তাহিরপুরে ভুট্টার বা¤পার ফলন, কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৪, ১৮:৪১

হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় এবার চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এবার ভুট্টার বা¤পার ফলন ও বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অনুকুল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কারনে স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা ভুট্টা সংগ্রহ করতে পারছেন। কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। 

উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, এ অঞ্চলে প্রতি বছর ভূট্টা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার দিগুণ বেড়েছে ভুট্টা আবাদ। আমরা কৃষকদের ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এতে হাওরের কৃষকরা ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তাহিরপুর উপজেলায় প্রায় ৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৭৯ মেট্রিক টন। 

ভুট্টা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, ফ্রিপ প্রকল্প, রাজস্ব খাতের অর্থায়নে প্রযুক্তি প্রবর্তন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভুট্টার একক প্রদর্শনী সহ আরো ৭০ টি  কৃষক পরিবারকে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বিনা মূল্যে ২ কেজি করে ভুট্টাবীজ এবং ২০ কেজি করে ডিএপি ও ১০কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নেই কমবেশি ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। 

উপজেলার ভুট্টা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের কৃষি প্রণোদনার সার, বীজ ও পরামর্শ পেয়ে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। বিঘায় ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৩০-৩৫ মণ। চলতি বছর প্রতি মণ ভুট্টা দাম নয়'শ থেকে এক হাজার টাকা। এতে করে কৃষকরা প্রতি বিঘায় খরচ বাদে আয় করছেন ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এছাড়াও  গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে কচিপাতা এবং জ্বালানি হিসেবে শুকনো কা-, খোসা ব্যবহার করা যাচ্ছে। যা অন্য ফসলের তুলনায় দিগুণ বা তিন গুণ বেশী লাভ হয়। 

উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা উত্তোলন, মাড়াই ও সংরক্ষণে দিনরাত কাজ করছে কৃষক-কৃষাণীরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এপর্যন্ত ৮০ভাগ ভুট্টা ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ভুট্টা সংগ্রহ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তারা। দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামের আব্দুল হক বলেন, তিনি এবার প্রায় ৩বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। এ জন্য তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি স¤পূর্ণ জমির ভুট্টা সংগ্রহ করেছে। এ থেকে বিঘা প্রতি ৩০মণ ভুট্টা পেয়েছেন। এবছর খরচ বাদে অনেক টাকা লাভবান হয়েছেন। আগামীতে আরো বেশি করে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

একই ইউনিয়নের পাগলপুর গ্রামের তোতা মিয়া জানান, গত বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে ভালো লাভবান হন। এবছর কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ২কেজি এবং বাজার থেকে ৩কেজি ভুট্টা বীজ কিনে চার বিঘা জামিতে চাষ করেন। এতে বিঘাপ্রতি প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবারও ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে ১০ শতাংশ জমির ভুট্টা কেটেছেন। ফলন পেয়েছেন প্রায় ১০ মণ। কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জমির ভুট্টা কাটতে পারবেন। এবছরও তাঁর ভালো লাভ হবে বলে জানান তিনি। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান উদ দৌলা বলেন, স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনকারী ফসল ভুট্টা। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিড হিসেবেও এর চাহিদা প্রচুর। তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় ভুট্টা চাষ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ ভুট্টা কাটা হয়েছে। তাঁরা কৃষকদের ভুট্টা উৎপাদনে সহায়তা করছেন।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ