পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে, ক্ষুব্ধ কৃষক-ব্যবসায়ীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৬

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। ঢাকার অধিকাংশ বাজারেই এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ মিলছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। তবে কিছু বাজারে ৫০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। আবার ভ্যানে করে যেসব ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বিক্রি করেন, তারা দাম রাখছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সোমবার ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ খুচরা দোকানেই গতকাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা পাল্লা বা ৩৫ টাকা কেজিতে। 

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী কবীর হোসেন বলেন, ‘দেশে এখন রবি মৌসুমের ভরপুর পেঁয়াজ উঠছে। তাই পাবনা, ফরিদপুরের মতো পেঁয়াজপ্রধান জেলার মোকাম পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। তাই আমরা এখন কম দামে ওইসব এলাকা  থেকে পেঁয়াজ আনতে পারছি, আমরাও এখন কম দামে বিক্রি করতে পারছি। এ জন্য ঢাকার পাইকারি ও খুচরা, উভয় বাজারেই পেঁয়াজের দাম কমেছে।

এদিকে পাবনা থেকে মুস্তাফিজুর রহমান জানান, পাবনায় পেঁয়াজের বাজার নিম্নমুখী, দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষক। তবে স্বস্তিতে ক্রেতাসাধারণ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের ভান্ডার পাবনায় হঠাৎ দর নিম্নমুখী হয়েছে। চলতি দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দর কেজিতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা আর মণে ৮ থেকে হাজার টাকা নেমে এসেছে। যে পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার পাবনা বড় বাজারে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে। সবচাইতে ভালো বড় আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা মণ দরে আর ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে, যা কেজি হিসেবে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

তবে ব্যবসায়ী ও সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সেটা আগে লাগানো দেশি চারা বা হালি পেঁয়াজ। এখন ভরা মৌসুম। বাজারে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ সরবরাহ রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ে গেছে। তবে এখন যে পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেটা খুব বেশিদিন মজুদ করে রাখা যাবে না। মজুদ করে রাখার পেঁয়াজ উঠতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে বলে জানান তারা।

তবে পেঁয়াজের দর নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বর্তমান যে দাম পাচ্ছেন কৃষক সেটা দিয়ে কোনো রকমে চলছেন। এর চাইতে কম দাম হলে কৃষক প্রকৃতভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

পাবনা বড় বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আলো শেখ বলেন, প্রতিদিন পাইকারি দরে মাল কিনে ৫ টাকা লাভে খুচরা বিক্রি করছি। বাজার থেকে অনেকেই পাইকারি মাল কিনে বাইরে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করছে। তবে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। চায়না, বার্মা ও ভারত থেকে আসা আদা ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. ইসহাক আলী ও মো. শহীদুল্লাহ বলেন, এখন বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। যখন দাম বৃদ্ধি হয় তখন সবাই বাজারে আসে জরিমানা করে। আর এখন দাম কমে গেছে আর কারো খোঁজ নাই। হাটে মাল কিনছি যে দামে তার থেকে মনে একশ টাকা বেশিতে বিক্রি করছি।

বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা হাসান মাহামুদ বলেন, কৃষক মেরে আমরা কোনো সবজি কিনতে চাই না। তবে সবার জন্য সহনশীল ও স্বাভাবিক থাকতে হবে। এখন যে দাম দেশি পেঁয়াজের, এই রকম দাম থাকলে কৃষকও লাভ পাবেন, ক্রেতাও মাল কিনে আরাম পাবেন। সব মিলিয়ে সরকারকে প্রতিটি পণ্যের তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। একটি চক্র বিশেষ করে খুচরা ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা বাজার কারসাজি করে বাজারকে অস্থির করে থাকে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের তদারকি সঠিক থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকবে।

পাবনায় প্রায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের হাট বসছে। বিশেষ করে জেলা সদরসহ সুজানগর, আতাইকুলা, কাশিনাথপুর, দুলাই, চরতারাপুর, চাটমোহর, বেড়া, সাঁথিয়া উপজেলার হাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দেশি পেঁয়াজের আমদানি হচ্ছে।  এই অঞ্চলের দেশি পেঁয়াজ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়ে থাকে। এছাড়া উত্তরের জনপদ রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও বগুড়া থেকে পাইকারি ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা সরাসরি অথবা ফোনের মাধ্যমে পেঁয়াজ কিনছেন। তবে অনেক কৃষক অধিক লাভের আশায় মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন। আবহাওয়াজনিত কারণে এবার ফলন কম হয়েছে জানিয়েছেন কৃষকরা। বিগত বছরে এক বিঘা জিমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজের ফলন হয়েছে। সেখানে এই বছরে ৪০ থেকে ৫০ মণ পেঁয়াজ হবে বলে মনে করছেন তারা। তাই সামনের দিনে পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক হতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ