জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নে স্বল্পসুদে ঝণ দেবে ব্যাংক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২২, ১৯:৪১
জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ স্কিমের সুদহার হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১২ বছর (৩ বছর + ৯ বছর) মেয়াদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে ৯ বছরের মধ্যে মাসিক বা ত্রৈমাসিক সমকিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে ঋণ দিতে বেশকিছু বিধিনিষেধজুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি (বিআরপিডি) বিভাগ।
এতে বলা হয়েছে, জাহাজ শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং আমদানি নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে এনে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালার আলোকে অপেক্ষাকৃত স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দুই হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে।
দুই হাজার কোটি টাকার এ স্কিম পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ও বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক এ পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়ন নিতে আগ্রহী ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশনের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
তহবিল ব্যবস্থাপনা: এ স্কিমের পরিচালনাগত কার্যক্রম ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় কর্তৃক সম্পাদিত হবে। পুনঃঅর্থায়নের আবেদন পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিলসহ তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।
ঋণ প্রাপ্তি: জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জাহাজ নির্মাণকারী রপ্তানিমুখী ও স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে।
বিধি-নিষেধ: এ স্কিমের আওতায় ডকইয়াড নির্মাণ বা জমি ক্রয় বা ইজারার বিপরীতে ঋণের দেওয়া যাবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহিতার অনুকূলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে না। এ স্কিম হতে গৃহীত ঋণ দ্বারা কোনোভাবেই অপর কোনো ঋণ বা বিনিয়োগ পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না। ব্যাংক পর্যায়ে এক শতাংশ সুদ হারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে। গ্রাহক পর্যায়ে এ স্কিমের আওতায় সুদের হার হবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ।
ঋণের মেয়াদ: গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১২ বছর (৩ বছর + ৯ বছর) মেয়াদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে ৯ বছরের মধ্যে মাসিক/ত্রৈমাসিক সমকিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ স্কিমের আওতায় ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে এক বছর মেয়াদে চলতি মূলধন ঋণ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক প্রচলিত নিয়মানুসারে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ দেবে এবং ব্যবসায়িক লেনদেন সন্তোষজনক হলে তা নবায়ন করতে পারবে। তবে, নবায়নের মাধ্যমে কোনো গ্রাহক সর্বোচ্চ তিন বছর এ স্কিমের আওতায় ঘোষিত সুবিধা প্রাপ্ত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন বিবেচনায় চলতি মূলধন বাবদ দেওয়া ঋণের বিপরীতে এ স্কিমের আওতায় সুবিধার সময় হ্রাস/বাড়াতে পারবে।
ঋণ পদ্ধতি: গ্রাহকের প্রয়োজন বিবেচনায় বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ করা যাবে। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণপূর্বক বিভিন্ন কিস্তিতে ব্যাংক মঞ্জুরিকৃত ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে, কিস্তির পরিমাণ তিনটির কম হবে না।
তহবিল প্রাপ্যতা: ব্যাংক নিজস্ব নীতিমালার আওতায় কোনো গ্রাহকের অনুকূলে ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে, এ তহবিলের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ মঞ্জুরির আগে ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন থেকে তহবিলের প্রাপ্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। তহবিলের প্রাপ্যতা বিষয়ক আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণসূচি ও পরিশোধসূচি সংযুক্ত থাকতে হবে। পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন দাখিলের সময়সীমা কোন নির্দিষ্ট গ্রাহকের অনুকূলে এ তহবিলের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ দেওয়ার জন্য তহবিলের প্রাপ্যতা বিষয়ক আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৩০ জুন, ২০২৪ সালের মধ্যে দাখিল করতে হবে। চলতি মূলধন ঋণের নবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নবায়ন করা সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে।
আবেদনের পদ্ধতি: তহবিলের প্রাপ্যতা বিষয়ক আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত বিতরণসূচি মোতাবেক ঋণ/বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক বিভিন্ন কিস্তিতে গ্রাহকের অনুকূলে ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ করবে। ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ পরবর্তীতে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন বরাবর আবেদন করবে। অর্থের প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন কিস্তির বিপরীতেও ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে।
আদায় ও তদারকি: তহবিলের প্রাপ্যতা বিষয়ক আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত পরিশোধসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুদসহ সমুদয় ঋণ/বিনিয়োগ অংশগ্রহণকারী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে। ব্যাংক নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক ঋণ/বিনিয়োগ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব বিকলন করে তা আদায় করা হবে।
এবিএন/আব্দুর রাজ্জাক/জসিম/এআর
এই বিভাগের আরো সংবাদ