দেড় কিমি. হেঁটে জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল ছেড়ে ওসির দরজায় প্রসূতি নারী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:১৫

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর বাঘমারা এলাকায় জীবন বাঁচাতে রৌমারী থানার ওসির দরজায় আমেনা বেগম নামে এক প্রসূতি নারী। প্রযুক্তির সহায়তায় এ দম্পতি আগেই জানতে পেরেছেন ভূমিষ্ঠ হতে যাওয়া সন্তান কন্যা শিশু। আর এতেই সন্তানসম্ভবা আমেনা বেগমের ওপর নেমে আসে স্বামীর নির্যাতন। স্বামী আমিনুল ইসলামসহ তার পরিবার নানাভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল ওই নারীকে।

ওই নারীর ১২ বছরের দাম্পত্য জীবন। এই সময়ে তাদের সংসারে চার সন্তানের জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে বেঁচে আছেন দুই মেয়ে আর জন্মের পরে মারা গেছেন পুত্রসন্তান। আর এক সন্তান সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সন্তান প্রসবের শারীরিক প্রক্রিয়া শুরু হতেই ছুটে আসেন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে। সেখানে এসেও স্বামী আমিনুল গর্ভে থাকা নবজাতক ও প্রসূতি নারীকে হত্যার হুমকি দেন। এ সময়ে সন্তান প্রসবের পানি ভাঙতে শুরু করে। শুরু হয় প্রসব যন্ত্রণা। তাই চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচার (সিজার) করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু গর্ভের সন্তান ও নিজের জীবন বাঁচাতে ছুটে যান রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপ কুমার সরকারে কাছে।

কন্যা সন্তান হওয়ায় তার পেটের সন্তান ও নিজের জীবনহানির আশঙ্কা করছেন তিনি। যার জন্য নানা হুমকি দিচ্ছেন সন্তানের জন্মদাতা নিজেই। এরপরই ওসি রূপ কুমারের হস্তক্ষেপে নারীকে ফেরানো হয় হাসপাতালে আর তার স্বামীকে নেওয়া হয় থানায়। কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানের কোনো ধরনের ক্ষতি হয় এমন কাজ করতে নিষেধও করা হয়।
 
ভুক্তভোগী নারী একাই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে থানায় গেছেন উল্লেখ করে উপজেলা সদরের নিরাময় হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘গতকাল সকালেই এই নারী একাই প্রসব বেদনাসহ হাসপাতালে আসেন। এরপর তার স্বামীসহ কয়েকজন স্বজন আসেন। কিন্তু মেয়ে সন্তান হওয়ার কথা আগেই জেনে যাওয়ায় তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তখন আমরা তাদের পারিবারিক বিষয় নিজেদের মেটাতে বলি। পাশাপাশি তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডাকতে বলি। এরইমধ্যে সবার চোখ এড়িয়ে এই নারী অসুস্থ অবস্থায় থানায় চলে যান। পরে পুলিশ এসে বিষয়টা সমাধান করে।’
 
ক্লিনিকটির পরিচালক আরও বলেন, ‘এই নারী ভর্তি হওয়ার পরেই সিজারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই সব কারণে এখানে আমরা রাখিনি। কারণ শুরুতে সিজার হলে এখানেই হতো। রোগীর পানি ভাঙছিল। কিন্তু গর্ভবতী নারীর আশঙ্কা ছিল তার স্বামী ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু থানা পুলিশসহ বিভিন্ন পক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধান করতে  ৯ ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। ফলে পেটে থাকা নবজাতকের হার্টবিট কমে যাচ্ছিল। তাই আমরা অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। যাতে এখানে ঝামেলা না হয়। তাই অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সবশেষ যতটা জানতে পেরেছি, শেরপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার সিজার হয়েছে।’

এবিষয়ে রৌমারি থানার (ওসি) রুপ কুমার সরকার বলেন, ‘গতকাল বিকেলের দিকে হঠাৎ এক নারী আমার কাছে এসে বলেন, বারবার মেয়ে সন্তান হওয়ায় তার স্বামী তাকে ও তার সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে ওই নারীর অভিযোগ শুনি। তখন জানতে পারি এই নারী নাকি হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে থানায় এসেছেন স্বামী ও তার পরিবারের হাত থেকে বাঁচাতে। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক হওয়ায় থানা থেকে নারী পুলিশের সঙ্গে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর স্বামীকে থানায় আনা হয়। পরবর্তীতে বারবার কন্যা সন্তান হওয়ার পেছনে মায়ের কোনো ভূমিকা নেই। এ ক্ষেত্রে বাবার শুক্রাণুর ক্রোমোজম দায়ী উল্লেখ করে এ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে কাউন্সিলিং করা হয়। এরপর ওই বাবা তার ভুল বুঝতে পেরে এ ধরনের কাজ না করার প্রতিশ্রুতি দেন।’

ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে বিষয়টি আমি বুঝিনি। ওসি স্যার বোঝানোর পর এখন বুঝছি। মাইয়া বাচ্চা হইছে আমি খুশি। আমি আর আমার স্ত্রীরে কিছু বলবো না।’
 
ভুক্তভোগী নারী আমেলা বেগম বলেন, ‘আমি এখন সুস্থ, মেয়ে বাচ্চা হয়েছে গতকাল রাত সাড়ে ১১টায়। আমি খুব খুশি।’

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ