আজকের শিরোনাম :

মিয়ানমার কি ভেঙে যাচ্ছে ?

  আলাউদ্দিন মল্লিক

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

আলাউদ্দিন মল্লিক
পরিচয় 
মিয়ানমার যার দাফতরিক নাম মিয়ানমার সংঘ প্রজাতন্ত্র এবং যা ব্রহ্মদেশ, বর্মা বা বার্মা নামেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ এবং ২০১৭ সালের হিসেব মতে এর জনসংখ্যা প্রায় ৫৪ মিলিয়ন। মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৬,৫৫২ বর্গকিলোমিটার। উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,০৮৫ কিলোমিটার। পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ বিস্তার প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার।  মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশ ও ভারত, উত্তর-পূর্বে চীন, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে লাওস ও থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। দেশটির রাজধানী নেপিডো এবং বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন।
১৯৮৯ সালে সেখানকার সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে "মিয়ানমার" এবং প্রধান শহর ও তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম হয় "ইয়াঙ্গুন"। তবে গণতান্ত্রিক দলগুলোর অনেক অনুসারীই এই নামকরণের বিপক্ষে। ২১ অক্টোবর ২০১০ থেকে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত ও নতুন জাতীয় পতাকা প্রবর্তন করা হয়।

বহু জাতি গোষ্ঠীর দেশ 
প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে বর্তমান মায়ানমারে জনবসতির অবস্থান সর্ম্পকে জানা যায়। পিউ নামের উপজাতিরা ১ম শতকে বার্মা এলাকাতে দক্ষিণ দিকের ইরাবতী উপত্যকা দিয়ে প্রবেশ করে। অপর দিকে উত্তর দিক দিয়ে মন জাতি প্রবেশ করে। ৯ম শতকে মিরানমা জাতি ইরাবতী উপত্যকার উপরে বসবাস শুরু করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মী মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৬৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীর লোক নিয়ে বাকি ৩২ ভাগ গঠিত । এর বাইরেও আরো বেশ কিছু জাতি রয়েছে যাদেরকে মায়ানমার সরকার নিজেদের লোক বলে স্বীকার করে না। এর মধ্যে আছে রোহিঙ্গা, অ্যাংলো বার্মিজ, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং বার্মিজ ইন্ডিয়ানসহ আরো বেশ কিছু জাতি। ১৩৫টি জাতিকে মায়ানমার সরকার ৮টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছে। এই ভাগাভাগি জাতিভিত্তিক নয়, হয়েছে প্রদেশ অনুসারে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল: বর্মী, শান, কারেন, কাচিন, মন, ওয়া। 
বর্মী:   শাসকদল আর সেনাবাহিনীতে বর্মীদের আধিক্য আছে।  মায়ানমারে বর্মীদের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর  ৬৮ শতাংশ। এরা নির্দিষ্ট একটি প্রদেশে বসবাস না করে সারা মিয়ানমার জুড়ে আছে। রাজধানী সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এরা বাস করে সারা দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। 
শান: মায়ানমারের ভাষাভাষীদের মধ্যে অন্যতম বড় জাতি শান সর্ববৃহৎ প্রদেশ শান প্রদেশে বসবাস করে। এরা অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতিতে বিভক্ত। কৃষিপ্রধান শানেরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও এরা যোদ্ধা জাতি। এদের নিজস্ব ভাষা আছে। ১৯৬১ সালে জেনারেল নে ইউন ক্ষমতায় এসে শানদের সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শান স্টেট আর্মি তাদের অস্ত্র কেনার টাকা জোগাড় করতো আফিম চাষ করে। বস্তুত ক্রমাগত যুদ্ধের খরচের চাপেই মায়ানমারসহ আশেপাশের দেশজুড়ে কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের সৃষ্টি হয়। খুন সা নামের এক ভুঁইফোঁড় নেতা নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করে ফেলেন এই আফিমের টাকা দিয়ে। প্রায় ৫০ বছর ধরে শান প্রদেশে যুদ্ধ চলে।  র্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও বিদ্রোহীরা সক্রিয় আছে। শানদের সংস্কৃতিতে বৌদ্ধ ধর্ম আর নানা প্রাচীন পাহাড়ী বিশ্বাসের সংমিশ্রণ দেখা যায়।
কারেন: দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব মায়ানমারে কারেনদের বাস। মূলত অনেকগুলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাভাষীদেরকে কারেন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ফেলা হয়। কারেন লোকগাঁথা অনুসারে, তাদের পূর্বপুরুষেরা এসেছে মঙ্গোলিয়ার গোবি অঞ্চল থেকে। বামার এবং শান জনগোষ্ঠীর পরে কারেন'রা মায়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী। এদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে ব্রিটিশরা তাদের বেশ কিছু সুবিধা দেন।  তারা  দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় কারেনরা জাপানী এবং বার্মিজ ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করায় স্বাধীনতার পর তাদেরকে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিশেষ করে ৮০'র দশকে এর ভয়াবহতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কারেন প্রদেশে এখনো থেমে থেমে যুদ্ধ চলছে। বহু কারেন পালিয়ে গিয়েছে থাইল্যান্ডে। পেশায় মূলত কৃষক এই জাতির লোকেদের নিজস্ব ভাষা আছে এবং মায়ানমারের অন্য অনেক জাতিগোষ্ঠীর মতোই তাদের ধর্মাচারণে অনেক প্রাচীন ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
কাচিন: মায়ানমারের সর্ব উত্তরের কাচিন প্রদেশে এই জাতির লোকেরা বাস করে। অনেকগুলো সিনো তিব্বতীয় ভাষায় তারা কথা বলে। বেশিরভাগ কাচিনই খ্রিস্টান, বাকিরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কাচিনরা তাদের রণকৌশল, কুটির শিল্প এবং বিচিত্র সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।  ৯৬১ সাল থেকে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। কাচিন অঞ্চলে প্রচুর মূল্যবান রত্ন, সোনা এবং বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। তাই সরকারের কাছে এই প্রদেশটির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। 
মন: অনেক পুরোনো একটি গোষ্ঠী।  আদিকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস ছিল মনদের। ১০০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যুদ্ধবাজ খেমার জাতির লোকেরা মনদেরকে ঠেলে থাইল্যান্ড আর মায়ানমারের দক্ষিণ অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়। অদ্যাবধি সেখানেই বাস করে তারা। মায়ানমারে প্রায় ১১ লক্ষ মনের বাস। এরা পশ্চিমা মন বলে পরিচিত। মনদের সাথে বর্মীদের ঐতিহাসিক সংযোগ খুব নিবিঢ়। মন রাজারা দীর্ঘদিন বর্মীদের বিরুদ্ধে নিস্ফলা যুদ্ধ করেছেন বটে, কিন্তু মনদের উন্নত সংস্কৃতি ঠিকই বর্মী রাজদরবারে স্থান করে নিয়েছে। বর্মী ভাষা লেখা হয় মন অক্ষরে।
ওয়া:  ওয়া জনগোষ্ঠী মায়ানমারের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের দুর্গম সব পাহাড়ে বাস করে। ১২০০ শতাব্দীর চীনা ইতিহাসবিদের লেখনীতে ওয়াদের কথা পাওয়া যায়। বিংশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটিশরা ওয়াদের সম্পর্কে আসলেও  উঁচু পাহাড়ে ছাওয়া এই অঞ্চলের দুর্ধর্ষ অধিবাসীদের সাথে লড়াইয়ে নামবার বোকামি করেনি। স্বাধীনতার পর ওয়ারা কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। বেঁধে যায় যুদ্ধ। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি এবং পার্টির। তবে সমাজতন্ত্রের স্বপ্নকে সরিয়ে জায়গাটা দখল করে নেয় মাদক। ওয়া অঞ্চলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ানমারের অংশ হলেও ওয়ারা একরকম স্বাধীনভাবেই থাকে। নিজস্ব সেনাবাহিনী তাদের বিস্তীর্ণ আফিম ক্ষেতগুলোকে সুরক্ষা দেয়। বর্তমানে মায়ানমারে যত ইয়াবা উৎপন্ন হয় তার অর্ধেকই আসে ওয়া অঞ্চলগুলো থেকে। ওয়াদের সাথে ভারতের নাগাদের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। 
বর্মী ভাষা মিয়ানমারের সরকারী ভাষা। বর্মী ভাষাতে মিয়ানমারের প্রায় ৮০% লোক কথা বলেন। এছাড়াও মিয়ানমারে স্থানীয় আরও প্রায় ১০০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে কারেন ভাষারসহ বেশ কিছু উপভাষা (প্রায় ৩০ লক্ষ বক্তা) এবং শান ভাষার উপভাষাগুলি (প্রায় ৩০ লক্ষ বক্তা) উল্লেখযোগ্য। সংখ্যালঘু ভাষাগুলির মধ্যে আরাকানি ভাষা, চিন ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, জিংপো ভাষা, রোহিঙ্গা ভাষা, লু ভাষা এবং পারাউক ভাষা উল্লেখযোগ্য।
 
অতীত ইতিহাস 
মিয়ানমারের ইতিহাস (পূর্বে দেশটি বার্মা নামে পরিচিত ছিল) ১৩,০০০ বছর পূর্বে এই ভূখণ্ডে প্রথম মানব বসতি স্থাপনের পর থেকে আধুনিক মিয়ানমারের সময়কাল পর্যন্ত ব্যাপ্ত। মায়ানমারের সবচেয়ে প্রাচীন অধিবাসি ছিল তিব্বতীয়-বার্মান ভাষাভাষি জনগোষ্ঠি। বৌদ্ধ ধর্মালম্বি এই জনগোষ্ঠি পাইয়ু নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। 
নবম শতকে বামার জনগোষ্ঠি নামে এর একদল মানুষ ইরাবতী উপত্যাকা থেকে এসে এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করে এবং বেগান রাজ্য (১০৪৪-১২৮৭) স্থাপন করে। এই রাজ্য ছিল ইরাবতী এবং এর আশেপাশের অঞ্চলকে একিভূত করে গঠিত একটি স্বাধীন রাজ্য। এই সময়ে বর্মী ভাষা এবং বামার সাংস্কৃতি বিস্তার লাভ করে। ১২৮৭ সালে প্রথম মঙ্গল আগ্রাসনের পর আভা রাজ্য, হান্তাওয়ারি রাজ্য, এবং মারুক ইউ রাজ্য ছিল এই অঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ১৬ শতকে টাউঙ্গু রাজবংশ (১৫১০-১৭৫২) পুনরায় বার্মাকে একিভূত করে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তবে এই সম্রাজ্য ছিল ক্ষনস্থায়ী। পরবর্তী টাউঙ্গু সম্রাটরা কিছু অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা ১৭ এবং ১৮ শতকে বার্মাকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। 
১৮ শতকের দ্বিতীয় অংশে, কনবাউং বংশ (১৭৫২-১৮৮৫) ক্ষমতা দখল করে, এবং টাউঙ্গুদের রাষ্ট্র সংস্কার নীতি অনুসরন করে। তারা আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে এবং বার্মাকে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে স্বাক্ষর রাষ্ট্রে পরিনত করে। এই বংশের শাসনামলে বার্মা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধে জরিয়ে পরে। ১৮২৪-৮৫ সালের এ্যংলো-বর্মী যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের ফল স্বরূপ বার্মায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

ব্রিটিশ উপনিবেশ
১৮২৪ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বার্মায় ব্রিটিশ শাসন কায়েম ছিল৷ ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধের পর থেকে প্রাথমিকভাবে বর্মার কিছু অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও ধীরে ধীরে বর্মার দেশীয় রাজ্যগুলি ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলির একটি হয়ে ওঠে৷ পরে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ বর্মা ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত হয় এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। ব্রিটিশ শাসনকালে এই অঞ্চলটি "ব্রিটিশ বর্মা" নামে পরিচিত ছিলো। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধে জয়লাভ করে বর্মা রাজ্যক্ষেত্রের একাধিক অঞ্চল যেমন, আরাকান রাজ্য (রাখাইন প্রদেশ) এবং টেনাসেরিম বিভাগ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয়৷ ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী দক্ষিণ বর্মার পেগু বা পেগুইয়োমা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল দখল করে এবং সেখানে একটি মুখ্য কমিশনার নিয়োগ করেন৷ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে " ব্রিটিশ বর্মা"কে "ব্রিটিশ ভারত"-এর অন্তর্ভুক্ত করে একটি অভিন্ন একক হিসাবে শাসন পরিচালনা শুরু হয়৷ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারী বর্মা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়৷
 ব্রিটিশরা বার্মায় বেশকিছু স্থায়ী সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকে এবং প্রশাসনিক সংস্কার সাধন করে। এসব সংস্কার বার্মার প্রথাগত কৃষি নির্ভর সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। ব্রিটিশরা বার্মায় বেশকিছু স্থায়ী সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকে এবং প্রশাসনিক সংস্কার সাধন করে। এসব সংস্কার বার্মার প্রথাগত কৃষি নির্ভর সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্রিটিশ শাসন, বার্মার অগণিত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদকে প্রকট করে।


স্বাধীনতার অভিশাপ 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিয়ানমারে জাপানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি। রেঙ্গুন তথা বার্মা ১৯৪২-৪৫ পর্যন্ত সময়ে জাপানিদের দখলে ছিল। জাপানিদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছিল বার্মা ইনডিপেনডেন্ট আর্মি। জাপানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন জেনারেল অং সান এবং বার্মা ইনডিপেনডেন্ট আর্মি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বার্মা থেকে ব্রিটিশ শাসনের উৎখাত। পরে জাপানিদেরও বিতাড়িত করে বার্মাকে স্বাধীন করা। জেনারেল অং সান স্বাধীনতার কয়েক মাস আগে জুলাই ১৯৪৭ সালে কথিত বিরোধী আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন। আততায়ীর হাতে মৃত্যুর আগে অং সান যে কয়টি কাজ করে গিয়েছিলেন তার মধ্যে প্রধান ছিল বার্মার পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং বিবদমান তিনটি গোষ্ঠীর—শান, কারেন ও চিনাদের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসন নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। এসব উপজাতীয় অঞ্চল এবং উপজাতীয়রা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে সহযোগিতায় ছিল, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, স্বাধীন সত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য।
বার্মা স্বাধীন হয়েছিল অং সানের মৃত্যুর পর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত বার্মা চারটি বহুদলীয় নির্বাচন দেখেছে কিন্তু অং সানের সঙ্গে সম্পাদিত তিন প্রধান উপজাতীয়দের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা–অধ্যুষিত আরাকান, যার বর্তমান নাম রাখাইন অঞ্চলও যুক্ত হয়।
১৯৬২ সালের ২ মার্চ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে। সামরিক জান্তার প্রধান ছিলেন নে উইন। রেঙ্গুন নামটি ১৯৮৯ সালে সামরিক শাসকেরা পরিবর্তন করে রাখেন ইয়াঙ্গুন। নভেম্বর ২০০৫ সালে ইয়াঙ্গুন দেশের রাজধানীর মর্যাদা হারায়। বর্তমানে বার্মা বা মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে অত্যন্ত পরিকল্পিত নতুন শহর নেপিডোতে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত বার্মা চারটি বহুদলীয় নির্বাচন দেখেছে কিন্তু অং সানের সঙ্গে সম্পাদিত তিন প্রধান উপজাতীয়দের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য অঞ্চলে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা–অধ্যুষিত আরাকান, যার বর্তমান নাম রাখাইন অঞ্চলও যুক্ত হয়। তারা ২৭ মে ১৯৯০ সালে প্রথম নির্বাচন দেয়। এ নির্বাচনে অং সান সু চি এর দল "ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি" ৪৯২ টি আসনের মধ্যে ৩৯২টি আসন পায়। কিন্তু নির্বাচনী আইনের মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়।  কিন্তু ২০১৬  অং  সাং সূচির দল ক্ষমতায় আসে এবং ২০২১ পর্যন্ত শাসন করেন। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে।  এই সময় গণতন্ত্রের পথে কিছুটা অগ্রসর হলেও তা ছিল সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত।  কিন্তু এক বৎসর পূর্বে আবারো সামরিক শাসন জারি করে তও রুদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ হতে জাতিগত নিপীড়নের অংশ হিসেবে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে বাংলাদশে ঠেলে দেয়া হয়।  

গোষ্ঠীভিত্তিক সামরিক কর্তৃত্ব 
মিয়ানমার (বার্মা নামেও পরিচিত) ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভুগেছে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী উ নু-এর নির্দেশে সামরিক বাহিনী একটি অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। সামরিক বাহিনী তত্বাবধানে ১৯৬০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর বেসামরিক সরকার নির্বাচিত হয়। কিন্তু দুই বছরেরও কম সময়ে ১৯৬২ সালে সামরিক বাহিনী অভ্যূত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয়। ফলে জেনারেল নে উইনের নেত্রীত্বে মিয়ানমারে ২৬ বছরের দীর্ঘ সামরিক শাসনের সূচনা হয়।  
১৯৯০ সালে একটি অবাধ সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করে। কিন্তু নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নিরঙ্কুশ জনমত হাসিল করে। যদিও সামরিক বাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার জানায় এবং অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করে।
২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনী আরো ২২ বছর ক্ষমতায় থাকে। সামরিক বাহিনীর গণতন্ত্রের রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০০৮ সালে একটি সংবিধান প্রণীত হয়। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে একটি অস্থায়ী গণতান্ত্রিক উত্তরণ শুরু হয়েছিল এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিজয়ী হয়েছিল। যদিও সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সংসদের এক-চতুর্থাংশ আসন আগে থেকেই সামরিক সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছিল।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানটি ৮ নভেম্বর ২০২০-এর সাধারণ নির্বাচনের পরে ঘটেছিল, যেখানে এনএলডি সংসদের ৪৭৬ টি আসনের মধ্যে ৩৯৬ টি আসন জিতেছিল, যা দলটি ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় আরও বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি মাত্র ৩৩ টি আসনে জয়ী হয়েছিল।
১৯৪৮ সাল হতে গত ৭৫ বৎসরের মধ্যে মাত্র ২০ বৎসর  গণতান্ত্রিক শাসন চলেছে।  এর মধ্যে ১৯৬২ হতে কোন না কোন ভাবে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল।  দেশটির বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে কার্যকরী কোন সংলাপ হয়নি; ফলে একটি একক দেশ গোড়ার মূল উপাদান জনগণের মধ্যে কখনোই তৈরি হয় নি।   বরং শাসন কার্যে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর (বর্মী)  একতচ্ছত্র প্রভাব থাকার কারণে এবং তাদের ডিভাইড এন্ড রুল নীতি বাস্তবায়নের জন্য সবগুলো গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চূড়ান্ত হয়েছে।

অপশাসন 
শুরুতে সান প্রদেশের সংখ্যাগুরু খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী লোকজনের সাথে ইংরেজদের সাহায্য করার জন্য বর্মী সম্প্রদায় (স্বাধীন বার্মার ক্ষমতাসীনরা) বিরূপ আচরণ করেছে।  তারা বিদ্রোহ করেছে- তার জের এখনো চলছে।  এরপর কারেনরা বিদ্রোহী হয়ে উঠে; তারপর আরাকানীরা এবং শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা।  মূলত সারা মিয়ানমার আজ ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ দুই ধরণের জনগোষ্ঠীই বিদ্রোহ করে কোন না কোন ভাবে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করছে।  আর দেশটির শাসক সেনাবাহিনী এই সমস্ত বিদ্রোহ দমনের জন্য সারা দেশে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। 
দেশটির জনগণের উপর সেনাবাহিনীর চলমান এই অনন্ত যুদ্ধ সমস্ত মানবিক অধিকার ভুলুন্ঠিত করছে। সরকার এখন জাতিগত উৎখাত অভিযান পরিচালনা করছে। দেশের নতুন  ২০১৮ হতে এক মিলিয়ন এর বেশি রোহিঙ্গাদের দেশটি হতে বের করে দেওয়া হয়েছে।  বিদ্রোহীরা নিজেদের অর্থ সংস্থানের জন্য নানা মাদকের চাষ করছে।  এভাবেই দেশটি গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এর অন্যতম স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

গণতন্ত্রের বাতাস
স্বাধীনতার পর   মাত্র ২০ বৎসর গণতান্ত্রিক শাসন চলেছে। ১৯৪৮ হতে  ১৯৬২ পর্যন্ত  ১৫ বৎসর শাসন কালে চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।  কিন্তু দেশটির জনপ্রিয় নেতা অং সানের মৃত্যু বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে কার্যকর কোন আলোচনা বা চুক্তি হতে পারেনি।  ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নানা দাঙ্গা-হাঙ্গামা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।  সংখ্যাগুরু বর্মীরা নিজেদের হাতে ক্ষমতা সংহত করার কাজে আত্মনিয়োগ করে।  ফলে  ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে  বর্মীদের দ্বারা সামরিক শাসন জারি হয়।  এরপর অং সানের কন্যা অং সাং সুচির নেতৃত্বে ১৯৮৬ হতে গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন শুরু হয়।  শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ এর নির্বাচনে সুচির দল বিজয়ী হলেও তাকে ক্ষমতা পেতে ২০১৬ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।  ২০০৮ সালের নতুন প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাঁচ বৎসর সেনা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সূচি ক্ষমতায় ছিলেন।  এসময় দেশটিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ তৈরী হয়।  কিন্তু ২০২০ এর নির্বাচনের পর ২০২১ এর ১ লা ফেব্রুয়ারী সামরিক বাহিনী আবার সামরিক আইন জারি করে গণতন্ত্রকে বাতিল করে। এভাবেই সব মিলিয়ে ২০ বৎসরের গণতন্ত্র মিয়ানমারকে আরেকটি গণতন্ত্রের আন্দোলনের সাহস যোগাবে তা নিশ্চিত।

জনতার বোধোদয় 
২০২১ এর পুনরায় সামরিক শাসন এই বার্তা দেয় যে, সমগ্র জনগোষ্ঠী যদি নিজেরা একত্রিত হয়ে গণতন্ত্র রক্ষা না করে তাহলে বার বার সামরিক বাহিনী শাসনে আসবে।  তার সাথে এটাও অতি জরুরি যে, সবগুলো গোষ্ঠীর মধ্যে একটি কার্যকরী সংলাপ হওয়া অতি জরুরি।  এর মাধ্যমে একক দেশ হিসেবে টিকে থাকতে ন্যূনতম বোঝাপড়া দরকার।  এটুকু না হলে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে দেশটির অস্তিত্বই আজ হুমকির সম্মুখীন।  সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে একটি কার্যকর চুক্তি এবং তার বাস্তবায়নই দেশটির টিকে থাকার গ্যারান্টি।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী 
বর্মী বাদে বাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রধান শান, কারেন, কাচিন, মন, ওয়া প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী আছে।  বাহিনী আছে আরো কমবেশি ২০ টি গোষ্ঠীর মধ্যে।  এর মধ্যে আরাকান আর্মি ইদানিং জানান দিচ্ছে।  এই বিদ্রোহী গ্রুপগুলো অর্থ সংগ্রহের জন্য মাদকের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে।  ফলে পুরো মিয়ানমার একটি মাদক ট্রায়াঙ্গল এর মধ্যমণি।  নিজ দেশের যুব সমাজের সাথে সারা দেশকে মহা বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার সাথে সাথে বিশ্বকেও অনিরাপদ করে চলেছে। 
বর্মী সামরিক জান্তা এদের দমনের জন্য সারা বৎসর নানা অভিযান পরিচালনা করে।  কিন্তু পাহাড়-পর্বত আর বন-জঙ্গলের সাথে অনিয়মিত ভূপ্রকৃতি বিদ্রোহীদের দমনে প্রতিকূল।  তাইতো এক সময় কারেন বিদ্রোহীদের কথা যেমন শোনা যেত তেমনি এখন আরাকান আর্মির নাম শোনা যাচ্ছে।  আবার নতুন করে বিদ্রোহী হয় উঠছে কোচিনরা।   

জাতিগত নির্মূল অভিযান 
রোহিঙ্গা গণহত্যা বা ২০১৬-১৭  বলতে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের দ্বারা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলমান সামরিক অভিযানকে বুঝানো হয়। এটি ২০১২ সালের অক্টোবরে অজ্ঞাত বিদ্রোহীর দ্বারা বার্মা সীমান্তে হামলার একটি প্রতিক্রিয়া ছিল। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও শিশুহত্যাসহ অত্যধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গা জনগণের ওপর সামরিক অভিযান জাতিসংঘ (যা "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" হিসেবে চিহ্নিত), মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, প্রতিবেশী বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়ার সরকার থেকে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে (যেখানে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে গেছে)। মিয়ানমারের সাবেক সরকার প্রধান, অং সান সু চি, বিশেষ করে তার নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতার জন্য এবং এই সামরিক অপব্যবহার প্রতিরোধে বলতে গেলে কোন কাজ না করার জন্য সমালোচিত হয়েছেন।
মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক জান্তা শুধু রোহিঙ্গা নয়, জাতিগত চীন এবং শান দের উপরও একই কায়দায় অভিযান চালাচ্ছে যেমনটি পুরো গত শতকের  সত্তর আর আশির জুড়ে কারেনদের উপর চালিয়েছিল মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে।  

বেঁচে থাকার লড়াই 
মিয়ানমারের প্রধান বর্মী ছাড়া প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জনগণ প্রবল প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে।  জান্তা সরকার দশম থেকেষোড়শ শতকে বসতি স্থাপনকারী রোহিঙ্গাদেরকে জাতীয়তা বাতিল করেছে। তাদের দেশ থেকে বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে।  ফলে ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে নিজের ভিটামাটি ছেড়ে এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে রিফিউজি ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে।   আরাকানে  বৌদ্ধরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।  কোচিন প্রদেশের খ্রিস্টানদের উপর চলছে অকথ্য নির্যাতন।  শান প্রদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায় রাষ্ট্রীয় দমনের বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহী হয়ে উঠছে;  কারেন অঞ্চলের বিদ্রোহ সময়ের ব্যাপার। 
এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে এবার বিদ্রোহীরা একত্রিত হতে শুরু করেছে।  ফলে সামরিক বাহিনী নানান জায়গায় পরাজিত হচ্ছে।  গত একমাসের মধ্যে (সেপ্টেম্বর ২০২২) অন্তত পাঁচটি সংঘর্ষে বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছে। এমনকি  সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করছে।

বিভক্তিই সমাধান
স্বাধীনতার পর মিয়ানমার এমন ভাবে শাসিত হয়েছে যে, এর সবগুলো জাতিগোষ্ঠী প্রবল প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেছে।  এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মীরা চেষ্টা করলেও যে অনাস্থা আর অবিশ্বাস বিরাজ করছে তাতে কোনোভাবেই কোন সমাধান হবে না।  এখন এটি  একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং এর উদ্যোগ আসতে হবে সংখ্যাগুরু বর্মীদের মধ্যে হতে।  এই প্রক্রিয়া ২০১৬ হতে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা অং সানের কন্যা অং সাং সুচির নেতৃত্বে শুরু হতে পারতো।  হয় সূচি এই কাজটি শুরু করতে পারেন নাই সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের জন্য নয় তিনি শুরু করেন নি।  ঘটনা যাই হোক মিয়ানমারের সেই অমূল্য সুযোগ চলে গেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিভক্তিই এর সমাধান।


 
লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯) ।
ইমেইল: [email protected] 

এই বিভাগের আরো সংবাদ