আজকের শিরোনাম :

চাহিদা মিটিয়ে জয়পুরহাটের সজনে রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৮

জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পতিত জমিতে প্রতিবছরের মতো এবারও মৌসুমি সবজি সজনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সজনের উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সৌদি আরব, মালোশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাতসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে জয়পুরহাটের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু সজনে। আয়ও হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষমাত্রা না থাকলেও জয়পুরহাট জেলায় এবার ২ হাজার ৭ হেক্টর পতিত জমিতে সজনের চাষ হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন সজনে পাওয়ার আশা করেছে কৃষি বিভাগ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সজনে স্থানীয় ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। চাষিরা জানায়, প্রথম দিকে বাজারে সজনে প্রতি কেজি ২০০ টাকার উপরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে ব্যাপক আমদানি বেশি হওয়ায় বাজারে অনেক দাম কমে গেছে। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতি কেজি ৪০ টাকা কেজি দরে পাইকারি ক্রয় করছে পাইকারি ক্রেতারা ।

পাঁচবিবি বটতলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানায়, বটতলী বাজারে মুলত কচুর লতি বিক্রি হলেও মৌসুমি সবজি হিসেবে প্রচুর পরিমাণে সজনেও কৃষকরা বিক্রি করতে নিয়ে আসে এখানে । মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মেট্রিক টন সজনে ক্রয় বিক্রয় হয়। 

সজনে ব্যবসায়ী সহিদুল বলেন, সজনের মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর পরিমাণ সজনে বিক্রি করতে আসে কৃষকরা। আমরা তাদের নিকট থেকে ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকি। 

বাগজানাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে সজনে ৪০ টাকা কেজি দরে কিনে পাঁচবিবির বটতলীতে পাইকারি বিক্রি করে থাকেন বলে জানান, পাইকারি ক্রেতা আমিনুল ইসলাম। মৌসুমের শুরুতে সজনের দাম বেশি থাকায় ভারত থেকে আমদানী করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে । তবে এখন দেশিও সজনের মৌসুমে অতিরিক্ত আমদানি হওয়ায় বাজারে এখন ৪০-৫০ টকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সজনে। 

পাঁচবিবি লতিহাটির সজনে ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যাম বাজারে প্যাকেজিং হয়ে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বটতলী বাজার থেকে প্রতিদিন ৩ ট্রাক সজনে বাইরে যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি বিভাগ সাংবাদিকদের জানায়, সজনে প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতির সজনে বছরে তিন থেকে চার বার পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় বারমাসী বা রাইখঞ্জন। অপরটি মৌসুমি হিসেবে পাওয়া যায়। বিশেষ করে জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলায় ব্যাপকভাবে সজনের চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের আইপিএম, আইসিএম ও এনসিডিটি প্রকল্পের আওতায় কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে কৃষক কৃষাণীদের মাঝে পতিত জমির আইল, পুকুর পাড়ের আইল, বাঁধের ধারে বাড়ির আশেপাশে এমনকি শহর বন্দরের যে কোনো ফাঁকা জায়গায় সজনে লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সজনে গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই গাছ জম্মায়। গাছের কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে এ গাছ। বড়-মাঝারি ধরনের একটি গাছ থেকে ৫-৬ মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। তবে এবার পাঁচবিবি হতে জয়পুরহাট পর্যন্ত রাস্তা বর্ধিত করনের কারণে, রাস্তার দুই পাশে লাগানো সজনে গাছগুলো কাটা পড়েছে।

বিনা খরচে সজনে চাষ অধিক লাভ জনক হওয়ায় অনেকেই রাজশাহী ও ভারত থেকে বারমাসী জাতের চারা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক ভাবে সজনে চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে চাহিদা বেশি থাকায় সজনের মৌসুম নয় এমন সময় ভারত থেকে সজনে আমদানি করা হয়ে থাকে।

পাচঁবিবি উপজেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গত কয়েক বছর থেকে কৃষক-কৃষাণীর মধ্যে সজনে চাষ উদ্বুদ্ধ করার ফলে এ কয়েক বছরে উপজেলায় ব্যাপক হারে সজনে চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। 

সজনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বহু পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এবং খেতে সুস্বাদু বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন।

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ