পঁচাত্তরের হাতিয়ার আর গর্জে উঠতে দেওয়া যায় না

  সারোয়ার কবীর

১৩ আগস্ট ২০২২, ১২:১৬ | অনলাইন সংস্করণ

বৈশ্বিক অতিমারি করোনার ধকলে সীমিত পরিসরে হলেও বাঙালি জাতি যথাযথ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করে। করোনা অতিমারিকে সফলভাবে মোকাবেলা করে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ যখন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কায়েম, অর্থাৎ একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গড়ার অভিযাত্রায় ধাবিত তখনই দেখা দিয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বে অবরোধ-পাল্টা অবরোধের ফলে অর্থনৈতিক মন্দার মতো বৈশ্বিক সংকট। বিশ্বায়নের এই যুগে এই সংকটের বাইরে আমরা নই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি সংকট ইত্যাদি মোকাবেলায় বাধ্য হয়ে সরকারকে অর্থনৈতিক সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। আর এই অবস্থাকে পুঁজি করে একটি মহল মাঠে নেমেছে পানি ঘোলা করে মাছ শিকারে। এমন এক প্রেক্ষাপটে এবার জাতির সামনে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সমাগত। জাতীয় শোক দিবসের কারণেই আগস্ট মাসকে শোকের মাস বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অতীতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে যারা ইতিহাসের চাকাকে পিছনের দিকে ঘোরাতে চেয়েছিল সেই অপশক্তি খোলস পাল্টে এই শোকের মাসেও নানা অজুহাতে দেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করার অপতৎপরতায় মেতেছে। এমন কী এই অপশক্তি সম্প্রতি ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ শ্লোগান দেওয়ার ধৃষ্টতাও প্রদর্শন করে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, অপশক্তি সম্পর্কে জনগণকে শুধু সচেতন নয়, সংগঠিত করেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। প্রয়োজনে দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবেÑ যাতে ভবিষ্যতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, এবার শোকের মাসে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে যে অপশক্তি তাদের পুরোভাগে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ার জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দিন যতই যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হয়ে ওঠছে। এই দলটি ক্ষমতা থাকার সময়ে সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূলনীতিকে শুধু ছাটাই করেনি, তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নামে পাকিস্তানের অনুগত এক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলারও অপচেষ্টা চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দেওয়া থেকে শুরু করে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করে তাদেরকে মন্ত্রী-এমপি বানানোসহ নানা অপকর্মের নজির রেখেছে। জিয়া ও তার সহযোগীদের বড় অপরাধ হলো, দেশের প্রচলিত আইনে যাতে জাতির পিতার হত্যার বিচার না হয়, সেজন্য ইমডেনিটি অ্যাক্ট করে খুনিদের বিচারের উর্ধ্বে রাখার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার তাদেরকে বিদেশস্থ দূতাবাসে চাকরি এবং দেশে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দল গঠনের মাধ্যমে রাজনীতি করার সুযোগ এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি পর্যন্ত করেছিল। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ এবং পরবর্তীকালে যথাক্রমে সেক্টর ও বিগ্রেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আসলে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট। পাকিস্তান সেনাবাহিনী গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করার সূত্রে পাকিস্তানি সেনানায়কদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যোগাযোগ রেখেছিলেন তার প্রমাণ দেরিতে হলেও বাঙালি জাতির হাতে এসেছে। ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় যেমন পাকিস্তান সেনাবাহিনী শেল্টারে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিরাপদে ছিল, তেমনই জিয়াও বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বকে বিপথগামী ও ব্যর্থ করার জন্য সক্রিয় ছিলেন। যে কারণে তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। জিয়া কখনো মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য সেক্টর ও বিগ্রেড কমান্ডারদের মতো সন্মুখ সমরে অবতীর্ণ হননি, বরং রণক্ষেত্রের পশ্চাতে নিরাপদ অবস্থানে থেকে তিনি তাঁর ভূমিকা পালন করেছেন। আর তাঁর এই ভূমিকায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট ছিল, তার প্রমাণ জিয়াকে লেখা এক পাকিস্তানি জেনারেলের চিঠিতে প্রতিফলিত হয়েছে। জিয়া রাজনৈতিক উত্তরসূরিরা তাঁকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ কিংবা ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বলে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে যখন ইপিআর ওয়্যারলেসসহ বিভিন্ন সূত্রে ছড়িয়ে দেন, তখনো তৎকালীন মেজর জিয়া পাকিস্তানিদের পক্ষে ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে যান। কিন্তু স্বাধীনতাকামী বাঙালি সেনা ও ছাত্র-জনতার বাধার মুখে ফিরে আসেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার পক্ষে যোগ দিতে বাধ্য হন। পরে বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। বেতার কেন্দ্রের প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে জিয়া যদি তখন ওই ঘোষণা না দিতেন, তাহলে বিদ্রোহী বাঙালি সেনারা তাকে ব্রাশ ফায়ার করে উড়িয়ে দিতো। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা উচিত, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং কারাবরনের মাধ্যমে তিনি ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছিলেন। কারো হঠাৎ করে একদিনের ঘোষণার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা কিংবা স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় থাকতে রাজাকার-আলবদরসহ স্বাধীনতা বিরোধী এবং কিছু সুবিধালোভী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিএনপি নামের যে রাজনৈতিক দলটি গড়েছেন তারা বরাবরই হীন রাজনৈতিক স্বার্থে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনীতির নামে মিথ্যাচার করে আসছে। তাদের মিথ্যাচারের মাত্রা এতটাই ছিল যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা এই মর্মে অপপ্রচার চালাতো, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্ভিক্ষ লাগবে, না খেয়ে লাখ লাখ মারা যাবে, বাংলাদেশ ভারতের অংশ হবে কিংবা মসজিদে আজানের বদলে উলুধ্বনি শোনা যাবে।’ কিন্তু কালের পরিক্রমায় তাদের মিথ্যাচার শুধুমাত্র ভাঙ্গা রেকর্ডে পরিণত হয়নি, রাজনৈতিক দিক থেকেও তারা অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। তবু মিথ্যাচারের রাজনীতি ছেড়ে উঠতে পারেনি। তাদের মিথ্যাচারের রাজনীতিতে যিনি এখন রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন সেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আরাম আয়াসে দিন কাটানো বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ বলতেও দ্বিধা করেননি। রাজনীতির নামে বিএনপির মিথ্যাচার কোন পর্যাযে ঠেকেছে, সেটা আঁচ করা যায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মোকাবেলায় সরকার যখন কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে তখন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দলের আন্দোলন ঠেকানোর জন্যই সরকার করোনার অজুহাতে বিধি-নিষেধ দিয়েছে।’ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এহেন বক্তব্য প্রদানের পরই জানা গেল, মির্জা সাহেব সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত।

রাজনীতির নামে সত্যের মাথা খেয়ে বিএনপি যে মিথ্যাচার চালিয়ে দেশে অস্থিতিশলি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে, তা নিঃসন্দেহে নেতিবাচক। যে কারণে তাদের আহ্বানে কিংবা বিভিন্ন কর্মসূচিতে তেমন জনসমর্থন দেখা যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট গন্ডিতে নিয়মিত সভা-সমাবেশ চালিয়ে গেলেও রাজনীতির মাঠে তারা কোনঠাসা। তবু নানা অজুহাতে- বিশেষ করে ঘটনাচক্রে ভোলায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় নিতে তাদের দুই কর্মীকে পুঁজি জাতীয় শোক দিবসের প্রাক্কালে মুল দলসহ সহযোগী সংগঠনগুলো যেভাবে মাঠ গরমের চেষ্টা চালাচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। যদিও সচেতন নাগরিক মহল মনে করে, যারা জাতীয় শোক দিবসে বিশাল বিশাল কেক কেটে দলীয় নেত্রীর ভুয়া জন্মদিন পালন করে, তাদের পক্ষে এটা নতুন কিছু নয়। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন এই অভিযোগ করেন তখন দেখা যায়, বিএনপি তার প্রতিবাদ করে বলছে, সরকার ইতিহাস বিকৃতি করছে, জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত নয়। তবে মিথ্যাচারের রাজনীতিতে অভ্যস্ত বিএনপি নানা কৌশলে ও কথার মারপ্যাঁচে জিয়াকে ‘জাতীয় বীর’ বানানোর চেষ্টা করুক না কেন, ইতিহাস কিন্তু তার আপন গতিতে চলে। জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে এবং অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজকে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের এজেন্ট হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন, তেমনি ইতিহাসের পাতায় একজন খলনায়ক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। জিয়া খুনিদের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন যুগিয়েছেন, ১৫ আগস্টে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকা-ের পর খুনিদের অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গের দায় থেকে তাদের রক্ষা করেছেন, পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিদেশের মিশন পুনর্বাসিত করে যে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছেন, তার জন্যই তাঁকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মতোই ইতহাসের আস্তাকুঁড়ে ঠাই নিতে হবে। বিএনপি নেতারা তাকে যতই বীর বানানোর চেষ্টা করুক না কেন, শাক দিয়ে কখনো মাছ ঢাকা যায় না, তার প্রমাণ জাতির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। অথচ একসময় জিয়াউর রহমানের সরকার বঙ্গবন্ধুর নামাধাম বাংলার মাটি থেকে মুছে ফেলারও ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধু একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীতই হয়নি, সেই সঙ্গে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ও করেছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ যখন একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই সারা বিশ্বে করোনা অতিমারি এবং এই অতিমারির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ধাক্কা এসে লাগে। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য বিশ্বে অবরোধ-পাল্টা অবরোধ চলছে, তাতে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি ও খাদ্য সংকটসহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। বিশ্বায়নের যুগে এর বাইরে বাংলাদেশ নয়। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের অগ্রগতিতে এর প্রভাব পড়েছে। যে কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হয়েছে। সারা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির মাত্রা বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে শ্রীলংকা যেখানে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সতর্কভাবে সমস্যা মোকাবেলা করছে। আর এই সমস্যার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ক্রীড়ানক হিসেবে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা দেশকে অস্থিতিশীল করার মিশনে নেমেছে। এ নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছে। এই ষড়যন্ত্রের প্রধান টার্গেট হলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবতকালের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হত্যা করতেও চাইছে। এর আগেও বঙ্গবন্ধুর মতোই তাকে হত্যা করার অপচেষ্টা বার বার হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হলো, ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা। আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতা-কর্মী সেই হামলায় প্রাণ হারালেও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই হামলার নেপথ্যে ছিলেন হালে বিএনপির লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াপুত্র তারেক রহমান। গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। একজন অপরাধী হয়েও তিনি লন্ডনে বসে দিব্যি রাজনীতি করে চলেছেন। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে বিএনপিকে পরিচালনা করছেন। একজন দাগী অপরাধী নেতৃত্বে বিএনপি এখন গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না জুড়ে দিয়ে আগামী নির্বাচনকে বানচাল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতা থাকার সময়ে শুধু ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার মতো নৃশংস হত্যাকাণ্ডই নয়, তারেক রহমান ঢাকার বনানীতে ‘হাওয়া ভবন’ নামে সরকারের সমান্তরালে এমন একটি অবৈধ ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন, যেখান থেকে দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ নানা অপকর্ম বা বেআইনি কর্মকাণ্ড অবাধে পরিচালিত হতো। এমন কী বিদেশ থেকে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য অবৈধপথে অস্ত্র আমাদানিসহ তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করে পাকিস্তানের রণ কৌশলের স্বার্থে বাংলাদেশ একটি ‘বাফার স্টেট’-এ পরিণত করার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ নেওয়ার মতো রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধও করা হতো। সেই তারেক রহমানের নির্দেশে বর্তমানে অপশক্তি- বিশেষ করে বিএনপি নানা ইস্যুতে আন্দোলনের অজুহাতে দেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। স্থিতিশলিতা বিনষ্ট বা অরাজকতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়বে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আর থাকবে না। সেই মতলবে জিয়া-তারেকের অনুসারীরা ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ শ্লোগান দেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এই শ্লোগানের অর্থ কী হতে পারে সেটা দেশের সচেতন নাগরিকমহলকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বর্তমান সরকার দৃঢ় এবং সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করলে এবং জনগণ সচেতন ও সংগটিত থাকলে আর যাই হোক, পঁচাত্তরের হাতিয়ার আর গর্জে উঠার সুযোগ পাবে না। বাংলাদেশও শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি বরন করবে না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে- বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার লক্ষ্যেই পঁচাত্তরের হাতিয়ারকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট

এই বিভাগের আরো সংবাদ