চরম অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মে জর্জরিত কটিয়াদীর গচিহাটা রেলস্টেশন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:০৮ | আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:১৬

‘রেলগাড়ি ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম’। বাংলার লোকমুখে প্রচলিত এ ছড়ার ‘আলুর দম’ এর মতো অবস্থা হয়েছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা রেলওয়ে ষ্টেশনের যাত্রীদের। নানা অনিয়ম আর চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে রেলস্টেশনটি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মরত স্টেশন মাস্টারসহ কর্মচারীদের নিয়মিত অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি। ফলে যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ‘আলুর দম’ হওয়ার জোগাড় হয়েছে যাত্রীদের। তাই প্রতিকার চেয়ে যাত্রীরা অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, গত বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) দুপুরে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্কুল পরিদর্শনে সহশ্রাম-ধুলদিয়া ইউনিয়নে যায়। এ সময় গচিহাটা স্টেশন এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীরা এসে স্টেশনে টিকেটের কালোবাজারি, স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মাচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তাদের নিয়মিত অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে স্টেশনটি পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়গুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। সেখানে গিয়ে মদন মোহন দাস নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে স্টেশন মাস্টার হিসাবে পরিচয় দেন। বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে, আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্টেশন মাস্টার নয় বলে জানান। তিনি বর্তমান স্টেশন মাস্টার অনুপস্থিত থাকায় দায়িত্বপালন করছেন বলে জানায়। এ সময় স্টেশন মাষ্টার শাহাবুদ্দিন ফকিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সহকারী স্টেশন মাস্টার মাহাবুব হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনিও অনুপস্থিত, ঢাকায় আছেন। এখানে সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসাবে  দুজন কর্মরত আছেন। অন্যজন প্রশিক্ষণে আছেন। পয়েন্টসম্যান হিসাবে স্টেশনে অস্থায়ী একজনসহ চারজন কর্মরত থাকলেও তাদের কাউকেই স্টেশনে পাওয়া যায়নি। খালাসী একজন তিনিও অনুপস্থিত, গেইট কিপার হিসাবে দুজনের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেছে। সে সময় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে টিকেট বিক্রি সম্পর্কে মদন মোহনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেদক দেখতে পায়, স্টেশনের প্লাটফর্মে যাত্রীদের ভিড়। স্টেশন মাস্টারের ঘরে মদন মোহন দাস ট্রেনের টিকেট বিক্রি করছেন। এসময় নিকলী সরকারি কলেজের ছাত্র সাজেদুল ইসলাম, ধুলদিয়া গ্রামের অনিক চন্দ্র, বেসরকারি চাকুরিজীবী সোহাগ সরকার, কিশোরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রহমানসহ অনেক যাত্রীরা জানান, এখানে টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত রেলওয়ে কর্মচারীরা। স্টেশন মাস্টারের অফিসঘর থেকেই অতিরিক্ত দামে তারা টিকিট সংগ্রহ করেছেন। এমনকি ১২৫ টাকার স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা দিয়ে।
এরই মধ্যে গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিত টের পেয়ে ব্যাগ নিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে পড়েন মদন মোহন। তিনি কোথায় যাচ্ছেন প্রশ্ন করলে জানান, তার বাড়ি ময়মনসিংহ তিনি সেখানে চলে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি আরো জানান, এক সময়ে রেলওয়েতে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। বর্তমান স্টেশন মাস্টার সাতদিন ধরে অনুপস্থিত। তার অনুরোধে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে জানতে গচিহাটা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, স্টেশনের কর্মরতদের অনিয়ম, স্বোচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, পাশাপাশি সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তাই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

এবিএন/ধ্রুব দাস/জসিম/রঞ্জন

এই বিভাগের আরো সংবাদ