আজকের শিরোনাম :

আর কত? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে

  দেবাহুতি চক্রবর্তী

২৭ জুন ২০২২, ১৭:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

দেবাহুতি চক্রবর্তী
ক'দিন পুরো দেশ 'স্বপ্নযাত্রা  ও স্বপ্নজয়'-- নিয়ে উচ্ছ্বাসে আনন্দে মাতোয়ারা ছিল।  সব ষড়যন্ত্র, প্রতিবন্ধকতা ছিন্ন করে আপনার নেতৃত্বে, আপনার বিচক্ষণতায় পদ্মাসেতু আজ বাস্তব।  আপনার উদ্দেশে স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান আপনি শুনেছেন, হৃদয়ে অনুভব করেছেন। বাংলাদেশের জনগণকে স্যালুট দিয়েছেন।এই মাহেন্দ্রক্ষণের সৌন্দর্য ও আনন্দ মলিন হোক কখনো চাই নি। আমরা জানি এবং বুঝি দেশের সর্বত্র সবকিছু অনায়াসে চলতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই চলে না। সাফল্য - ব্যর্থতা, ভাঙা - গড়া, আনন্দ - বিষাদ মিলিয়েই মানুষের ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন চলে। এটাই নিয়ম। আমরা ব্যতিক্রম টা নিয়ে কথা কথান্তর চালাতে পারি। কিন্তু রাষ্ট্রের ওপর আস্থা হারাই না।

তবে অনিয়ম - অন্যায় যখন দিনের পর দিন নিয়ম আর ন্যায্যতা পায় তখন ভাবতেই হয়। প্রশ্ন তুলতেই হয়। সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে সে সব প্রশ্ন শোনার, উত্তর দেওয়ার। কিন্তু নির্দিষ্ট অঙ্গগুলো যখন নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকে, তখন সরাসরি আপনার শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। এদেশে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যে আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া প্রতিকার সম্ভব হয়নি। 
এখন তাই ভূমিকা রেখে সরাসরি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

২৭ জুনের খবর শিক্ষার্থীর এলোপাথাড়ি ক্রিকেট স্ট্যাম্পের আঘাতে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এণ্ড কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকার (৩৫) আহত ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজে মারা গেছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর নাম খবরে আসেনি। সনাক্তকরণ স্বত্বেও তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানা যায় নি। 

২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জর সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রকাশ্যে কান ধরে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে উঠবস করান। এই সংক্রান্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট মহামান্য হাইকোর্টে জমা হয়। সেটা ফ্রিজিং অবস্থায় আছে। আর কোন খবর এই বিষয়ে জনগণ পায় নি। 

কদিনের কথা!  বিক্রমপুরের বীর বিক্রমী ছাত্র জনতার ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ১৯ দিন কারাগারে থাকলেন। এখন সব লজ্জা অপমান বিসর্জন দিয়ে বহাল তবিয়তে পেটের দায় মেটাচ্ছেন।  অপরাধীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হলো তা দৃশ্যমান নয়। 

কদিন আগে বাগেরহাটে এক হিন্দু মেয়ে শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তেজনায় তাকে থানায় নেওয়া হয়। আর কোনো খবর জানা যায় নি। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় সরকার ও আর একজন সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ বিচারাধীন। তাদের বক্তব্য সোনা যায় নি। হাতে -পায়ে ধরে পার পেলে বর্তে যাবেন। 

একজন কিশোর বয়সের হিন্দু ছাত্র রাহুলের ফেসবুক স্ট্যাটাস কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সহায়তায় নড়াইলের মীর্জাপুর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ও রাহুলকে জুতার মালা পড়িয়ে কারাগারে নেওয়া হয়। এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে উন্মত্ত জনতা আর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তা। হিন্দু - মুসলিম নির্বিশেষে কোনো সচেতন মানুষ এই দৃশ্যে মানসিক অসুস্থ না হয়ে পারেননি। ফেসবুকে মুসলিমরাই অধিকাংশ ঘটনার প্রতিবাদে পোস্ট দিয়েছেন। 

কিন্তু ধর্মীয় সচেতনতার অনুভূতি অতীতের সকল রেকর্ড এখন ছাড়িয়ে গেছে। সব সরিষার মধ্যেই ভূত। দেশের বিভিন্ন কারাগারে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা উল্লেখযোগ্য হিন্দুরা আটকা রয়েছে, বিচারাধীন রয়েছে। 

ভারতের নূপুর শর্মার বক্তব্য বা সরকারের হিন্দুত্ববাদী উগ্রবাদ অবশ্যই নিন্দনীয় । আরব বিশ্বের এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া কতটা ধর্মীয় অনুভূতির, কতটা বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রশ্নাধীন। এখানে আঘাতপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের যা কিছু বলার ও প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। কিন্তু কারণে অকারণে অমুসলিমদের আঘাত করার অধিকার সংবিধান সমর্থন করে না। সচেতন প্রগতিশীল বিবেকবান চেতন সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় সমর্থন করে না। 

আমি ব্যক্তিজীবনে মানব ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মানি না। কিন্তু একটা ভীরু মেরুদণ্ডহীন আজীবন উদ্বাস্তু কোনো সম্প্রদায়ের ওপর এই আঘাতে কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাই। 

ধর্ম ও সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব বাংলাদেশে একদিনে হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক জগত দিন দিন অন্ধকারে ডুবছে। 

মনজুরুল হক সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পোস্টে বলেছেন, 

১) আইন করে হিন্দুদের শিক্ষক হওয়া নিষিদ্ধ করুন।
২) ধর্মপ্রাণ মুসলিম বাদে সবার ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জানি না আমার এই লেখা কেউ প্রকাশ করবে কীনা!  জানি না, আপনি এই লেখা দেখার সুযোগ পাবেন কী না!  জানি না, এই লেখার কারণে কারো অনুভূতি আহত করার অপরাধে আমিও অভিযুক্ত হবো কীনা! বার্ধক্য ছোঁয়া বয়সে শরীরে ক্যান্সারের যন্ত্রণা নিয়ে, দেশের এই ক্যান্সারের ক্ষত বয়ে বেড়াতে এমনিতেই পারছি না। 

বিশ্বাস করতে চাই, আপনার প্রত্যয়দৃপ্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ শিক্ষক অবমাননার নিয়ত দায় থেকে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে পারে। 

 

লেখক : সম্পাদক, আন্তর্জাতিক উপপরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ