আজকের শিরোনাম :

২ সপ্তাহ ধরে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্ধ ওটি-আল্ট্রা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১৩:৫১

অত্যাধুনিক ভবন, সরঞ্জামসহ অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও চিকিৎসক থাকলেও কোন কারণ ছাড়াই গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও আল্ট্রা বন্ধ, এতে সেবাবঞ্চিত সাধারণ রোগীরা। তবে ওটির দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা বন্ধের বিষয়ে জিআই (জেনারেল এনেস্থিসিয়া) মেশিন এর অপ্রতুলতার কথা বললেও ওটি বন্ধ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. হামদুল্লাহ জানেন না বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন।

জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে ডাঃ মোঃ হামদুল্লাহ যোগদান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন নতুন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওটি চালু রাখতে নিরুৎসাহিত করে বলেছেন ওটিতে কোন সমস্যা হলে তিনি দায় নিবেন না। তাই চিকিৎসকরা ওটি সচল করতে সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন।

হাসপাতালের ওটি বন্ধের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি ও সুযোগ-সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও এনেস্থিসিয়া, গাইনী চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে প্রায় ৫ বছর ধরে বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটার গত ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর বর্তমান অর্থ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রচেষ্টায় পুনরায় চালু হয়। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকার পরেও আবার ওটি বন্ধ হওয়ায় প্রসূতি মা, এপেন্ডিসাইটিস ও টিউমার রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। বেশী বিপাকে পড়েছেন গর্ভবতী মায়েরা কেননা নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে করতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। এতে ডিএসফ কার্ডধারীসহ অনান্য রোগীরা বাড়তি টাকা খরচ করে প্রাইভেট ক্লিনিক অপারেশন করাচ্ছেন এখন।

তবে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খানসামায় অতিরিক্ত দায়িত্বে যোগদানের পূর্বে অপারেশন থিয়েটার ও আল্ট্রা সচল ছিল বলে জানা যায়।

শনিবার (৪ মে) সকালে সরেজমিনে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলার পাকেরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, তালাবদ্ধ অপারেশন থিয়েটার অন্যদিকে রোগীরা অপারেশন করানোর জন্য প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে হাসপাতালে আল্ট্রা মেশিন সচল থাকলেও বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা করাচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ২২ তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৭৯ টি ওটি হয়েছে । এছাড়া গত ২০২১ সাল থেকে ওটির সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ টি। উপজেলা পর্যায়ের প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নরমাল ডেলিভারি ছাড়াও নিয়মিত সিজার ও অনেক ধরনের অপারেশনে ভরসা এই হাসপাতাল। প্রতি মাসে ৬০-৭০ টি নরমাল ডেলিভারি ও প্রতিদিন ৩শ রোগী ইনডোর ও আউটডোরের সেবা নেয় বলে জানিয়েছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা।

যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা বিবেচনায় গত বছর রংপুর বিভাগ এবং বেশ কয়েকবার দিনাজপুর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয় খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

ডিএসফ কার্ডধারী মাহফুজা খাতুন নামে পাকেরহাট গ্রামের বাসিন্দা এক প্রসূতি মা বলেন, সিজার করানোর জন্য চিকিৎসকের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হই কিন্তু পরে তাঁরা জানায় এনেস্থিসিয়া মেশিনে সমস্যা। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজার করানো হয়েছে।  

হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাজিদা নামে এক রোগী বলেন, চিকিৎসক আল্ট্রা করানোর পরামর্শ দিলেও হাসপাতালে মেশিন নাকি বন্ধ। তাই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করাতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী কনসালটেন্ট ডা. হাসিনা বানু বলেন, এনেস্থিসিয়া মেশিনের সমস্যার কারণে ওটি বন্ধ রয়েছে। এটি ঠিক হলেই পুনরায় ওটি চালু হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনেস্থিসিয়া কনসালটেন্ট ডা. রিজওয়ানুল কবির বলেন, ওটি সচল রাখতে আমরা প্রস্তুত কিন্তু জরুরী মুহূর্তে রোগীকে ম্যানেজ করার ব্যবস্থা না থাকায় আপাতত ওটি বন্ধ আছে। এই সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো. হামদুল্লাহ বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় নিয়মিত অফিসে অবস্থান করি না তাই ওটি বন্ধের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওটি বন্ধে নিরুৎসাহিত করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ওটি চালু থাকবে কি না এটি নির্ভর করবে গাইনী চিকিৎসকের উপর। কেননা রোগী ওটি করতে আসলে এটি অবশ্যই গাইনী চিকিৎসক দেখবেন তাঁকে জিজ্ঞেস করলে সঠিক উত্তর পাবেন যে কেন বন্ধ আছে ওটি? তবে বন্ধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ চিকিৎসকরা জানালে ওটি সচল করতে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছেন।

এবিএন/এস.এম.রকি/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ