আজকের শিরোনাম :

মুসলমানদের ছাড়া বিশ্ব শান্তি কি সম্ভব?

  আলাউদ্দিন মল্লিক

১৫ মে ২০২২, ১১:১৭ | অনলাইন সংস্করণ

আলাউদ্দিন মল্লিক
বিশ্ব মুসলমানদের বর্তমান ভাবমূর্তি  
আজ মুসলিমদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলিতে যে অভিযোগ উঠছে তার দায় মুসলমানরা এড়াতে পারেনা৷ কারণ সারা বিশ্বে মুসলিম জঙ্গিরা যা করছে,  একটা বিরাট অংশ মুসলমান তাতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ‘সাপোর্ট' দিচ্ছে ৷ 

মুসলিম জঙ্গিদের কয়েকটি কর্ম:
মালিতে ধ্বংসলীলা: ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা।  এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷

সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি: শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷

ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার: ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস ও অন্যান্য মুসলিম জঙ্গিরা  অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷ 

আয়ের উৎস: সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷

আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা: আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷

আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ: মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷

গির্জায় হামলা: ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ 

ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷

বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা: বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷

২০২২ সালে চীন রাশিয়া আমেরিকা 
২০২২ সাল বিশ্বের জন্য সবচেয়ে ঘটনাবহুল বছর হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ বছরটি এমন এক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এসেছে যখন পৃথিবীতে নতুন এক ঠাণ্ডা লড়াইয়ের মেরুকরণ চলছে। তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে চীন। ইউক্রেন নিয়ে গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০২২ হতে চলছে একতরফা রাশিয়ান আগ্রাসন।  তাইওয়ানকে নিয়ে চীন আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে পারে যেকোন সময়।  ধরে নেয়া যেতে পারে এই দু’টি যুদ্ধক্ষেত্রেই হতে পারে ছায়াযুদ্ধ। অর্থাৎ যুদ্ধ হবে যুক্তরাষ্ট্র চীন রাশিয়ার নিজস্ব ভূমির বাইরে। তবে যেভাবে এই যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে তাতে এটি একটি সর্বব্যাপী লড়াইয়ে রূপ নিতে পারে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি: এ লড়াইকে অনেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবেও চিহ্নিত করতে চাইছেন। আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানে হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা সেটি ভেঙে পড়া। চলমান এই বৈশ্বিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দু’টি দিকই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। জাতিসঙ্ঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংস্থার গঠন ও কার্যধারাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা আবর্তিত। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ব্রেটন উড ব্যবস্থা তথা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফকেন্দ্রিক যে ব্যবস্থা সেটি হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মূলে রয়েছে আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককেন্দ্রিক বৈশ্বিক মুদ্রা ডলার ও ব্রাসেলসকেন্দ্রিক বৈশ্বিক লেনদেন নিজস্ব ব্যবস্থা সুইফট। বলা বাহুল্য, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ব্যবস্থার ওপরই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রাধান্য। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও লোনব্যবস্থায় পশ্চিমাদের রয়েছে একতরফা প্রাধান্য। ডলার, ইউরো ও পাউন্ড হিসাব করা হলে এই তিন মুদ্রায় বিশ্বের ৯০ ভাগ বাণিজ্য লেনদেন হয়। অন্য দিকে সুইফটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেনের হার তার চেয়েও বেশি। 

নবপর্যায়ের স্নায়ুযুদ্ধ: নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘের সংস্কারের রাজনৈতিক বিষয়ের চেয়েও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। একের পর এক অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে আমেরিকানবিরোধী দেশগুলোকে চাপের মুখে ফেলার কারণে বিপদে পড়া যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলো আমেরিকান ডলার, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফট নেটওয়ার্কের বাইরে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করতে শুরু করেছে। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার কারণে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেইজিং। ক্রিমিয়া দখলকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার রাশিয়া যোগ দিয়েছে এই প্রচেষ্টায়।

চীন ও রাশিয়ার আন্তঃবাণিজ্য: চীন ও রাশিয়া এর মধ্যে তাদের আন্তঃবাণিজ্যিক লেনদেন স্থানীয় মুদ্রায় করা শুরু করেছে। এই লেনদেনের জন্য দু’টি দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেন নেটওয়ার্ককে সমন্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ববহ এক উদ্যোগ হলো ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি। চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে এটিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহার ছাড়াও চীন-রাশিয়া ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে পশ্চিমা বলয়বিরোধী দেশগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল বিনিময় মুদ্রা ইউনিট তৈরির উদ্যোগে অংশীদার করতে চাইছে।

বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রা ও লেনদেন ব্যবস্থা: চীন-রাশিয়ার এই বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রা ও লেনদেন ব্যবস্থা আমেরিকান আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার রাশ টেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে আগ্রাসী হয়ে ওঠার পেছনে মূল কারণ এটি বলে মনে করা হচ্ছে। এখন বৈশ্বিক অবস্থা এমন যে, পাশ্চাত্য বলয়ও আগের মতো বৈশ্বিক রাজনীতির দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতে অভিন্ন ইউনিটের মতো ভূমিকা রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার অকাস মিত্র যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া আর কানাডা-নিউজিল্যান্ড যতটা কাছাকাছি ততটা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেখা যাচ্ছে না। এমনটি জার্মানি-ফ্রান্সের মতো ইউরোপের দুই নেতৃস্থানীয় শক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার সাথে বিশেষ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে দেখা যাচ্ছে। ন্যাটো নিরাপত্তা জোটও এখন আগের মতো সংহত অবস্থায় নেই। এর বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। 

উদীয়মান শক্তির চ্যালেঞ্জ: এ অবস্থায় নতুন পর্যায়ের স্নায়ুযুদ্ধ পুরনো স্নায়ুযুদ্ধ থেকে পৃথক রূপ পেতে পারে। নতুন প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা শক্তি ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিচারে চীন-রাশিয়াই শুধু এখন আমেরিকার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এমনটি মনে হয় না। একই সাথে অনেক উদীয়মান শক্তিও সামনে চলে এসেছে যার মধ্যে তুরস্ক, ভারত, ইরান, ব্রাজিল, জাপান, জার্মানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে নতুন বৈশ্বিক স্নায়ুযুদ্ধের আন্তঃসম্পর্ক ভিন্ন হবে বলে মনে হয়। 

নতুন বিশ্ব মেরুকরণ: ২০২২ সালে স্নায়ু সঙ্ঘাতের যে নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে তাতে চীন-রাশিয়াকেন্দ্রিক একটি মেরুকরণ রয়েছে। রাশিয়া অব্যাহতভাবে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তা ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চীন। চীন তার অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা দিয়ে আফ্রো-এশিয়ার ছোট মাঝারি দেশগুলোতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে। এখন সেই প্রভাবকে সংহত করতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও স্থাপনা সৃষ্টিতে জোর দিচ্ছে। ইরানের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত চুক্তির পর সৌদি আরবে যৌথ উদ্যোগে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্প নিচ্ছে চীন। 

পরাজিত মুসলিম বিশ্ব
১৯০১ ক্রিস্টাব্দে শুরু হয়ে ২০১৯ সাল  পর্যন্ত ১১৮ বছরে মাত্র ১২ জন মুসলিম নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে! ৫৭টি মুসলিমপ্রধান দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা বেশি।  অধিকাংশ মুসলিমপ্রধান দেশ সমুহের জাতীয় আয় আসে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে। অর্থাৎ উপরওয়ালা প্রদত্ত রিজিক থেকে! মুসলিমপ্রধান দেশগুলো বাজেটের অর্ধেক টাকা স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের নামে দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দেয়! কিন্তু অমুসলিম দেশসমুহ জাতীয় আয়ের সিংহভাগ এমনকি কোম্পানীগুলোকেও বাধ্যতামূলকভাবে লাভের একটা অংশ বৈজ্ঞানিক গবেষনায় খরচ করতে বাধ্য করে! তাই ইসরায়েলের মত ছোট্ট দেশেও ৯০ হাজারের অধিক পিএইচডি ধারী বসবাস করে। মাত্র দেড় কোটি মানুষ, অথচ এই পর্যন্ত নোবেল পেয়েছে ১৭৯ জন ইহুদি।  প্রতি বৎসর ন্যূনতম ২-৩ জন ইহুদি জ্ঞানী নোবেল পেয়ে থাকেন।   আমরা  গুরুত্ব দিয়েছি খেলা (যেমন ক্রিকেট) আর রাজনীতিকে। তাই মুসলমানদের আইকন ক্রিকেটার এবং অসৎ রাজনীতিবিদরা। মধ্যপ্রাচ্যের ধোনিরা উটের দৌড়, বাজপাখি নিয়ে শিকার আর সূরা-সাকির আমোদে ব্যস্ত।  আজকাল আমাদের দেশের তরুনরা স্বপ্ন দেখে মাশরাফি হওয়ার, শাকিব আল হাসান হওয়ার, শাকিব খান হওয়ার।  জ্ঞানের চর্চা ববাদ দিয়ে .মুসলিমরা আজ শিয়া-সুন্নি, হানাফী-ওয়াহাবীতে বিভক্ত। অথচ ইহুদীদের ৫০ এর অধিক গ্রুপ একত্রিত হয়ে ইসরায়েল নামক  রাষ্ট্রকে অর্থ আর ক্ষমতা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছ। কিন্তু ৫৭টি মুসলিম দেশ কখনোই কোনো বিষয়ে একত্রিত হয় না।  তাই কাশ্মির, ফিলিস্তিন, ইরাক, চেচনিয়াও স্বাধীন হয় না। যখন ইহুদীরা CNN, ESPN, Fox News, Sky News, Times এর মত মিডিয়া গড়তে ব্যস্ত। আমরা তখন পিস টিভি, আল জাজিরা, বন্ধ করতে ব্যস্ত। ইহুদীরা  কাল মার্ক্সস, আইনস্টাইন, বব ডিলান কিংবা রুপার্ট মারডকের মত জ্ঞানীদের বিশ্বব্যাপী আইকন বানাচ্ছে। মুসলমানরা আজ জ্ঞানের রাজ্য এবং গবেষনার রাজ্য থেকে অনেকদুরে। তারা আজ ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বহুভাগে বিভক্ত। তাই জ্ঞানবিমুখ (ইসলামিক জ্ঞান এবং তথ্য-প্রযুক্তিরজ্ঞান উভয়টি) ছিন্নভিন্ন মুসলিম জাতি আজ সংখ্যায় ২০০ কোটি হয়েওপরাজিত। 

ভারসাম্য অবস্থানে মুসলিম বিশ্ব
নতুন যে বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হচ্ছে তাতে যে  বিশেষ বৈশিষ্ট্য  হবে জাতিবাদী স্বার্থের অগ্রাধিকার প্রাপ্তি। আর দ্বিতীয়টি হবে মুসলিম বিশ্বের বিশেষ গুরুত্ব লাভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ৯০-এর দশক পর্যন্ত যে স্নায়ুযুদ্ধ মার্কিন-সোভিয়েত বলয়ে ছিল তার একটি আদর্শবাদী রূপ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ছিল উদার গণতন্ত্রবাদের প্রবক্তা যার অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার ছিল মুক্তবাজার। অন্য দিকে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের মূল হাতিয়ার ছিল সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদ। যার অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল কথা ছিল রাষ্ট্রীক নিয়ন্ত্রণ বা কমান্ড অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। নবপর্যায়ের এই স্নায়ুযুদ্ধে আমেরিকা এখনো উদার গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকারের প্রধান বিষয় রাখলেও রাশিয়া বা চীন কোনোটাই এখন আদর্শবাদকে তাদের পররাষ্ট্র কৌশলে রাখেনি। কমান্ড অর্থনীতি থেকে দু’টি দেশই একপ্রকার সরে এসে বাজার ও ক্ষেত্রবিশেষ মিশ্র অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে। এখন প্রভাব বিস্তারের মূল স্বার্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতিবাদী স্বার্থ ও হিসাব নিকাশ। নতুন এই হিসাবে একসময়ের আমেরিকান বলয়ের অনেক দেশ এখন চীন-রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গণ্ডি পেরিয়ে তা কৌশলগত অবয়বও গ্রহণ করেছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশের ক্ষেত্রে এই দৃষ্টান্ত এর মধ্যে দেখা যায়।

পুরনো স্নায়ুযুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের আলাদা কোনো স্বতন্ত্র ভ‚মিকা আমরা সেভাবে দেখিনি। নতুন স্নায়ুযুদ্ধে এটি প্রবল না হলেও মোটামুটি দেখা যেতে পারে। সম্ভাব্য বৈশ্বিক মেরুকরণে আমেরিকানরা প্রতিপক্ষ চীন ও রাশিয়ার সাথে মুসলিম স্বার্থ যাতে একই সরলরেখায় না এগোতে পারে তার জন্য দু’টি দেশকেই দু’টি গভীর সমস্যায় জড়িয়ে রেখেছে। এর একটি হলো চীনের উইঘুর সমস্যা আর অপরটি রাশিয়ার ককেসাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতার সংগ্রাম।

এই দুই সঙ্কট ছাড়িয়েও মুসলিম দেশগুলোর সাথে চীন, রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংস্কৃতির উন্নয়ন বিবেচনায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরান রাশিয়া ও চীনের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক নির্মাণ করেছে। পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত চলমান আলোচনা ব্যর্থ হলে এই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকবে। ইরান ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে নিজস্ব সমীকরণ গড়ে তুলতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বলয়েই তেহরানের দৃঢ় অবস্থান থাকবে।

অন্য দিকে তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য একমাত্র মুসলিম দেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশটি ইউরোপের সমকক্ষে পৌঁছানো ছাড়াও প্রতিরক্ষা শিল্পে সাম্প্রতিক বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। সেই সাথে দেশটি মধ্যএশিয়া মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিশেষ অর্থনৈতিক ভ‚মিকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। ন্যাটো সদস্য হওয়ার পর তুরস্ক একটি স্বাধীন পররাষ্ট্র কৌশল অনুসরণে সচেষ্ট, যার কারণে চীন ও রাশিয়ার সাথেও তুরস্কের তৈরি হয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। দেশটির বর্তমান এরদোগান সরকারের সাথে বাইডেন প্রশাসনের সৃষ্ট দূরত্ব ও নানা ক্ষেত্রে তুর্কিবিরোধী পদক্ষেপ তুরস্ককে চীন-রাশিয়ার প্রতি আরো নিকটবর্তী করছে।

মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সৌদি আরব মার্কিন প্রশাসনের সাথে সৃষ্ট মতভেদের কারণে চীন ও রাশিয়ার প্রতি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে। সৌদি আরবের কৌশলগত নতুন পর্যটন নগরী নিউম সিটিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে চীন। সৌদি আরবে এখন চীনা শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সৌদিদের বৃত্তি দিয়ে পড়ার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সৌদি আরব চীনে বিনিয়োগও করছে নানা ক্ষেত্রে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত কৌশলগত বন্দর নির্মাণের কাজ চীনকে দেয়ার ক্ষুব্ধ হয় ওয়াশিংটন। পরে এই কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও চীন-রাশিয়ার সাথে আমিরাতের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়ে উঠেছে। লিবিয়ায় রাশিয়া-আমিরাত খলিফা হাফতারের পক্ষে অভিন্ন ভ‚মিকা রেখেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক জনবহুল দেশ মিসর রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র আমদানি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সুয়েজের বিকল্প ক্যানেল খনন ও ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ বাঁধ নিয়ে ইসরাইলি উদ্যোগে ক্ষুব্ধ কায়রো রাশিয়া-চীন বলয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। গৃহসঙ্ঘাতে জর্জরিত সিরিয়া-ইয়েমেনে এমনিতে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বলয়ের গভীর প্রভাব রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে ২০২২ সালে নবপর্যায়ের যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হচ্ছে তাতে শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি বিশেষ বলয় তৈরি হতে পারে। আর এর সামনে থাকতে পারে তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলো। আবার একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-রাশিয়া- দু’পক্ষের কাছে মুসলিম দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়তে পারে। ভ্লাদিমির পুতিনের মহানবী সা:-এর প্রশংসা করা আর উইঘুরে মুসলিমবিরোধী ভ‚মিকার জন্য কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকে প্রত্যাহার করা এবং বাইডেন প্রশাসনের মুসলিমদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রচেষ্টা এরই ইঙ্গিত বলে মনে হয়।

মুসলিম বিশ্বের সম্পদ
বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র:  যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের করা এক তালিকা অনুযায়ী কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র। ম্যাগাজিনটি বলছে, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবাদে ১৭ লাখ জনসংখ্যার দেশটি মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে ধনী দেশ। ২০১৪ সালে কাতারের মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ছিল ৮৮ হাজার ডলার। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪৭ হাজার ৫০০ ডলার জিডিপি নিয়ে ষষ্ঠ এবং কুয়েত ছিল ১৫তম অবস্থানে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক এবং ২০২০ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজনের প্রতিযোগিতাকারী কাতার ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হয়েছে।

উন্নয়নশীল-৮ বা ডি-৮: বাংলাদেশ, মিশর,ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক নিয়ে ডি-৮ গঠিত । মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নয়নশীল আটটি দেশের অর্থনৈতিক জোট ডি-৮এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ১শ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।  এটি ক্রমবর্ধনশীল। মুসলিম অধ্যুষিত এই  আটটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮এর আওতায় বিশাল মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সম্মিলিত উদ্যোগে এ সম্পদ কাজে লাগিয়ে ডি-৮ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

মুসলিম দেশ: পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা ২০০ কোটির বেশি এবং মুসলমান দেশের সংখ্যা ৬৫-এরও অধিক। পৃথিবীতে মোট তেল ও গ্যাসের ৮০ ভাগ, কয়লার ৬০ ভাগ, স্বর্ণের ৬৫ ভাগ, রাবার ও পাটের ৭৫ ভাগ এবং খেজুরের ১০০ ভাগই মুসলমান দেশের। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর মোট দেশের আয়তনের তিনভাগের একভাগ এখনো মুসলমানদের দেশসমূহ। পৃথিবীর মোট ৩ কোটি সৈন্যের এক কোটিই মুসলমান। অমুসলিম বিশ্বের ৮৭ ভাগ বাণিজ্যই মুসলমানের সাথে। অমুসলিম বিশ্ব মুসলমান বিশ্বের  সম্পদ নির্ভর করেই বেঁচে আছে। 

বিশ্বের ২৩ শতাংশ মুসলমান
ভালোবাসা ঘৃণার চেয়ে শক্তিশালী৷ ভালো যুদ্ধ বা খারাপ শান্তি বলে কিছু নেই৷ তাছাড়া বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ মুসলমান৷ তাই তাদের সহযোগিতা ছাড়া কীভাবে বিশ্ব শান্তি সম্ভব?  বিশ্বের ২০০ কোটির বেশি জনগণকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে(ধ্বংস করে) একটি কার্যকরী শান্তির সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্বের ৫৭ টি  মুসলিম দেশকে পুরোপুরি অস্বীকার করে নিয়ে কিভাবে বিশ্ব শান্তি কায়েম করবে -এটি একটি বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।  

বিশ্ব শান্তির জন্য অবশ্যই প্ৰায় প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন মানুষকে বাদ দিয়ে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা কার্যকরী হবে না। তার জন্য দরকার ইসলাম ধর্মকে আমলে নিয়ে তার বিশ্বাসকে সম্মান করে সার্বিক বিশ্লেষণ করা। আর দরকার বৃহত্তর মুসলিম সমাজকে সচেতন করা। তার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সরকার  আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সাথে ধর্মীয় আলেমদের সাথে নিয়ে একত্রিত করা অতি প্রয়োজনীয়।  এটি একটি সময়সাধ্য আর কঠিন কাজ।  তবে যেকোনো দ্রুত কিন্তু অকার্যকরী সমাধান চর্চা করার চাইতে সময়সাধ্য প্রায়োগিক আর কার্যকরী সমাধান বেশি গ্রহণযোগ্য।  

লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯) । 

এই বিভাগের আরো সংবাদ