সুনীল অর্থনীতিই আমাদের ভবিষ্যত
আলাউদ্দিন মল্লিক
০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
আরম্ভ:
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন তাঁর অমর সৃষ্টি রূপকথার মৎসকন্যায় আমাদের এক স্বপ্নময় জগতে নিয়ে যান। আমরা অবাক বিস্ময়ে তাঁর এই সৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করি। এখানে শুধু একজন মানবিক মৎসকন্যার কাহিনী বর্ণিত হয়নি- বরং সাগরতলের অপরিসীম সৌন্দর্য আর সম্পদের কথা উঠে এসেছে। মৎসকন্যা আর রাজপুত্রের প্রেম কাহিনী যেমন আমাদের সাগরতলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে; তেমনি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সাগর সম্পদের অপরিহার্যতা প্রকাশ করে। সাগরের জলরাশি আর এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানোই সুনীল অর্থনীতি। এর প্রধান অনুসঙ্গ সমুদ্রের মৎস সম্পদ, জ্বালানি ও খনিজ আহরণ। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের (PCA) রায়ে মিয়ানমার আর ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার বিরোধ নিস্পত্তি হলে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার (মিয়ানমারের সাথে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ আর ভারতের সাথে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার) সমুদ্র এলাকা পায়। ফলে সুনীল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একটি অতি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।
বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৭৮০ কোটি মানুষের পনের শতাংশ প্রোটিন আর তিরিশ শতাংশ জ্বালানির যোগান দিচ্ছে সাগর। পৃথিবীর ক্রম- বর্ধমান জনসংখ্যা আর জলবায়ুর বিপর্যয়কে বিবেচনায় নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সাগরের উপর নির্ভর করার কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতির মূল চালিকা জ্বালানির মূল উতসও সুমদ্রই হবে। তাই সুনীল অর্থনীতির জন্য একটি যুগোপযুগী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ধারাবাহিক বাস্তবায়ন দরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাংলাদেশ সুমদ্র হতে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক সম্পদ প্রতি বৎসর আহরণ করতে পারবে।
জ্বালানি তেল আর মৎস সম্পদ সাগরের প্রধান প্রচলিত সম্পদ। এর আরো অন্যান্য খাত হলো: গ্যাস, সামুদ্রিক জীব ও উদ্ভিদ, সামুদ্রিক শ্যাওলা (ocean writs), দুষ্প্রাপ্য ধাতু, সুমদ্র ট্যুরিজম, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র বন্দর, সমুদ্র পথ ও সমুদ্র বাণিজ্য ইত্যাদি ধরণের ২৫ টির বেশি। এর কয়েকটি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা করা হল:
সমুদ্র বাণিজ্য:
বাংলাদেশের বহিঃ বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ সমুদ্র পথে। এক বা একাধিক বহিঃ সমুদ্র বন্দর বন্দর নির্মাণ বাংলাদেশের এই বাণিজ্যকে আরো সমৃদ্ধ করবে; সাথে সাথে ভারত, নেপাল, ভুটান আর চীনকে সমুদ্র বন্দর সেবা দেয়ার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মত ধনী অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। এর অনুসঙ্গ হিসেবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিকশিত করা যাবে। মৎস ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীব আহরণ:
বর্তমানে বাংলাদেশ সাগর হতে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মৎস ও সামুদ্রিক জীব আহরণ করে। এতে যুক্ত পুরোনো অযান্ত্রিক কাঠের নৌকা যার সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি। মাত্র ২৫০ টি যান্ত্রিক মৎস ধরার ট্রলার এখন যুক্ত আছে। আর এতে ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমান এই সম্পদ আহরণ আহামরি কিছু নয়-মাত্র ৫ লক্ষ মেট্রিক টন। সঠিক পরিকল্পনা আর যান্ত্রিক মৎস ট্রলার ব্যবহার এই পরিমাণকে অনন্ত ৫০ গুন বেশিতে উন্নয়ন করতে পারবে। সামুদ্রিক শ্যাওলা (Ocean Writs) ও একোয়া কালচার:
সামুদ্রিক শ্যাওলা (Ocean Writs) ও অন্যান্য সামুদ্রিক একোয়া কালচার পরিকল্পনা করে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর ফলে দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। প্রচলিত জ্বালানি:
আমাদের সাগর উপকূল গ্যাস আর জ্বালানি তেলের আধার। সঠিক টেকনোলজির প্রয়োগ অতি স্বল্প মূল্যে এই সম্পদ আহরণ সম্ভব। এখন কিছই ব্লক করে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে ইজারা দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় শীগ্র এর সুফল পাওয়া যাবে। সুমদ্র স্রোত বিদ্যুৎ:
সুমদ্র স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এই শতাব্দীর একিট বড় অর্জন। এটি ব্যয় স্বল্প সম্পন্ন হওয়ার জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের সাগরে এই প্রজেক্ট করার সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারলে দেশের পাওয়ার সেক্টর স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে - আর এটি হবে পরিবেশ বান্ধব নবায়ন যোগ্য জ্বালানি উৎপাদন পদ্ধতির। সৌর বিদ্যুৎ:
আমাদের রয়েছে দীর্ঘ সাগর সৈকত যার অনেক অংশ মানুষের জন্য ব্যবহার যোগ্য নয়। আরো রয়েছে জনমানবহীন অনেক দ্বীপ। এই স্থানগুলোতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তা যেমন নবায়নযোগ্য আর পরিবেশ বান্ধব হবে - অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনীতির উন্নয়ন করা যাবে। সামুদ্রিক ট্যুরিজম:
বর্তমান বিশ্বে এই ট্যুরিজম ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি বিনোদনমূলক যা মানুষকে কাজের শক্তি যোগায়। আরেক দিকে এটি স্বাস্থ পুনরুদ্ধারের একটি ভালো উপায়।
দুষ্প্রাপ্য ধাতু:
আমাদের সমুদ্র উপকূলে ১৩ ধরণের সম্মৃদ্ধ ভারী ধাতু পাওয়া যায় যার কয়েকটি স্বর্ণের চাইতে দামি। এগুলোর মধ্যে ইলমিনাইট, গ্রেনেড, কলমিনাইট, জিরকন, রেটাইল, ম্যাগনেটাইট ইত্যাদি কয়েকটি। সঠিক পদ্ধতিতে আহরণ হলে এগুলো বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হতে পারে। পরিশেষ
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর গত ৫০ বৎসরে বিশ্ববাসীর কাছে বহুভাবে চিত্রিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিংগার "তলাহীন ঝুড়ি"র তকমা দিয়েছেন। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের পর পূর্বের ১৯৪৩ সালের (বাংলা ১৩৫০) মহা-মন্বন্তরকে উল্লেখ করে পশ্চিমা মিডিয়া দুর্ভিক্ষ প্রবন বলে চিহ্নিত করেছে। ওপর পুরো একটি দশক দেশটি বৈশ্বিক দারিদ্র ইনডেক্সে নিচের সারিতে স্থান পেয়েছে (৩ বা ৪) . ১৯৮৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বন্যা আর মহামারীর জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এরপর ১৯৯০ হতে ২০০০ পর্যন্ত দুর্নীতির আখড়া হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। বহু অর্থনীতিবিদ অতিরিক্ত জনসংখ্যা আর সম্পদের অপর্যাপ্ততাকে উল্লেখ করে দারিদ্রকে এর একমাত্র ভবিতব্য বলে রায় প্রদান করেছেন। একদা সোনার বাংলা হিসেবে পরিচিত - যা বহু সম্পদলোভী শক্তির লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এই শক্তিগুলো বাংলার সম্পদ লুট করে নিজেদের রাজধানী আর রাজ্য সাজিয়েছে। আর সোনার দেশটির অবস্থানকে দারিদ্র আর দুর্ভিক্ষ-মহামারীর কবলে নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু যে দেশের মাটিতে সোনার ফসল ফলে, যেদেশের মানুষ পরিশ্রমী আর স্বয়ংসম্পূর্ণ - সে দেশ বেশিদিন পিছিয়ে থাকতে পারেনা। তাইতো ২০১০ হতে শুরু হল এক নবযাত্রা। মাত্র দশ বৎসরে Per Capita Income ৬৫০ মার্কিন ডলার হতে ২১০০ তে উন্নীত হল - এখন যা ২৫০০ এর উপর। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূৰদৰ্শিতায় দেশটি দরিদ্র সীমা হতে উন্নীত হয়ে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিনিত হয়েছে। এই উন্নয়ন বজায় রাখতে পারলে ২০৩০ এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে পৃথিবীর বেশির ভাগ উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ মতামত দিয়েছেন। তাই সময় এসেছে এই অভিযাত্রায় সুনীল অর্থনীতিকে সংযুক্ত করার। এর ফলে দেশের উন্নয়ন হবে টেকসই। এজন্য দেশের বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনে আরো বেশি করে দেশি-বিদেশী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। এরপর তাদের নেতৃত্বে প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় একটি সমন্বিত সুনীল অর্থনীতির পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এতে প্রয়োজনে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ নিশ্চিত করে ধারাবাহিক বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করা। তাহলে আমাদের একদিকে যেমন একটি সুন্দর আর কার্যকরী সুনীল অর্থনীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে; আর তার ফলস্বরূপ দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।
আলাউদ্দিন মল্লিক : প্রধান সমন্বয়কারী, আমরা ৯৯ শতাংশ (Uphold 99)
হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন তাঁর অমর সৃষ্টি রূপকথার মৎসকন্যায় আমাদের এক স্বপ্নময় জগতে নিয়ে যান। আমরা অবাক বিস্ময়ে তাঁর এই সৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করি। এখানে শুধু একজন মানবিক মৎসকন্যার কাহিনী বর্ণিত হয়নি- বরং সাগরতলের অপরিসীম সৌন্দর্য আর সম্পদের কথা উঠে এসেছে। মৎসকন্যা আর রাজপুত্রের প্রেম কাহিনী যেমন আমাদের সাগরতলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে; তেমনি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সাগর সম্পদের অপরিহার্যতা প্রকাশ করে। সাগরের জলরাশি আর এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানোই সুনীল অর্থনীতি। এর প্রধান অনুসঙ্গ সমুদ্রের মৎস সম্পদ, জ্বালানি ও খনিজ আহরণ। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের (PCA) রায়ে মিয়ানমার আর ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার বিরোধ নিস্পত্তি হলে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার (মিয়ানমারের সাথে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ আর ভারতের সাথে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার) সমুদ্র এলাকা পায়। ফলে সুনীল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একটি অতি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।
বাংলাদেশের বহিঃ বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ সমুদ্র পথে। এক বা একাধিক বহিঃ সমুদ্র বন্দর বন্দর নির্মাণ বাংলাদেশের এই বাণিজ্যকে আরো সমৃদ্ধ করবে; সাথে সাথে ভারত, নেপাল, ভুটান আর চীনকে সমুদ্র বন্দর সেবা দেয়ার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মত ধনী অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। এর অনুসঙ্গ হিসেবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিকশিত করা যাবে। মৎস ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীব আহরণ:
বর্তমানে বাংলাদেশ সাগর হতে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মৎস ও সামুদ্রিক জীব আহরণ করে। এতে যুক্ত পুরোনো অযান্ত্রিক কাঠের নৌকা যার সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি। মাত্র ২৫০ টি যান্ত্রিক মৎস ধরার ট্রলার এখন যুক্ত আছে। আর এতে ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমান এই সম্পদ আহরণ আহামরি কিছু নয়-মাত্র ৫ লক্ষ মেট্রিক টন। সঠিক পরিকল্পনা আর যান্ত্রিক মৎস ট্রলার ব্যবহার এই পরিমাণকে অনন্ত ৫০ গুন বেশিতে উন্নয়ন করতে পারবে। সামুদ্রিক শ্যাওলা (Ocean Writs) ও একোয়া কালচার:
সামুদ্রিক শ্যাওলা (Ocean Writs) ও অন্যান্য সামুদ্রিক একোয়া কালচার পরিকল্পনা করে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর ফলে দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। প্রচলিত জ্বালানি:
আমাদের সাগর উপকূল গ্যাস আর জ্বালানি তেলের আধার। সঠিক টেকনোলজির প্রয়োগ অতি স্বল্প মূল্যে এই সম্পদ আহরণ সম্ভব। এখন কিছই ব্লক করে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে ইজারা দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় শীগ্র এর সুফল পাওয়া যাবে। সুমদ্র স্রোত বিদ্যুৎ:
সুমদ্র স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এই শতাব্দীর একিট বড় অর্জন। এটি ব্যয় স্বল্প সম্পন্ন হওয়ার জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের সাগরে এই প্রজেক্ট করার সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারলে দেশের পাওয়ার সেক্টর স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে - আর এটি হবে পরিবেশ বান্ধব নবায়ন যোগ্য জ্বালানি উৎপাদন পদ্ধতির। সৌর বিদ্যুৎ:
আমাদের রয়েছে দীর্ঘ সাগর সৈকত যার অনেক অংশ মানুষের জন্য ব্যবহার যোগ্য নয়। আরো রয়েছে জনমানবহীন অনেক দ্বীপ। এই স্থানগুলোতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তা যেমন নবায়নযোগ্য আর পরিবেশ বান্ধব হবে - অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনীতির উন্নয়ন করা যাবে। সামুদ্রিক ট্যুরিজম:
বর্তমান বিশ্বে এই ট্যুরিজম ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি বিনোদনমূলক যা মানুষকে কাজের শক্তি যোগায়। আরেক দিকে এটি স্বাস্থ পুনরুদ্ধারের একটি ভালো উপায়।
দুষ্প্রাপ্য ধাতু:
আমাদের সমুদ্র উপকূলে ১৩ ধরণের সম্মৃদ্ধ ভারী ধাতু পাওয়া যায় যার কয়েকটি স্বর্ণের চাইতে দামি। এগুলোর মধ্যে ইলমিনাইট, গ্রেনেড, কলমিনাইট, জিরকন, রেটাইল, ম্যাগনেটাইট ইত্যাদি কয়েকটি। সঠিক পদ্ধতিতে আহরণ হলে এগুলো বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হতে পারে। পরিশেষ
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর গত ৫০ বৎসরে বিশ্ববাসীর কাছে বহুভাবে চিত্রিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিংগার "তলাহীন ঝুড়ি"র তকমা দিয়েছেন। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের পর পূর্বের ১৯৪৩ সালের (বাংলা ১৩৫০) মহা-মন্বন্তরকে উল্লেখ করে পশ্চিমা মিডিয়া দুর্ভিক্ষ প্রবন বলে চিহ্নিত করেছে। ওপর পুরো একটি দশক দেশটি বৈশ্বিক দারিদ্র ইনডেক্সে নিচের সারিতে স্থান পেয়েছে (৩ বা ৪) . ১৯৮৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বন্যা আর মহামারীর জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এরপর ১৯৯০ হতে ২০০০ পর্যন্ত দুর্নীতির আখড়া হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। বহু অর্থনীতিবিদ অতিরিক্ত জনসংখ্যা আর সম্পদের অপর্যাপ্ততাকে উল্লেখ করে দারিদ্রকে এর একমাত্র ভবিতব্য বলে রায় প্রদান করেছেন। একদা সোনার বাংলা হিসেবে পরিচিত - যা বহু সম্পদলোভী শক্তির লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এই শক্তিগুলো বাংলার সম্পদ লুট করে নিজেদের রাজধানী আর রাজ্য সাজিয়েছে। আর সোনার দেশটির অবস্থানকে দারিদ্র আর দুর্ভিক্ষ-মহামারীর কবলে নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু যে দেশের মাটিতে সোনার ফসল ফলে, যেদেশের মানুষ পরিশ্রমী আর স্বয়ংসম্পূর্ণ - সে দেশ বেশিদিন পিছিয়ে থাকতে পারেনা। তাইতো ২০১০ হতে শুরু হল এক নবযাত্রা। মাত্র দশ বৎসরে Per Capita Income ৬৫০ মার্কিন ডলার হতে ২১০০ তে উন্নীত হল - এখন যা ২৫০০ এর উপর। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূৰদৰ্শিতায় দেশটি দরিদ্র সীমা হতে উন্নীত হয়ে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিনিত হয়েছে। এই উন্নয়ন বজায় রাখতে পারলে ২০৩০ এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে পৃথিবীর বেশির ভাগ উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ মতামত দিয়েছেন। তাই সময় এসেছে এই অভিযাত্রায় সুনীল অর্থনীতিকে সংযুক্ত করার। এর ফলে দেশের উন্নয়ন হবে টেকসই। এজন্য দেশের বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনে আরো বেশি করে দেশি-বিদেশী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। এরপর তাদের নেতৃত্বে প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় একটি সমন্বিত সুনীল অর্থনীতির পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এতে প্রয়োজনে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ নিশ্চিত করে ধারাবাহিক বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করা। তাহলে আমাদের একদিকে যেমন একটি সুন্দর আর কার্যকরী সুনীল অর্থনীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে; আর তার ফলস্বরূপ দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।
আলাউদ্দিন মল্লিক : প্রধান সমন্বয়কারী, আমরা ৯৯ শতাংশ (Uphold 99)
এই বিভাগের আরো সংবাদ