ক্রেতা সংকটে নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ, ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ২১:১৫

ক্রেতা সংকটের কারণে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। আইপি জটিলতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে ট্রাকে বস্তাবন্দি থাকায় ও অতিরিক্ত গরমের কারণে অধিকাংশ আমদানিকৃত পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক থেকে নষ্ট পেঁয়াজ বাহির হচ্ছে। বাড়তি দামে কেনা পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ১০ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লোকশানের মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। তবে কিছু ভালো পেঁয়াজ সেগুলো বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন তারা। এদিকে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরে দারুণ খুশি পাইকাড়সহ নিম্ন আয়ের মানুষ।

দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে গত ১৫ মার্চ থেকে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ করে দেয়। এতে ১৬ মার্চ থেকে হিলিসহ দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ৫ জুন সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হয়। বন্দরে ভালো মানের পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে যা খুচরাতে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এদিকে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন আমদানিকারকদের গুদামে কমদামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে কমদামের এসব পেঁয়াজ ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে বাছাই করে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে কেউবা খাচ্ছেন আবার কেউবা বিক্রি করছেন।

গুদামে পেঁয়াজ কিনতে আসা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজের গাড়িগুলো ভারতে লোডিং অবস্থায় বেশি দিন থাকার কারণে গরমে ট্রাকের ওপরের কিছু পেঁয়াজ ভালো থাকলেও নিচের পেঁয়াজগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে আমদানিকারকরা বন্দরে ভালো পেঁয়াজগুলো বিক্রি করে দিয়ে খারাপগুলো নিয়ে এসে গুদামে রেখেছেন। কিন্তু বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ায় এগুলো বিক্রি করতে না পারায় আরও বেশি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গুদামে থাকা সেই পেঁয়াজগুলো আমরা খুচরা ক্রেতারা এসে কম দামে নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো বাসায় নিয়ে বাছাই করে ভালোগুলো হাটে বিক্রি করবো বাকিগুলো ফেলে দিব।

পেঁয়াজ কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুনলাম অতিরিক্ত গরমের কারণে হিলিতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে গুদামে সেগুলো কম দামে বিক্রি করছে। যার কারণে আমি বিরামপুর থেকে হিলিতে এসেছি গুদাম থেকে পেঁয়াজ কিনতে। সবগুদামেই পেঁয়াজ মেঝেতে ফেলে রেখে ফ্যান দিয়ে শুকাচ্ছে। এর মধ্যে দেখেশুনে ইতোমধ্যেই পাঁচ বস্তা পেঁয়াজ কিনেছি এর মধ্যে দুই বস্তা নিয়েছি ১০ টাকা কেজি হিসেবে আর বাঁকি তিন বস্তা কিনেছি ৫ টাকা কেজি হিসেবে। এগুলো আবার বাড়িতে নিয়ে বাছাই করে যেগুলো ভালো বের হবে সেগুলো ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবো আর যেগুলো পচা বের হবে ওগুলো ফেলে দিব।

পেঁয়াজ কিনতে আসা সুলতান মাহমুদ বলেন, বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা। এতে করে আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সমস্যা। আর গুদামে নাকি কিছু পেঁয়াজ একটু একটু করে নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ৫ টাকা কেজি করে বিক্রি করছে। সেগুলোই কিনতে গুদামে এসেছি এখান থেকে এগুলো নিয়ে বাছাই করে যেটাই ভালো বের হয় সেগুলো দিয়ে কয়েকদিন খেতে পারবো।

গুদাম ম্যানেজার পরিতোষ কুমার বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে গাড়িতে থাকা পেঁয়াজের বস্তাগুলোর মধ্যে নিচের পেঁয়াজের বস্তাগুলো খারাপ হয়ে গেছে। পেঁয়াজগুলো দেশে প্রবেশ করতে দু-চারদিন সময় লেগেছে যার কারণে ট্রাকের মধ্যে বস্তাবন্দি অবস্থায় ছিল পেঁয়াজগুলো। দেরি করে আসার কারণে ও অতিরিক্ত গরম হওয়ায় বেশিরভাগ ট্রাকের নিচের পেঁয়াজগুলো খারাপ হয়ে গেছে। বর্তমানে খারাপ মানের পেঁয়াজগুলো বিক্রি করছি ১০ টাকা কেজি দরে আর যেগুলো বেশি খারাপ হয়ে গেছে সেগুলো বিক্রি করছি ৫ টাকা কেজি দরে। এতে করে আমাদের ব্যবসায়ীদের খুব ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কারণ আমাদের তো পেঁয়াজ ৫ টাকা দরে কেনা নয়।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রেজা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে আসছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। যার কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি করে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে দেশে যখন পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলো এ সময় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার কথা জানিয়েছিল। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরেই বন্দরের আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পেঁয়াজ লোডিং করতে বলেন। যে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে পাইপলাইনে ছিল।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যখন কৃষি মন্ত্রণালয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পত্র দেয়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মত বিলম্ব করে। এর ফলে ভারতের অভ্যন্তরে কিছুদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা আমাদের লোডিং করা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো দেশে প্রবেশ করছে। দীর্ঘদিন ধরে ট্রাকে বস্তাবন্দি হয়ে আটকা থাকায় ও অতিরিক্ত গরমের কারণে হওয়ায় অনেক ট্রাকের পেঁয়াজগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ভালো মানের পেঁয়াজ ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেও যেগুলো খারাপ মানের পেঁয়াজ বের হচ্ছে সেগুলো আমাদের বাধ্য হয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার কিছু পেঁয়াজ ফেলেও দিতে হচ্ছে। এর উপর বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত থাকলেও ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে বাড়তি দামে পেয়াজ আমদানি করে কমদামে বিক্রি করতে হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ যে কোনো সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থে সঠিক সময়ে দিলে আমরা আমদানিকারকগণ এই লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবো বলে মনে করছি। সরকার যেন আমাদের এই বিষয়টির প্রতি সুদৃষ্টি দেয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছি ঈদকে ঘিরে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত থাকবে। এতে করে দেশে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না থাকায় গত ১৬ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। আমদানির অনুমতি অনুমতি মেলায় গত ৫ জুন থেকে আবারো হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। আজো বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়ছে। বন্দর দিয়ে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে কাজ বাড়ায় বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের আয় বেড়েছে। বন্দর দিয়ে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭২টি ট্রাকে ১ হাজার ৬৩৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচামাল দ্রুত পচনশীল পণ্য তাই কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন এটি বন্দর থেকে আমদানিকারকরা খালাস করে নিতে পারেন বন্দর কর্তৃপক্ষ তার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাখেন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ