আজকের শিরোনাম :

জলবায়ু সম্মেলনে ‘জিসিএ’ পুরস্কার পেল বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১২

বাংলাদেশ মিশরে চলমান কপ-২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ‘অভিযোজন চ্যাম্পিয়ন্স অ্যাওয়ার্ড’ (জিসিএ) অর্জন করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আরও তিনটি দেশ এই পুরস্কার লাভ করে। জলবায়ু পরিবর্তনগত পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন কর্মসূচির কারণে জনগণ উপকৃত হলে এমন পুরস্কার দেওয়া হয়। বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে এই পুরস্কার অর্জনকারী অন্য তিনটি দেশ হচ্ছে-ভারত, নেপাল ও কেনিয়া।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জুরাইছড়ি উপজেলার পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা ক্রমবর্ধমান খরা, ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিল। এমন পরিস্থিতি এগিয়ে আসে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি)। সংস্থাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সঙ্গে মিলে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়। ইউএনডিপির এই কর্মসূচিতে সহায়তা করে ড্যানিডা। সেখানে সৌরশক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ পানি সরবরাহ সুবিধা এবং খরাকালীন সংকটের সময় নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করে। এই উদ্যোগটিই নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর।

সাধারণত চারটি বিভাগে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোজন বা খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে পরিচালিত প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেয় জিসিএ। এগুলো হচ্ছে-আর্থিক শাসন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব, সক্ষমতা এবং জ্ঞান ও স্থানীয় উদ্ভাবন। শেষেরটির জন্যই বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

জিসিএ পুরস্কার প্রসঙ্গে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক প্যাট্রিক ভারকুইজেন বলেন, আমাদের বিজয়ীরা দেখান যে জলবায়ু সংকটের জন্য সম্প্রদায়কেন্দ্রিক ও স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সমাধানগুলো বিদ্যমান। তবে তাদের সমর্থন ও স্বীকৃতির প্রয়োজন যা তাদের উদ্যমকে আরও উৎসাহিত করে।

জিসিএ’র সহ-সভাপতি ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, উদ্যোগটি স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী কৌশলগুলির সংমিশ্রণ। এটা প্রান্তিক এলাকায় জলবায়ু অভিযোজনের জন্য করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উদ্যোগটি কেবল টেকসই নয়, অন্যরাও এটিকে অনুকরণ করতে পারে এবং দক্ষতার সঙ্গে ও যথাযথভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলোকে মোকাবিলা করতে পারে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা বলেন, এখন সম্প্রদায়ের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল আছে এবং তারা তাদের ড্রাগন ফল, আম এবং লিচুর বাগানে পানি দিতে পারে। খাদ্য ও আয়ের জন্য তাদের জমি চাষ করতে পারে।

উল্লিখিত কর্মসূচি থেকে সুবিধাভোগীদের একজন জুরাছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত চৌমুহনী গ্রামের বাসিন্দা জোনা চাকমা। তিনি বলেন, পানির জন্য তিনি এক ঘণ্টা হেঁটে যেতেন। সেই জল পানীয়, রান্না, ধোয়া এবং গোসলের জন্য ব্যবহার করা হতো। গ্রীষ্মকালে তাদের আরও জলের প্রয়োজন ছিল। ওই সময় তারা প্রায় সারাদিন শুধু পানীয় জল সংগ্রহের জন্য কাটিয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৭ সালের এক ভূমিকম্প তাদের পানি সংগ্রহের উৎসকে আরও সংকুচিত করে। এতে তাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। জুরাইছড়ি সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে চৌমুহনী, বদলপাগা, লোকখী মেম্বার পাড়া, এনকে পাড়া ও চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন সৌরশক্তি চালিত গভীর নলকূপটি বদলপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ৫০০০ লিটার জল সংরক্ষণের সুবিধা আছে। পাইপ দিয়ে পানি অন্য গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। বাদলপাড়া গ্রামের ঝর্ণা চাকমা ব্যাখ্যা করেন, এখন তাদের জীবন সহজ হয়ে গেছে। তারা পানি আনতে যে সময় ব্যয় করেছেন, এখন সেই সময় তাদের বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া বা কাপড় বুননের মতো আয়বর্ধক কাজে ব্যয় করতে পারছেন।

ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা উল্লেখ করেছেন, নারীদের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি পানির পাম্পের ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ