আজকের শিরোনাম :

আন্তর্জাতিক বন দিবস

বন উজাড়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ১১:০৪

নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড় করার ফলে দেশ আজ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। ফলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, খরা এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন উজাড় করার ফলে বন্যপ্রাণী খাদ্য সঙ্কটে পড়ছে এবং আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে। তাতে মানুষের হাতে প্রাণ যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর। বনভূমি উজাড় করার ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণহানী ঘটছে। বন ধ্বংসের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে মেরু অঞ্চলে বরফ গলতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় নিম্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্ন এলাকা সাগরের লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে সব থেকে বেশি। উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি-পানি ক্রমেই লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার কারণে নতুন নতুন অণুজীব অবমুক্ত হচ্ছে। যার ফলে সংক্রামক রোগব্যাধির উৎপত্তি হচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীকে এবং বাংলাদেশকে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করে থাকে বনভূমি। তবে বর্তমান সময়ে বনভূমি উজাড়ের ফলে এ পরিবেশ ও জনজীবন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ বনভূমি উজাড় হচ্ছে তার তুলনায় বাংলাদেশে বনভূমি উজাড় হচ্ছে সব থেকে বেশি। এফএওর হিসাবে, বিশ্বব্যাপি গত ১৫ বছরে প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বন উজাড় হয়েছে। বাংলাদেশে তা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশে বছরে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর বন উজাড় হয়। এ উজাড় হওয়া থেকে সংরক্ষিত বনও রক্ষা পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপি সবচেয়ে পরিচিত বাংলাদেশের ফুসফুস হিসাবে খ্যাত সংরক্ষিত বন ‘সুন্দরবন’–এর বিস্তার ও ঘনত্ব কমেছে। বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের এক গবেষণায় বলেছে, গত দুই দশকে সুন্দরবনের গাছপালার পরিমাণ মারাত্মক হারে কমেছে। কমেছে বনের ঘনত্বও। বন উজাড় হয়ে ফাঁকা ও পতিত জমির পরিমাণ বাড়ছে। সুন্দরবন আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এক সময় বাংলাদেশ অংশে বনের বিস্তার ছিল ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার কিন্তু সেটি এখন ৬ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বন বিভাগের উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে। ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এসব বনভূমি জবরদখল করে রেখেছেন। বনের জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে তৈরি করা হয়েছে শিল্পকারখানা।

বনাঞ্চলের এই যখন অবস্থা তখন ‘বন এবং টেকসই উৎপাদন এবং ব্যবহার’ এই প্রতিপাদ্যে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস ঘোষণা করে। তখন থেকে প্রতি বছর বিশ্ব বন দিবস পালিত হয়। সব ধরনের বনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বন পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে, যা সারা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ – ২,০০০ এরও বেশি আদিবাসী সংস্কৃতি সহ তাদের জীবিকা, ওষুধ, জ্বালানী, খাদ্য এবং আশ্রয়ের জন্য বনের উপর নির্ভর করে।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে এ দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাজ শুরু করেছিলেন। দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণ, উপকূল সংরক্ষণে বনায়ন, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী ও অন্যান্য জলাভূমি সংরক্ষণ এসব বিষয় এ দিবসের আলোচনায় উঠে আসবে। প্রতিবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিবেচনায় আমাদের টিকে থাকার জন্য প্রাকৃতিক বন পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে তৃণমূল পর্যায়ে আরো সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব বন দিবস সহায়ক ভ’মিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক বন দিবস উপলক্ষে বন অধিদফতরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ