সুনামগঞ্জের যাদুকাটার তীরে সম্প্রীতির মিলনমেলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৫৪

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে পণাতীর্থ মহাবারুণী গঙ্গাস্নান ও শাহ আরেফিন (র.) ওরস মাহফিল। শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান ঘিরে সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী লক্ষ লক্ষ ভক্ত-আশেকান ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে যাদুকাটা নদীর দুই তীর ও সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ মহোৎসব শ্রীশ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর রাজারগাঁও লাউড় নবগ্রাম আখড়াবাড়ি সংলগ্ন যাদুকাটার তীরবর্তী পণাতীর্থ ধামে প্রায় ৭১৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাস্নান এবং হযরত শাহজালাল (র.)’র ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (র.)’র মহাপবিত্র ওরস শরীফ ঘিরে তাহিরপুরে এখন উৎসবের আমেজ। মুসলিম ও সনাতন ধর্মের দুই আধ্যাত্মিক মহাসাধকের ভক্তবৃন্দের তিনদিন ব্যাপী মিলনমেলা আজ শনিবার থেকে শুরু হয়ে সোমবার সকালে সমাপ্ত হবে। এই উৎসবকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বছর পবিত্র রমজান মাস থাকায় শাহ আরেফিন মোকামে কাফেলাগুলোতে মাইক, সাউন্ড সিস্টেম ও গান-বাজনাতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর আখড়াবাড়ি ও জন্মধাম সংরক্ষণ সংস্কার কমিটি সূত্রে জানাগেছে, আজ শনিবার মধুকৃষ্ণা এয়োদশীতে মহাবারুণী গঙ্গাস্নান সকাল ৭টা ৫২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা ৪৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের মধ্যে সমাপ্ত হবে। এ উপলক্ষে সীমান্ত নদী যাদুকাটার বালুচরে বারুনী মেলা শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়ে ৮ এপ্রিল সোমবার সকালে সমাপ্ত হবে। 

স্থানীয় আখড়াবাড়ি উৎসব কমিটি ও ইসকন সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহব্যাপী উৎসব ও গঙ্গাস্নান যাত্রাকে কেন্দ্র করে উৎসব কমিটি ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)’র উদ্যোগে পৃথকভাবে মঙ্গল আরতি, ভজনলীলা কীর্তন, বৈদিক নাটক, গঙ্গাপূজা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অপরদিকে, উপজেলার হযরত শাহ আরেফীন (র.)’র আস্তানায় ওরস মোবারক আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে।

ওরস উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন, সদস্য সচিব আলম সাব্বির ও শাহ আরেফীন আস্তানার খাদেম আলহাজ্ব নুরুল আমিন চিশতী জানিয়েছেন, ওরস ও গঙ্গাস্নান যাত্রা উপলক্ষে দেশ-বিদেশের কমপক্ষে ৪ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। ওরসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত, হালকা জিকির, মুর্শিদী, ভান্ডারী, পল্লীগীতি, লালনগীতি, বাউল সঙ্গীত, মরমী সংগঠতে ওরস প্রাঙ্গণ মাতিয়ে রাখার আয়োজন করা হয়েছে। 

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন জানিয়েছেন, ৭১৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলাকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য অ্যাড. রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ (পিপিএস-সেবা), তাহিরপুর উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে পৃথকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, উৎসব উদযাপন ও মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। অদ্বৈত মহাপ্রভু জন্মধাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, এখানে না আসলে জীবনের পূর্ণতা আসে না। প্রতি বছরের চৈত্র মাসে এই তিথিতে গঙ্গাস্নানের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাদুকাটা নদীতে ছুটে আসেন। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা যাদুকাটা নদীতে গঙ্গাস্নানের মাধ্যমে তাদের সারা বছরের পাপ মোচনসহ পুণ্য লাভের জন্য এখানে আসেন। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে পণাতীর্থের সূচনা করেন মহাপুরুষ শ্রী অদ্বৈত আচার্য প্রভু। নদীর তীর সংলগ্ন রাজারগাঁও গ্রামে অদ্বৈত আচার্য মন্দির ও আখড়া তৈরি করা হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, এই উৎসবে দেশে-বিদেশের লক্ষ লক্ষ পুণার্থী ও আশেকানদের আগমন ও নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আমাদের সাবির্ক সহযোগিতা থাকবে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, আখড়াবাড়ি, পণাতীর্থ ধামে গঙ্গাস্নান, গড়কাটি ইসকন মন্দির, বারুণী মেলা ও ওরস প্রাঙ্গণে পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর ৪টি অস্থায়ী ক্যা¤প বসানো হয়েছে। এছাড়াও ২জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা আগতদের দেহ, ব্যাগ তল্লাশীসহ ডিএসবি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি এবং ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোতে দিবারাত্রি যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও বিজিবি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইনডোর এবং আউটডোর মিলিয়ে আমাদের সাড়ে ৫শ থেকে ৬শর মতো পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। অদ্বৈত বাড়ি, ইসকন মন্দির সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। হাই ফ্রিকোয়েন্সির ক্যামেরা ইনস্টল করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রাজন কুমার দাস জানিয়েছেন, আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা, টহল টিম, ফুট পেট্রল টিম থাকবে। উৎসবকেন্দ্রেও আমাদের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নতুন বাস্টস্টেশন, আব্দুজ জহুর সেতু, চালবনসহ পুরো চলাচলের পথে আমাদের তিন স্তরের নিñদ্রি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ