শিবচরে বিলপদ্মা নদীতে নৌকাবাইচ, লাখো দর্শনার্থীর ঢল

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৯

একসময় বর্ষায় নৌকাবাইচ ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব। অনাবৃষ্টির কারণে নদীতে পানি কম থাকায় হারাতে বসেছে উৎসবটি। তবে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে  মাদারীপুর শিবচরের বিলপদ্মা (শেখপুর) নদীতে আয়োজন করা হয়েছে নৌকাবাইচ।  

ডিঙি নৌকা এবং ট্রলারে করে অবস্থায় নেয় নদীতে। নৌকা ছুঁটে চলার এই প্রতিযোগিতা দেখতে নদী পাড়ে ভিড় জমায় হাজারও মানুষ। মাঝি মাল্লাদের ছলাৎ ছলাৎ বৈঠার আওয়াজ ছাপিয়ে শোনা যায় দু'পাড়ের মানুষদের হর্ষধ্বনি। উৎসবে মাতোয়ারা ছিলো বিলপদ্মা (শেখপুর) নদী। বিলপদ্মা (শেখপুর) নদীর বুকে পড়ন্ত বিকালে এ নৌকাবাইচ দেখতে ভিড় করেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

শনিবার বিকেলে নদীজুড়ে শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, এবার বাইচে অংশ নিয়েছিল নানারঙ্গের বাহারী নৌকা। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১০টি নৌকা। বিলপদ্মা নদীতে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথের নৌকাবাইচ দেখার জন্য লাখো নারী-পুরুষ নদীর পাড়ে, রাস্তায়, ব্রিজে এবং নৌকা-ট্রলারে করে নদীতে অবস্থান নেয়।

উপজেলার শেখপুর এলাকার এই নৌকাবাইচ উপলক্ষে ওই এলাকার ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজনদের মেলা বসে। বাইচ দেখতে দূরের আত্মীয়-স্বজনেরা একদিন আগেই এসে ওঠেন আত্মীয়ের বাড়িতে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই বাইচ ঘিরে পুরো এলাকা যেন মেতে ওঠে উৎসবে। অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা, যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখা, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সাধারণ মানুষকে নির্মল আনন্দ দিতেই এই নৌকাবাইচের আয়োজন বলে জানান আয়োজক কমিটির সদস্যরা।

মো. ইচাহাক নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের এই শেখপুর ও আশেপাশের এলাকা বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরে থাকতো। এক সময় এখানকার ঘরে ঘরে ডিঙি নৌকা ছিল। নৌকায় ঘুরাফেরা করতাম। তখন নৌকাবাইচ হতো। পানিতেই নৌকা নিয়ে বাইচ দেখতাম। এখন আর আগের মতো পানি হয় না। তবে নৌকাবাইচ এই অঞ্চলের ঐতিহ্য। খুবই ভালো লাগছে বাইচ দেখতে। ছোট ছেলে-মেয়েরা খুবই আনন্দ পাচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য এবং মানুষকে প্রাকৃতিক আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি প্রতিবছর যেন নৌকাবাইচের আয়োজন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ‘এখনো মানুষ ঐতিহ্যকে ভুলে যায়নি। এই নৌকা বাইচই তার জলন্ত উদাহরণ। লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিণিত হয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্যে আয়োজকদের অনরোধ করবো। আমার পুরো পরিবার নিয়ে এসেছি নৌকা বাইচ দেখতে। তারা খুবই খুশি বাইচের খেলা দেখে। আগামীতেও আসবো বাইচের খেলা দেখতে।’

আয়োজক সূত্র জানায়, নৌকাবাইচে প্রথম স্থান অর্জন করেন শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়নের মৃজাকান্দি জাগরণ সংঘ, রানার্সআপ হয় কালাম সিপাই ও দেলোয়ার সিপাই’র নৌকা এবং তৃতীয় স্থান মো. তরিকুল ইসলামের নৌকা। প্রথম স্থান অর্জনকারীকে ১৩ সিএফটি ফ্রিজ, রানার্সআপ ১১ সিএফটি ফ্রিজ এবং তৃতীয়স্থান অর্জনকারী নৌকাকে ৪২ ইঞ্চি টেলিভিশন পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়। এছাড়া নৌকাবাইচে অংশ নেওয়া অন্য সাতটি নৌকাকে অংশগ্রহণকারী পুরস্কার হিসেবে টেলিভিশন দেওয়া হয়।   

এবিএন/এস.এম. দেলোয়ার হোসাইন/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ