বাউফলে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছিনতাইকৃত রড উদ্ধার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:০২

ট্রাক ড্রাইভার আলআমিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় ছিনতাইকৃত ৯ মেট্রিক টন রড উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে পটুয়াখালীর বাউফলের দাসপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে একতা এন্টারপ্রাইজের গোডাউন থেকে রডগুলো উদ্ধার করে বাউফল থানা পুলিশ। একতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা রডগুলো আত্মগোপনে থাকা ট্রাকের হেলপার হাসানের কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন বলে জানা যায়। ছিনতাইকৃত রড ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যস্থতা করেন দশমিনার মজিবর নামের এক ঠিকাদার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের আবুল খায়ের ইন্ডাট্রিজ এর কারাখানা থেকে ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৫১৩৮ নম্বরের ট্রাকটি ১৩ মেট্রিকটন রড নিয়ে বাউফলের কালিশুরী বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পরের দিন ১৮ এপ্রিল কালিশুরীর খান এন্টারপ্রাইজে রডগুলো আনলোড করার কথা। কিন্তু ১৮ এপ্রিল ট্রাকের ড্রাইভার আল আমিনকে ফোন করে বন্ধ পান তার মামা মো. সবুজ। ২০ এপ্রিল দশমিনার নদীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে মামা সবুজ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন ওই লাশ তাঁর ভাগ্নে আল আমিনের। ময়নাতদন্ত শেষে আল আমিনের লাশ পরের দিন চাঁদপুরে নিয়ে দাফন করা হয়। এ ব্যাপারে দশমিনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আল-আমিনের মামা সবুজ। এরপরই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশের একাধিক টিম।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দশমিনা নৌ পুলিশের এসআই আল মামুন বলেন, ট্রাকের ড্রাইভার আল আমিনকে খুন করে ঘাতকরা রডগুলো কালাইয়া বাজারের একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানার কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে দেয়। মাসুদ রানা ওই রডগুলো গুদামে রেখে দেন। তদন্তের একপর্যায়ে নিশ্চিত হয়েই রডগুলো মঙ্গলবার রাতে ওই গুদাম থেকে জব্দ করা হয়। আর  আল আমিন হত্যাকান্ডের মুল নায়ক আত্মগোপনে থাকা ট্রাকের হেলপার হাসানকে আটকের জন্য অভিযান চলছে। এদিকে রড পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাকটি পুলিশ বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া বাহাদুরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে। 

আল আমিনের মামা সবুজ বলেন, ছোটবেলায় আল আমিনের বাবা মা মারা যান। এরপর থেকে তার কাছেই বড় হন আল আমিন। মামা সবুজের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার লামছড়ি গ্রামে। বর্তমানে তিনি থাকেন নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা বউবাজার এলাকায়। সবুজ তার ভাগ্নেকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি  ট্রাক কিনে দেন। মামার ট্রাক চালিয়ে আল আমিন আয়রোজগার করতেন। ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার রনজিৎ মজুমদারের সঙ্গে চুক্তি করে রডগুলো বাউফলের কালিশুরী বন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য  আবুল খায়ের ইন্ডাট্রিজ এর ফ্যাক্টরী থেকে রওয়ানা দেয় আলআমিন। সঙ্গে ছিলেন ট্রাকের হেলপার হাসান। হাসানের বাড়ি পটুয়াখালী হওয়ায় এই রুট তার চেনা ছিল। আল আমিন প্রথম এই রুটে ট্রাক নিয়ে আসেন। সবুজ বলেন, আমার এতিম ভাগ্নেকে নির্মমভাবে খুন করা হলো। আমি খুনিদের উপযুক্ত বিচার চাই। এদিকে কালাইয়া গুদাম থেকে ছিনতাই হওয়া রড জব্দ করা হলেও রহস্যজনক কারনে একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানাকে আটক করেনি পুলিশ। 

ছিনতাইকৃত রড ক্রয়ের ব্যাপারে মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেন, আমি মজিবর নামের এক ঠিকাদারের কাছ থেকে রডগুলো ক্রয় করেছি। তিনি (মজিবর) আমার পূর্ব পরিচিত। রডগুলো ছিনতাইকৃত কিনা তা আমার জানা ছিল না। আল আমিন হত্যাকান্ডের বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমি নির্দোষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আল আমিনকে পরিকল্পিতভাবে খুনের পর রড ছিনতাই করা হয়েছে। আর ছিনতাইকৃত রড পাওয়া গেছে একতা এন্টারপ্রাইজে। সুতরাং একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানা কোনো ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। 
 বাউফল থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, বিষয়টি দশমিনা থানার। রড উদ্ধারের সময় আমরা সহযোগিতা করেছি মাত্র। এর বাইরে আর কিছুই বলতে পারছি না। 

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। তদন্তে যারা অপরাধী প্রমাণিত হবে তাদের প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আনা হবে। 

এবিএন/মোঃ দেলোয়ার হোসেন/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ