আজকের শিরোনাম :

কার্যকরী বিরোধী দলের খোঁজে

  আলাউদ্দিন মল্লিক

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২০ | অনলাইন সংস্করণ

আলাউদ্দিন মল্লিক
বিরোধী দলের হারিয়ে যাওয়া 
২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি ক্ষমতায় আসীন হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারির ৬ তারিখে।  একটি সামরিক বাহিনী আর আমলাতন্ত্র এবং  দেশী সুশীল সমাজে আর বিদেশী কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সমর্থনে ২০০৭ সালের ১২ই জানুয়ারি হতে  ২০০৯ সালের জানুয়ারির ৬ তারিখ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এর নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে একটি ভিন্ন ধরণের সরকার পরিচালিত করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতির একটি আমূল আর গুণগত পরিবির্তন - যাতে দেশের দুই দলীয় বৃত্ত ভেঙে ফেলা এবং নতুন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রচলন যেমনটি পাশ্চাত্যে দেখা যায়। তারা মাইনাস টু ফর্মুলার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই প্রধান দলের দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে অবসরে পাঠাতে চেয়েছিলেন।  কিন্তু ২০০৮ সালের ২০ আগস্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রতিবাদের ২১ আগস্ট হতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভ প্রবল হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর রাজনৈতিক এজেন্ডা হতে সরে এসে দ্রুত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিয়ে  নিজেদের সরিয়ে নেয়। 

ক্ষমতার জটিল খেলায় জয়ী হয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমনি শক্তি অর্জন করলেন যে পর পর আরো দুই বার (২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি  এবং ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীত্ব বজায় রেখে) নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাড়ে তেরো বৎসরের বেশি একটানা ক্ষমতায় আছেন। এর মধ্যে তিনি অত্যন্ত সফলভাবে সমস্ত বিরোধিতা দমন করেছেন। রাজনীতির মাঠ এখন বিরোধী দল শুন্য। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে এজেন্ডা নিয়ে দেশের প্রধান দুই দলকে তার প্রধান দুই নেত্রীকে বাদ দিয়ে অকেজো করে নতুন পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক পদ্ধতি আনার জন্য প্রয়াস নিয়েছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই ২০০৯ সাল হতেই সেই প্রয়াসকে মোডিফাই করে রাজনীতি বিরোধী দল শুন্য করার সকল   প্রচেষ্টা নিয়েছেন।  আর প্রশাসন (সামরিক এবং অসামরিক) তাঁর এই কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করেছে তাদের নিজেদের স্বার্থে।  কারণ, তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন- তাদের প্রভাব আরো বাড়বে।  

সাড়ে তেরো বৎসরের একদলীয় শাসন
২০০৯ এর ৬ ই জানুয়ারি হতে আজ ১৮ ই সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সাড়ে তেরো বৎসরের বেশি সময় একদলীয় শাসনের জোয়াল চেপে বসেছে ।  প্রতিদিন এই জোয়াল আরো বেশি শক্ত করে করে চেপে বসছে।  সর্বত্র "এক নেতার এক দেশ" কার্যকরি হচ্ছে। রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে ভিন্ন মত আর বিরোধী মত নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে।  এই সুযোগে সবাই যেন নিজেদের মতের বাইরে হলেই তাকে দমনের জন্য সাধ্যমত রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

এই দীর্ঘ সময়ের একদলীয় শাসন রাজনীতিতে একচেটিয়া আর জবাবদিহিতার অভাব তৈরী করেছে।  এর ফলে প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা আর অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।  জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতি লাগামছাড়া গতি পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দলে এমন কোনো এমপি নেই যার হিসেব বহির্ভুত সম্পদ নেই।  অনেকেই শত কোটি টাকার মালিক।  সরকারী দলের ছোট ছোট নেতাদের অনেকেও কোটি কোটি টাকার মালিক। এরা অসাধু আমলা আর ব্যবসায়ীদের সাথে মালয়েশিয়া আর কানাডায় বেগুমপাড়া তৈরী করেছে টাকা পাচার করে। এর সাথে যোগ হয়েছে ভোটারবিহীন নির্বাচন।  মানুষের মৌলিক সমস্ত অধিকার উন্নয়নের রাজনীতির নামে দমন করা হচ্ছে। সিনিয়র সিটিজেনরা আরেকটি চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ এবং পঁচাত্তরের একদলীয় বাকশালের পদধ্বনির সতর্কতা জানাচ্ছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব সংকট 
১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ ভারতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য কিছু প্রবাসী ব্রিটিশ নাগরিকের উদ্যোগে নেতৃস্থানীয় ভারতীয়দের নিয়ে গড়ে উঠে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এরপর ২০০৬ সালে ঢাকার নবাবদের উদ্যোগে মুসলমানদের জন্য গঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ । এর মধ্যে ১৯২৫ সালে (মতান্তরে ১৯২০) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির গঠিত হয়।  অবশ্য ভারতবর্ষের মূল ধারার রাজনীতি তখন শুধু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আর নিখিল ভারত মুসলিম লীগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল।  এই দল দুটির নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে প্রথমে দুটি দেশে ভারত আর পাকিস্তান গঠিত হয়। এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।  তার পরপরই বাংলাদেশে জাসদের জন্ম।  এরপর ক্রমান্বয়ে শাসনের জন্য শাসক গোষ্ঠী বিএনপি আর জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করেন। এর মধ্যে বামপন্থী কিছু দল গঠিত হয়েছে।  ১৯৮০ এর পর  বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক পরে।  এখন নিবন্ধিত ৩৯ টি সহ ছোট বড় মিলিয়ে  প্রায় ২৫০ টি দল ও গ্রুপ সক্রিয়। 

একটি রাজনৈতিক দল মূলত গড়ে উঠে সময়ের প্রয়োজনে।  রাজনীতিতে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে দলটি আকারে আর প্রভাবে ছোট হতে হতে বিলীন হয়ে যায়।  যেমন- মুসলিম লীগ দলটির নেতৃত্বে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল।  কিন্তু যে পূর্ব বাংলার মুসলিম নবাবদের উদ্যোগে এটি গঠিত হয়েছিল এবং ১৯৪৬ সালে যে জনগণের ভোটে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত হল - এর নেতাদের ভুলের কারণে এই জনগণের আকাঙ্খার বিপরীত কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা দলটি ১৯৫৪ এর নির্বাচনের মাধ্যমে  প্রত্যাখ্যাত হয়।  এরপর নানাভাবে চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু মুসলিম লীগকে আর কার্যকরী করা যায়নি।  পাকিস্তানে যে মুসলিম লীগ ২০২২ সালের এই সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় দেখা যাচ্ছে এটি সেনাশাসক আইয়ুব খানের হাতে গড়া "কনভেনশন মুসলিম লীগ"।  ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কথা এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত; ভারতের রাজনীতিতে এটির প্রয়োজনও যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজন আছে কিনা - এটি এই সময়ের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।  এমনকি প্রধান বিরোধী দলটি কি ক্রমান্বয়ে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে - এটিও গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে গুরুত্ব পাচ্ছে।  আর ক্ষমতাসীন দলটির কার্যক্রম যেভাবে প্রশাসন কেন্দ্রিক হয়ে গেছে তাতে এর ভবিষ্যৎটাই বা কি - এটাও মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। 
চলমান রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ ক্রমশ এটাই স্পষ্ট করছে যে, নতুন প্রযুক্তি বিশ্বে একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।  এর সাথে যুক্ত হয়েছে করোনার মত মহামারী - যার মোকাবেলায় বিশ্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তার উপর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মোট  রাশিয়ার ইউক্রেনের উপর আক্রমণ বিশ্বে একটি বিশ্ব যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করেছে।  এই নতুন বিশ্ব বাস্তবতা নতুন নতুন  ভূ-কৌশলগত সমীকরণ তৈরী করে চলেছে। আর এখানটাতেই রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ - তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়।  এই সমস্ত বিষয়ে এই দলগুলোর কোনো প্রস্তুতি নেই।  ফলে এদের হাতে - তা সে হোক বর্তমান ক্ষমতাসীন দল অথবা যে কোন বিরোধী দল যারা মূলত পরিবার কেন্দ্রিক অতীতমুখী এবং রাজনৈতিক সস্তা বুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ  - দেশ এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ আর  নিরাপদ নেই।

ক্ষমতায় যাওয়াই একমাত্র কর্মসূচি 
রাজনৈতিক দলগুলোর দৃশ্যমান কোনো জনহিতকর কর্মসূচি নেই।  কিছু অতি উচ্চারিত স্লোগান আর আপাত জনপ্রিয় কিন্তু বাস্তবায়নযোগ্য নয় এমন কথামালা দিয়ে সাজিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে যেন তেন প্রকারে ক্ষমতার অংশ হওয়াই লক্ষ্য।  ক্ষমতাসীনদের কিছুটা লিখিত কর্মসূচি যে তারা বাস্তবায়ন করবেন না - এটা যেমন জনগণের কাছে স্পষ্ট; তেমনি প্রধান বিরোধী দোল সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিও যে শুধু কথার কথা - সেটাও জনগণ ভালোই জানেন।  তাই ক্ষমতা সর্বস্ব এই দলগুলো জনগণের মনে কোন রেখাপাত করতে পারছে না। 

আমার সোনার হরিণ চাই 
দেশের রাজনীতিতে একটি বড় ভ্রান্তি বিদ্যমান - গণ অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ।  এটি রাজনীতিবিদদের মনোজগতে ভালোভাবেই প্রোথিত।  সমাজের অগ্রসর মেধার যাদের আর্থিক সামর্থ আছে বা নিজেকে জনগণের সেবায় বিলিয়ে দিতে চান - তারাই রাজনীতি করেন। এই সমস্ত বুদ্ধিমান মানুষ কিভাবে গণ অভ্যুত্থানের রূপকথায় বিশ্বাস করেন - এটিও একটি কোটি টাকার প্রশ্ন।  কারণ এই ভূখণ্ডে প্রশাসনিক অথবা সামরিক এই দুই ক্ষমতার স্তম্ভ এর মধ্যে ন্যূনতম একটি কোনো গণ অভ্যুত্থানের পক্ষ না নেয়া পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি।  

ভাষা আন্দোলন হতে প্রতিটি গণ অভ্যুত্থান ব্যাখ্যা করলে এই সত্যটি পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলন সফল হয় পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ার পর।  তখন নতুন পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র ততটা জেঁকে বসেনি; আর সংখ্যা গরিষ্ঠ পূর্ব বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী ছিল না।  ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াহিয়া খান কর্তৃক কোনো সমর্থন পান নি - বরং  ইয়াহিয়া সুযোগটিকে নিজের ক্ষমতা আরোহনের জন্য ব্যবহার করেন। এরপর ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থান মূলত তৎকালীন সেনাপ্রধান নূর উদ্দিনের এরশাদকে সমর্থন না করার কারণে ঘটে।  ১৯৯৬ সালে বেসামরিক আমলারা তাদের অবস্থান প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিয়ে যান। 

আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ - গণ অভ্যুত্থান এর পর ক্ষমতায় কারা গিয়েছেন? ১৯৫৪ এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী হলেও মাত্র দুই বৎসরের মাথায় ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৬ সালে ক্ষমতা পুরোপুরি নিয়ে নেন যা ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন করে আইয়ুব খান দশ বৎসরের জন্য  কুক্ষিগত করেন। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান  ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতাসীন করে।  ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের পর বেশির ভাগ মানুষের  ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে - কিন্তু তা হয়নি - ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি।  বিজ্ঞরা মনে করেন, আমলাতন্ত্র (বেসামরিক এবং সামরিক) এবং নিয়ামক বিদেশি শক্তির সাথে   আওয়ামী লীগের আপস-আলোচনা সফল হয়নি যা অন্য দল বিএনপি সফলতার সাথে করেছিল। 

ফলে এটি পরিষ্কার যে, শুধু জনগণের অংশগ্রহণে   গণ অভ্যুত্থান করে বাস্তবে এই ভূখণ্ডে ক্ষমতা পাওয়া যাবে না।  তাই গণ অভ্যুত্থান এর গালগল্প বিশ্বাস না করে ক্ষমতা কাঠামো বুঝে রাজনৈতিক চর্চা করার দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার।

অনভিজ্ঞ বাঘ শিকারী 
শিকারী প্রাণী বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা, কালো বাঘ, প্যান্থার প্রভৃতি) শিকার একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে।  শিকারী সতর্ক না থাকলে নিজেই বিপদে পড়তে পারেন - হারাতে পারেন অমূল্য প্রাণ।  আর শিকারী যদি অনভিজ্ঞ হন তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেই শিকার হয়ে যেতে পারেন।  রাজনীতি এমনি এক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার।  

ক্ষমতা কাঠামোর বলি 
রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা মিত্র বলে কিছু নেই।  আরেকটি বিষয়কে অনেকেই অনৈতিক বলে মনে করেন সেটি হল - রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। মানব ইতিহাস এই সিদ্ধান্তের সাথে পুরোপুরি একমত। যদি মধ্যযুগে ভারতের মোঘল শাসনকে দেখি তাহলে বৈরাম খাঁর নামটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান নিয়ে আছে।  আকবরের এই অভিভাবক না থাকলে ভারতে এই বংশ স্থায়িত্ব পেত কিনা সন্দেহ।  আকবর নিজেও তা মানতেন।  কিন্তু ক্ষমতা কাঠামোর জন্য তাকে বলি হতে হয়েছিল।  যদিও মক্কায় হজ্জ্ব করতে পাঠানোর কথা বলা হয় কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায়নি।  সিন্ধু বিজয়ী মোহাম্মদ বিন কাসেমকে মাত্র ২২ বৎসর বয়সে একই পরিণতি বরণ করতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত জন যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে কার্যরত সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের আপত্তির কারণে বলি হলেন।  তাকে অবশ্য মেরে ফেলা হয়নি; কিন্তু প্রথমে মন্ত্রিত্ব এবং পরে এমপি হারালেন।

চাই সংশপ্তক
রাজনীতিতে চাই নির্ভীক, জয়লাভে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ, মরণপণ লড়াকু এবং পরাজয় জেনেও যে হাল ছাড়ে না এমন কর্মী । এই কর্মীরা তার নেতার নেতৃত্বে  দিয়ে জনগণের মনকে জিতে নিবেন।  ভীতুদের সাহস দিয়ে রাজপথে নিয়ে আসবে।  নেতার দেখানো পথে আপামর জনগণকে নিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরো একবার গণ অভ্যুত্থান  সৃষ্টি করবে।

দরকার রাজনৈতিক সব্যসাচী 
আধুনিক বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক নানা সমীকরণ বুঝতে সক্ষম নেতার দরকার।  যিনি তাঁর অমিত সাহস আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার দ্বারা গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য  হবেন।  তিনি হবেন জনগণের আস্থার প্রতীক।  এই রকম একজন সব্যসাচী নেতার অপেক্ষায় সারা জাতি।

দরকার একজন  চাণক্যের 
চাণক্য  বা কৌটিল্য বা চানক্যসেন বিষ্ণুগুপ্ত (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দ) একজন প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও রাজ-উপদেষ্টা এবং অর্থশাস্ত্র নামক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন। চাণক্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে প্রাচীন ভারতের একজন দিকপাল ছিলেন এবং তার তত্ত্বগুলি চিরায়ত অর্থনীতির বিকাশ লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। প্রাচীন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক চাণক্য পরবর্তীকালে মৌর্য্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের উত্থানে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন। চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ও তার পুত্র বিন্দুসারের রাজ-উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তার পাণ্ডিত্যের জন্য চাণক্যকে কোনো কোনো বিজ্ঞজন ভারতের মেকিয়াভেলি বলা হয়। যদিও মেকিয়াভেলির চাইতে চাণক্য একটি রাষ্ট্রের সার্বিক বিষয়ে বেশি আলোচনা করেছেন। তিনি তাঁর রচনার স্বার্থক বাস্তবায়নকারী। 

প্রাচীন ভারতে রাজনীতি বিমুখ বহু ভাগে বিভক্ত এক বিশাল জনগোষ্ঠীর উপর চাণক্য যেভাবে তাঁর নীতি কার্যকরী করে বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার বিকাশ ঘটিয়ে প্রবল ক্ষমতাশালী গ্রিকদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছিলেন তা একটি অত্যাশ্চর্য প্রতিভার প্রমান দেয়।  বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে এক দলীয় শাসন কায়েম হয়েছে, যেখানে কার্যত কোনো বিরোধীদল পাওয়া যাচ্ছে না।  সবাই অনুভব করছে পরিবর্তনের - কিন্তু পথ খুঁজে পাচ্ছে না। বহুধা বিভক্ত এই দেশের গণমানুষের জন্য তাই কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।  তাই এখান হতে উত্তরণের জন্য একজন চাণক্য বুদ্ধির মানুষের খুবই দরকার।  


লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯)।
ইমেইল: [email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ