কোটচাঁদপুরে সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছে চাষিরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩২

অল্প দিনের স্বল্প খরচের ফসল সূর্যমুখী ফুল। আর নিজের তেলের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন চাষি খাইরুল হাসান (ঝন্টু)। ওই চাষির বাড়ি কোটচাঁদপুরের বকশিপুর গ্রামে। ভাল ফলন পেলে আগামী বেশি জমি চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন ওই চাষি।

জানা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বকশিপুর গ্রাম। এ গ্রামের চাষি খাইরুল হাসান (ঝন্টু)। জমিতে অন্যান্য চাষের পাশাপাশি ১০ শতকের একটি ব্লক তৈরি করেন সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য। এ চাষ তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী করেছেন বলে জানিয়েছেন চাষি খাইরুল হাসান (ঝন্টু)।

তিনি বলেন, সূর্যমুখী চাষটা অল্প খরজের স্বল্প সময়ের একটি চাষ। আর বর্তমানে যে পরিমানে তেলের দাম বাড়ছে, এ জন্য আমি এবার সূর্যমুখী চাষ করেছি। যাতে করে আমার সংসারের তেলের চাহিদা পূরন করতে পারি। আবার এটা আমি বাজার যাত ও করতে পারব। 
তিনি আরো বলেন, আমার ১০ কাটা জমিতে এই আবাদ করতে ২ হাজার টাকা মত খরজ হয়েছে। তবে আমি খরজের তুলনায় অধিক ফলন পাব বলে আশা করছি। এ বছর ভাল ফলন পেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে এ চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমিতে নানা ধরনের ফসলের পাশাপাশি এখন জায়গা দখল করে নিচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। বিস্তীর্ণ জমিতে আবাদ হচ্ছে এই ফসল। 

উপজেলার এখন প্রায় জাইগায় দেখা যায় সূর্যমুখী ফুলের হলুদ রঙের ঝলকানি। এ যেন হলুদ ফুলের রাজ্য। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। সূর্যমুখী ফুল দেখতে যেমন রূপময়,তেমনি গুণও রয়েছে। 

মাঠে গেলে চোখে পড়বে একদিকে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার দৃশ্য, অন্যদিকে সূর্যমুখী ফুল তাকিয়ে থাকার দৃশ্য। এই দুই এ মাঠ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক মনোমুগ্ধ কর পরিবেশ। যা যে মানুষের নজর কাড়বে।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান বলেন, উপজেলায় এ বছরসূর্য মুখীর চাষ হয়েছে ১৬ হেক্টর জমিতে। কৃষকেরা বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় চাষ কমেছে। তবে এর উৎপাদনের দিক থেকে চিন্তা করলে কৃষকেরা ভাল উৎপাদন পেয়েছেন।

সূর্যমুখীর যে বীজের সরবরাহ আমাদের দেশে। সেটা ভাল জাতের বীজ না এটা। আমাদের সব হাইব্রিড বীজ। যেটা আমাদের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়।

আমরা যদি একবার বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আবাদের গ্রাহক বাড়বে। না হলে এটা কমবে। কারণ কৃষক তো বীজ টা সংগ্রহ করে রাখতে পারছেনা। হাইব্রিড বীজ এটা সংগ্রহ করে রাখা যায় না। এটা কোম্পানি তৈরী করে এবং সে অনুযায়ী তারা কৃষকের কাছে দেয়। এবং পরবর্তীতে তারা এটা চাষ করে।

তিনি আরো বলেন, সূর্যমুখী তেলটা অনেক ভালো।এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল একটা তেল।  চাহিদাও আছে বাজারে। কিন্তু বীজের স্বল্পতার জন্য কৃষক এটার উৎপাদন মুখী হতে চাই না। এজন্য আমাদের গতবারের থেকে এবার আবাদ কমে গেছে। আমাদের যেমন গতবার উৎপাদন হয়েছে পার হেক্টরে ২.২৮ মেট্রিক টন। 

সূর্যমুখী চাষে কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। যেমন ঝড় হলে বেশি উচ্চতার গাছ পড়ে যায়। পাখিদেরও একটা উপদ্রব আছে। আলাদা একটা  টেক কেয়ারের বিষয় আছে। 

সব জায়গায় সূর্যমুখী ভাঙানোর ঘানি নাই। সরিষার ঘানিতে সূর্যমুখীটা ভাঙ্গানো হয়। কোটচাঁদপুরের পেক্ষাপটে আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন  ড্রাগন ফলের আবাদ ও বাড়ছে। এই কারণে কিছু কিছু জায়গায় কৃষকরা যেখানে বেশি লাভ পাচ্ছে সেই সব ফসলের দিকে ঝুকে যাচ্ছে। 

সূর্যমুখী চাষ করে একদিকে যেমন কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি সংসারের নিজেদের তেলের চাহিদা ও পূরন হচ্ছে। তবে বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারলে এর চাহিদা আরো বাড়বে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

এবিএন/সুব্রত কুমার/জসিম/গালিব 

এই বিভাগের আরো সংবাদ