ফুলবাড়ীয়ায় শিক্ষক থাকলেও শ্রেণীকক্ষে নেই শিক্ষার্থী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৬:১৯

শিক্ষক থাকলেও নেই শিক্ষার্থী। সত্যিকারার্থে হতবাক হলেও এমনই অবস্থা বিরাজ করছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার মাদরাসাগুলোর ইবতেদায়ী শাখায়। দাখিল, আলিম ও ফাজিল মাদরাসার সাথে সংযুক্ত ইবতেদায়ী শাখাগুলির এমন অবস্থায় হতবিহ্বল বিশিষ্টজনেরা। মাদরাসা শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হচ্ছে  ইবতেদায়ী শাখা। এতে শিশুদের প্রথম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করানো হয়। আর এই ইবতেদায়ীর ধাপ পেরিয়েই শিক্ষার্থীদের  ভর্তি হতে হয় মাদরাসার মাধ্যমিক পর্যায়ে দাখিল শাখায় । যে কারনেই চালু করা হয় ইবতেদায়ী মাদরাসা। বর্তমানে এসব  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনাগুলো ভোগছে শিক্ষার্থী সংকটে। 

উপজেলার ৪৩টি দাখিল ১টি আলিম ৭টি ফাজিল মাদরাসায়  মাধ্যমিকের পাশাপাশি ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) শিক্ষা শাখা চালু থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। এসব দাখিল, আলিম ফাজিল মাদরাসার এবতেদায়ী শাখায় শিক্ষক থাকলেও নেই কোন শিক্ষার্থী। কোথাও আবার শিক্ষার্থী থাকলেও পাঠদান কার্যক্রম খুবই অপ্রতুল।      
গত ১৬ আগস্ট বেলা পৌনে ১টা থেকে ১টার সময় এনায়েতপুর ইউনিয়নের শুশুতি গ্রামের তাওহিদীয়া বালিকা দাখিল মাদরাসায় গিয়ে ইবতেদায়ী শাখায় একজন শিক্ষার্থীও পাওয়া যায়নি। পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের সব কটি ছিল শূন্য। শুধু অফিসকক্ষে ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ছিলেন উপস্থিত। একই চিত্র প্রতিদিনেরই বলে জানান এলাকাবাসী। 

এ প্রতিষ্ঠানের ইবতেদায়ী শাখায় সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত ৩ জন শিক্ষক  থাকলেও  কোন শ্রেণী কক্ষে দেখা মেলেনি শিক্ষার্থীর। মাদরাসাটিতে দীর্ঘসময় অবস্থান করে  শিক্ষার্থী ও পাঠদান নিয়ে আলাপচারিতা হয় ইবতেদায়ী শাখার প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে। তার কাছে ইবতেদায়ী শাখার  শিক্ষার্থীদের  তথ্য চাওয়া হলে তিনি হাতে লেখা একটি কাগজে  ধরিয়ে দেন। তাতে ১ম শ্রেণিতে ৪১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৪৩ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ৩৮ জন,  চতুর্থ শ্রেণীতে ৪৪ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২৪ জন সর্বমোট ১৭০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা রয়েছে। খাতা কলমেও তাই। কিন্তুু বাস্তবতা তার বিপরীত। শ্রেণকক্ষে  গিয়ে পাওয়া যায়নি একজন শিক্ষার্থীও।

স্থানীয় সূত্র জানায়, তাওহিদীয়া দাখিল বালিকা মাদরাসার  ইবতেদায়ী শাখায় হাতেগণা কয়েকজন শিক্ষার্থী আসে। পাশেই আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় এবং  শিক্ষকদের  দায়িত্বহীনতা, লেখাপড়ার মান ভালো না হওয়ায়  ঐ মাদরাসায় সহজে কোন অভিভাবক বাচ্চা দিতে রাজি হয় না। শিক্ষার্থী সংকট উত্তোরণে কোন উদ্যোগ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকিভাজের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।

এ 
বিষয়ে তাওহিদীয়া দাখিল মাদরাসার ইবতেদায়ী প্রধান সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এটি গরীব এলাকা , এছাড়া  এখানে বিস্কুট ও উপবৃত্তি না দেওয়ায় অভিভাবকরা ছেলে মেয়েদের  (ছাত্র/ছাত্রী)-কে  ভর্তি করতে চায় না। যারা আসে তারা কিছু দিন পরে এমনেতেই চলে যায়। আমরা কি করমু ? একই অবস্থা এনায়েতপুর ও ভবানীপুর ফাজিল মাদরাসার, পলাশীহাটা দাখিল মাদরাসার এবতেদায়ী শাখার ৫ম শ্রেণীতে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত পাওয়া যায় ৬জনের শিক্ষার্থী। এছাড়াও কুশমাইলের জলিলিয়া দাখিল মাদরাসার ইবতেদায়ী শাখার  নাজুক অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায়  অধিকাংশ মাদরাসাই ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) স্তরের  শিক্ষা ব্যবস্থা হযবরল। ছাত্র/ছাত্রী খাতা কলমে থাকলেও ক্লাসে নেই।  নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকগণ ক্লাস নিচ্ছে  মাধ্যমিক (দাখিল) শাখায়। তাছাড়া শিক্ষার মান নিয়ে ইবতেদায়ী মাদরাসার ভালো মন্দের পর্যালোচনা করলে মন্দের পাল্লাই ভারী হবে। এ অবস্থায় ইবতেদায়ির শিক্ষা কার্যক্রম চলতে থাকলে  খুব দ্রুত সময়েই  মাদরাসা মাধ্যমিক (দাখিল) ও উচ্চ মাধ্যমিক লেভেল (আলিম) পর্যায়ে শিক্ষার্থী টানপোড়নের শঙ্কা দেখা দিতে পারে বলেও দাবি শিক্ষাবিদদের। 

এ ব্যাপারে একাডেমিক সুপারভাইজার মোহসিনা বেগম বলেন, আমরা শুধু মাধ্যমিক স্কুল গুলো দেখে থাকি। মাদরাসা গুলির ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। তাছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের নির্দেশনা দিলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দিতে পারি মাত্র। 

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, পরিদর্শন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নিবাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম বলেন, বিষয়টি আমলে নিয়েছি, পরির্দশন করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

এবিএন/হাফিজুল ইসলাম স্বপন/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ