আজকের শিরোনাম :

এখন পাতা ঝরার ঋতু

  বিধান গোস্বামী

১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

সেই অল্প বয়সে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকার সময় আমার প্রিয় শিক্ষক কাশীনাথ রায় স্যারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা - আমার এ তুচ্ছ জীবনে এক বিশাল প্রাপ্তি।

এককালের তুখোড় ছাত্র, প্রতিভাবান কবি, মনস্বী প্রাবন্ধিক এবং একজন তিমিরবিনাশী শিক্ষক কাশীনাথ রায় হয়ত বাংলাদেশের সমাজে খুব পরিচিত ছিলেন না। কারণ তিনি সবসময় নিজের অসামান্য দীপ্তিকে ঢেকে রেখে অতি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাইতেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বে যে কত বিরল গুণের সমাবেশ ঘটেছিল সেটি খুব ভালো করে জানেন তাঁর ছাত্রছাত্রী, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনেরা। 

তবে সব ছাড়িয়ে, তিনি যে কবিতাক্রান্ত, তাঁর আকুতি থেকে তা আরও পরিষ্কার হয়ে যায় : 
‘কবিতার মতো এ জীবনে আর কেউ দাঁড়ায়নি পাশে।’ 
মধ্যষাটে আবির্ভূত নিভৃতচারী এই কবির বেরিয়েছে মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ। একটি ‘জীবনানন্দ, দেখুন’ (২০০৮) এবং অন্যটি ‘আমি যাহা দিতে পারি’ (২০১২)। তাঁর প্রতিটি কবিতাই স্বদেশ ও জীবনমুখী বাস্তবতার এক একটি টুকরো হিরে। আর তাতে আত্মকথনের সরল বয়ানে হৃদয়বৃত্তির এক চিরন্তন আর্তি স্থায়ী হয়ে আছে। সে কারণেই তাঁর কবিতার উদ্ধৃতি টানার লোভ সামলানো কঠিন :
‘তবুও দিনান্তে আমি বৃক্ষে ধরে রেখেছি ললাট।
জন্মাবধি অবনত এ আমার একমাত্র বিলাস।
জীবন্ত পাতাকে আমি অসম্মান করিনি কখনো।
আমার শিয়রে তাই জেগে থাকে এই অভিলাষ:
বৃক্ষ ভালোবেসে যদি করে থাকি ক্ষুদ্র পুণ্য কোনো
নিষ্ফল আমার নামে নিদ্রিত ছায়ায়
যে-কোনো বৃক্ষের থেকে যে-কোনো একটি পাতা
যেন ঝরে যায়।’ 
— কাশীনাথ রায়

নিজের এপিটাফ তিনি লিখে গিয়েছেন একটি কবিতায়। এখন পাতা ঝরার ঋতু। গাছের পাতারা এমনিতেই ঝরছে। কবিতায় ব্যক্ত ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর নিদ্রিত ছায়ায় নিশ্চয় একটি গাছের একটি পাতা হলেও ঝরবে।
প্রণম্য শিক্ষাগুরুর প্রয়াণে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, আনত প্রণাম।

লন্ডন, ১৭ জানুয়ারী ২০২১

এই বিভাগের আরো সংবাদ