প্রথমবারের মতো এক টেবিলে আইভী-শামীম ও সেলিম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৩

বর্তমান সরকারের দেড় দশকে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এমপি এক টেবিলে বসেছেন। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রেসক্লাব ভবনে নাগরিক সমস্যা, যানজট ও ফুটপাত দখল সমস্যা সমাধানে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

ওই বৈঠকেই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ডা. আইভী, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক তাদের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামীকাল (রোববার) থেকেই যানজটমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা হবে।

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল প্রমুখ।

বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, আমরা আমাদের কাজ সঠিকভাবে করলে কোনো সমস‌্যা থাকে না। ট্রাফিক তো সিটি করপোরেশন বা এমপির ওপর দোষ চাপাতে পারে না। আপনাদের কাছে চিঠি দেয়া আছে বৈধ বা অবৈধ স্ট্যান্ডের। একটাও কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

আইভি বলেন, ৬০০ হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা সবাই দোকান বিক্রি করে রাস্তায় বসছে। প্রতিটি সড়ক হকারদের দখলে। আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে কাজের কথা বললে করে দেবো। তবে ট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্ব নিতে হবে। এসপি সাহেব বলেছেন, ওই এলাকায় তার বাড়ি না তাই তিনি যান না। তাহলে কি সেই এলাকায় মানুষ থাকে না? আমাদের কেন বন্দী করে রেখেছেন? আপনারা সেখানে থাকলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এই রাস্তাটা যানজটমুক্ত থাকত।

তিনি বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ড নিয়ে মামলা হয়েছে। সেটা উচ্ছেদ করে জানাতে বলেছে কোর্ট। একটা লেন ছিল আগে, এখন তিনটি লেন হয়েছে। হকার সড়কে বসতে পারবে না। এটা আজ আমার বড় দুই ভাইকে কমিটমেন্ট দিতে হবে। মেয়রদের কথা প্রশাসন শোনে না, এমপিকেই এটা বলতে হবে।

অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে একটা সমস্যা ইপিজেড ছুটি হলে রাস্তাটা অকেজো হয়ে যায়। ফুটওভার হলে সেই রাস্তার সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। আমি আর আইভী একটা কাগজে সই করে পাঠালেও এটা (সমাধান) হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকারমুক্ত করুন। কবে করবেন জানান, মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেবে।

শামীম ওসমান বলেন, সিএনজি ও অটোরিকশা চলছে। কিন্তু এই অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের কারণে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এরা কিন্তু বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। তারা বিল না দিয়ে চলছে, গাড়ি চালাচ্ছে। ওরা দয়ায় চলছে না, কেউ না কেউ টাকা খাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। বিআরটিএ’র পারমিশন ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দেয়া উচিত না।  

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, বিআরটিএ প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ির পারমিশন দেবে না। আর সেক্ষেত্রে আমাদের নারায়ণগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ীদের আগে মূল্যায়ন করা উচিত। সিএনজি ও অটোরিকশার পারমিশন সিটি করপোরেশন দিলে কাল এর অজুহাতে সারাদেশে সবাই পারমিশন দেবে। এটা কেন সিটি করপোরেশন দেবে? এটা আপনাদের কাজ। স্ট্যান্ড কোথায় হবে, দরকার থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। এরা কিন্তু ফ্রি বসে না। তারা কাউকে না কাউকে টাকা দেয়।

সমস্যার সমাধান করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না। এটা সবার জন্য হতে হবে। মীর জুমলা সড়ক বন্ধ। হাইস্কুলের সড়কটা খালি থাকলে সেটা মীর জুমলা সড়ক হয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে যাবে। ছোট একটা সড়কে ১৬ বার ট্রেন চললে পুলিশ কেন ফেরেশতাদের জন্যও যানজট কমানো সম্ভব না। আমরা রেল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলতে পারি ট্রেন চাষাঢ়ায় থামুক। শুধু ইঞ্জিন ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন। এতে বেশি সময় লাগবে না।

অন্যদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সমস্যার শেষ নেই। আজকে আমরা উঠে গেলাম আর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। তিনি বলেন, আমার ছোট বোন (সেলিনা হায়াৎ আইভী) একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। এটা স্বাভাবিক। আমার দায়িত্ব যেটা নয়, সেটার জন্য কেন আমাকে দোষারোপ করা হবে, আমি সেটা জানতে চাই।

সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্যা ময়লা। এই ময়লা কোথায় যাবে। বাধ্য হয়ে লিংক রোডে গিয়েছে। এখন শীতলক্ষ্যার কোনায়, বন্দরে যায়। যতক্ষণ রাস্তা পরিষ্কার না হবে, ততক্ষণ এ সকল সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, রাস্তার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের হাতে। ফুটপাত কার হাতে? এটা কি মাসলম্যানদের হাতে? এই দখলকারীরা কারা? এরা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা না। সারাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, মানুষ ভালো থাকুক। আমাদের একত্র হতে হবে। একটা ফুটপাতও দখলে থাকবে না। এটা না থাকলে মাদক, ইভটিজিংও থাকবে না। হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের জান বের হয়ে যায় পরীক্ষা থাকলে। আমরা বাস কিনে দিয়েছি। কিন্তু কলেজ গেটে বাস কোথা দিয়ে যাবে? কেন এই রাস্তা বারবার উচ্ছেদ করার পরও কাঁচাবাজার বসে সেখানে? এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করতে পারলে বসবো, নয়ত আমরা বসবো না।

সেলিম ওসমান বলেন, এখানে কোনো রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি একটাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শান্তিতে চলাচল করতে দিতে হবে। আমরা মেয়রকে অবশ্যই সহযোগিতা করবো। আমরা করোনার সময়ও করেছি। আমরা স্কুল করেছি, কিন্তু বাচ্চারা স্কুলে যায় কি না খবর রাখতে পারি না।

তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে বসবো, স্বেচ্ছাসেবী নেবো। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে কোনো সমস্যা রাখব না। আমারা মেয়র আইভীকে নিয়ে আমার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে নিয়ে এটা করবো। শামীম ওসমানকে আমরা শক্তি হিসেবে কাজে লাগাবো।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ