কাপাসিয়ায় ভাইয়ের হাতে বোন খুন, গ্রেফতার ২

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৪

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুকে (৩৮) হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা গুঁজে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় তার সহোদর ভাই ও এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পিবিআই। 

শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টায় গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এবং রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতারকৃতরা হলো নিহতের ছোট  ভাই কাপাসিয়া উপজেলার কুলগঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) এবং তার সহযোগী শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার মামদাবাদী গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মিনাল ওরফে মিষ্টার (২১)। পুলিশ তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গাজীপুর পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালেহ ইমরান জানান, হত্যার শিকার শাহনাজ বেগম শিমুর ভাই কামরুজ্জামান রুবেল গাজীপুরের একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতো। প্রায় ৫ মাস পূর্বে রুবেল চাকরি ছেড়ে দেয়ায় সে আর্থিক অভাবে পড়ে। এসময় সে বিভিন্ন পরিচিতদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ঋনের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সে তার বোনের বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা চুরির সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দুইদিন আগে আসামী রুবেল তার সহযোগী মিনাল ওরেফে মিষ্টারের সাথে তার বোনের বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে। 

ঘটনার দিন বিকেলে মিনাল ওরফে মিষ্টার জয়দেবপুর রেলস্টেশনে আসলে রুবেল ও মিনাল একটি ব্যাগে একটি সুইজ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে ট্রেনে শ্রীপুর আসে। তারা শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড হতে অটোরিক্সা ভাড়া করে বরমী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে চা সিগারেট খায়। কিছুক্ষণ পরে তারা সেখান থেকে অটোরিক্সা যোগে রাত ৮টায় সিংহশ্রী ব্রীজে যায়। তারা সিংহশ্রী ব্রীজ থেকে পায়ে হেটে আসামী রুবেলের বোন প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ আক্তার সিমুর বাড়ীর সামনে আখ (গেন্ডারী) ক্ষেতে লুকিয়ে থাকে। রাত ১২টার পর আসামীরা শাহানাজ আক্তার সিমুর পাশের বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের উপর দিয়ে বাসার ছাদে উঠে। পরে পিছনের রান্না ঘরের সিমেন্টের টিন খুলে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। পরে রান্না ঘরের দরজা খুলে বাহিরে এসে ঘরের পেছনের খোলা জানালায় বাঁশের লাঠি দিয়ে ঘরের দরজার সিটকারী খুলে ঘরে প্রবেশ করে। আসামী রুবেল ও মিষ্টার এক সাথে শিমুর ঘরে প্রবেশ করে। শিমু তাদের সারা শব্দ পেয়ে চিৎকার শুরু করলে আসামী মিষ্টার সুইচ গিয়ার দেখিয়ে ভয় দেখায় এবং বলে আমরা তোমার কোন ক্ষতি করব না, চিৎকার বন্ধ কর। তাদের কথা শুনে শিমু চিৎকার বন্ধ না করলে মিস্টার গামছা দিয়ে শিমুলের মুখ চেপে ধরে। শিমুর ভাই আসামী রুবেল শাহানাজ আক্তার সিমুর হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। 

এ সময় শাহানাজ আক্তার শিমুর নখের আচড় লেগে আসামী রুবেলের বাম ও ডান হাতে জখম হয়। শাহানাজ আক্তার সিমু তার ভাই রুবেলকে যেন চিনতে না পারে সেজন্য শাহানাজ আক্তার সিমুর চোখ ও মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে মিস্টার। আসামী রুবেল শাহানাজ আক্তার সিমুর আলমারি খোলার জন্য চাবি খুঁজতে থাকে। এ সময় আসামী মিষ্টারের সাথে শাহানাজ আক্তার সিমুর ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে আসামী মিষ্টার শাহানাজ আক্তার সিমুর মুখে আঘাত করে তার বুকের উপর বসে গলায় চেপে ধরে। শিমুর ভাই আসামী রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে একটি স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, কানের ফুল ও নগদ তিন হাজার টাকা এবং শাহানাজ আক্তার সিমুর ব্যবহৃত মোবাইল সেট নিয়ে যায়। আসামী রুবেল ও মিষ্টার ভিকটিম শাহানাজ আক্তার সিমুর হাত ও পা পেছন দিয়ে বেঁধে বাড়ীর পকেট গেইট দিয়ে বের হয়ে যায়। পরদিন সকালে আসামী রুবেল সুইজ গিয়ার চাকু, প্লাস, মোবাইল সেট ভেঙ্গে জাজর ব্রীজের নীচে খালের পানিতে ফেলে দেয় এবং লুন্ঠিত স্বর্নালঙ্কার ১ লাখ ৫০ টাকা বিক্রি করে। 

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের স্বামীর বাড়িতে শাহনাজ বেগম শিমুকে হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা গুঁজে শ্বাসরোধে হত্যার করে। পুলিশ ওইদিন সকালে লাশ উদ্ধার করে। শিমুর স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী।

এবিএন/নূরুল আমীন সিকদার/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ