সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান উৎসবে মেতেছে হাওরবাসী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:০০

প্রচন্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকরা মেতে উঠেছেন বোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ। কৃষকরা জানান, এখন পুরোদমেই হাওরের ধান পেকেছে। শুরু হয়েছে সেই ধান কাটা, মাড়া ও শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজ। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, সুনামগঞ্জ জেলায় এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা নির্বিঘেœ ফসল গোলায় তুলতে পারলে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে। এদিকে, হাওরে এখন চলছে অন্যরকম উৎসব। এটি কৃষকের শ্রমে-ঘামে জমিতে ফলানো সোনালী ধান গোলায় তোলার উৎসব। এ উৎসবে কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু সবাই যোগ দেন। এমনকি গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকিয়ে সেই ধান গোলায় তুলতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা করতে। আর কষ্টার্জিত এ ধানের ওপরই নির্ভর করে হাওরের প্রতিটি পরিবারের সারা বছরের খাবার ও খরচ চলে। ধর্মপাশা উপজেলার কালিজানা হাওরের কৃষক শফিক মিয়া, আলম মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, প্রতি বছরই যে তাঁরা এ ধান গোলায় তুলতে পারেন, ঠিক তা না। ২০১৭ সালের হাওর বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়া করে। সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল কৃষকদের। গত বছর নির্বিঘেœ ধান গোলায় তুলেছেন তারা। এর আগের বছর জেলার অন্তত ২০টি হাওরে ফসলহানি ঘটেছিল। 

জামালগঞ্জ উপজেলার শনির হাওরের কৃষক আব্দুল হাই জানান, বছরের এ সময়টিতে সুনামগঞ্জে এবং এ জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। উজানে ভারী বৃষ্টি হলে এ জেলার হাওরে পাহাড়ি ঢল নেমে আগাম বন্যা দেখা দেয়। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে কিংবা বাঁধ উপচে ফসল তলিয়ে যায়। তাহিরপুর উপজেলার কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, এবারও মার্চের শেষ সপ্তাহ এবং এপ্রিলের শুরুতে সুনামগঞ্জে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জেলার দুটি উপজেলার কয়েকটি হাওরে বেশকিছু ধান তলিয়ে যায়। তবে, গত তিন দিন জেলায় কোন ধরনের বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হাওরের কৃষকদের মনে স্বস্তি ফিরেছে।সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক ফুরকান আলী বলেন, তিনি এবার দেখার হাওরে ১০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান কাটা শুরু করেছেন। ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব ধান গোলায় তুলে ফেলবেন। 

একই গ্রামের অপর কৃষক মহিনুল ইসলাম বলেন, পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে। রোদ ওঠায় হাওরের সব কৃষকরা খুশি। এভাবে আর ১০ থেকে ২০টা দিন পেলেই হবে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী- এ বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। জেলায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর আছে। মেশিনে ৫৫ ভাগ এবং শ্রমিকেরা ৪৫ ভাগ জমির ধান কাটবেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত জেলার সকল উপজেলার হাওরের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল রক্ষায় প্রতিবছর জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৪০টি হাওরের ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করে। এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ৭৩৫টি প্রকল্পে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস ছিলনা। এ সময় সুনামগঞ্জে ও তার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, গেল সপ্তাহের ঝড়বৃষ্টিতে হাওরবাসীর মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল, সেটা কেটে গেছে। কৃষকেরা যাতে হাওরের ফসল নির্বিঘেœ গোলায় তুলতে পারেন সেজন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ