত সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি নিজেই প্রথম চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সংগঠনটি একটি শক্তিশালী যুব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। ওই দিন  শেখ মনি ও তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্তা আরজু মনিও নিহত হন।

জন্মলগ্ন থেকেই যুবলীগের নেতাকর্মীরা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগের পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসর, স্বৈরশাসক এর  অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করেছে বারবার। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের রোষানলে বগুড়ায় যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক খসরু, চট্টগ্রামে যুবলীগ নেতা মৌলভী ছৈয়দ আহমদ নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। পরে যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীরা দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন।

১৯৮১ সালে যুবলীগই প্রথম বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দাবি তোলে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যুবলীগের নেতাকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন শহীদ হন। রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় স্বৈরশাসক এরশাদ। ১৯৯০ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকায় যুবলীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ বদু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দেন। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে যুবলীগ ব্যাপক ভূমিকা রাখে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, বিএনপি জোট সরকারের সরাসরি মদদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে যুবলীগ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে যুবলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে যুবলীগ সবসময় সাহসী ভূমিকা পালন করে চলছে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে যুবলীগের নেতাকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখে। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের বিচারকাজ সম্পন্ন করতে এবং ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে হেফাজতের ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা প্রতিরোধে যুবলীগ রাজপথে ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করে। ওই সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে রাজপথে যুবলীগ সর্বদা প্রস্তুত ছিলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতায় এসে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে এই নির্বাচনের আগে ও পরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সেই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রেও বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় যুবলীগ। 

এ পর্যন্ত যুবলীগের সাতটি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর সপ্তম কংগ্রেসে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির জেষ্ঠ্যপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশকে  চেয়ারম্যান ও আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করে দায়িত্ব অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর শেখ মনি ছেলে শেখ পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই যুবলীগকে ঢেলে সাজান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে শেখ পরশের নেতৃত্বে কাজ করে চলছে যুবলীগ। পরশের পরশে যুবলীগ হয়ে উঠেছে মানবিক যুবলীগ।

তাই শুধু রাজপথেই নয়, মানবিক কর্মকান্ডে জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে যুবলীগ। করোনাকালে কেউ যখন ঘরে বাইরে বের হয় না, তখন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দেয়, লাশ দাফন, অ্যাম্বুলেন্স, টেলিমেডিসিন এবং অক্সিজেন সেবা দেয়। করোনার সময় যখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকটে হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে যুবলীগের নেতাকর্মীরা কৃষকের পাকা ধান কেটে ধান মাড়াই করে গোলায় ভরে দিয়েছে। মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ স্লোগান সামনে রেখে সারাদেশে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুবলীগ বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন যারা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ভূমিহীনদের ঘর দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন এলাকায় ঘর নির্মাণ করে দেয়। এমনকি সনাতন ধর্মালম্বীদের দূর্গাপুজার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যাতে কোনো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সম্প্রতি নষ্ট করতে না পারে। আর এসব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে শহীদ শেখ মনির রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকার শেখ পরশের নেতৃত্বে মানবিক যুবলীগে পরিণত হয়েছে।

তাই এখনকার যুবসমাজ বলে, যুবসমাজের একজন শেখ পরশ আছেই বলেই আমরা গর্বিত। তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করায় বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক
ই-মেইল: [email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ