আজকের শিরোনাম :

তাহিরপুরে ২০ শিক্ষক-কর্মচারী বেতন ও ভাতা থেকে বঞ্চিত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১৮:৩২

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ২০ জন সহকারী শিক্ষকসহ কর্মচারী। উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বেতন বিলে স্বাক্ষর না করায় মে-জুন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস শিক্ষক ও কর্মচারীরা উঠাতে পারেননি। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দানু ও বিদ্যালয়ের সভাপতি আমির শাহ বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আমির শাহ দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শিক্ষক কর্মচারীদের সরকারি বেতন বিলে স্বাক্ষর দিতে গরিমসি করে আসছেন। তাদের চলতি বছরের মে মাসের বেতন ভাতার সরকারি বিল দাখিল করার সর্বশেষ তারিখ ছিল গত ৮ জুন পর্যন্ত। বেতন বিলে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়ে একজন শিক্ষককে দিয়ে ৭ জুন সভাপতির নিকট বিল পাঠান। এসময় সভাপতি কোন বিলে স্বাক্ষর দিবেন না বলে ঐ শিক্ষককে বিদায় করে দেন। সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন। তার অনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারায় এখন পর্যন্ত একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া অসম্পন্ন রয়েছে। তিনি বাজারে রাস্তাঘাটে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বাজে মন্তব্য করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নে ১৩ একর ২০ শতক ভূমির উপর প্রতিষ্টিত হয়। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৭শ। শিক্ষক ১৭ জন। কর্মচারী তিনজন। ৬ষ্ট শ্রেনী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয় এখানে। ১৯৯৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করেন শফিকুল ইসলাম দানু। তিনি যোগদানের পর থেকে সকল শিক্ষকদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে বিদ্যালয়টি সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টানে পরিণত হয়। এখানে শিক্ষক ও সভাপতির মধ্যে মাঝে মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলেও এবারই সকল শিক্ষকদের বেতন এক সঙ্গে বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে উপজেলার সচেতন মহল, ছাত্র অভিভাবক, প্রাক্তণ শিক্ষর্থীদের মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে দুই বছর মেয়াদি ম্যানিজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান সভাপতি আমির শাহ। এরপর থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে মনোমালিন্য দেখা দেয় তার। এবারে সভাপতি শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ও ঈদ বোনাসের বিলে স্বাক্ষর না দেয়ায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির জমিয়ে রাখা দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এদিকে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বেতন বোনাস আটকে দেওয়ার ফলে প্রধান শিক্ষকসহ ১৭ জন সহকারী শিক্ষক, তিনজন কর্মচারী বেখাদায় পড়েছেন। তারা বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মে ও জুন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস সরকারি বিল দাখিল করার নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকরা ঈদের আগে বেতন উত্তোলন না করতে পেরে হতাশায় ভেঙ্গে পরেছেন। 

গত সোমবার এবিষয়ে সমাধানের জন্য সভাপতির অনুমিত ক্রমে প্রধান শিক্ষক মিটিংয়ের আয়োজন করলে সভাপতি অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিত না থাকার কারন দেখিয়ে বেতন বিলে স্বাক্ষর দেন নি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নুরেসাবা আক্তার সহ অন্য শিক্ষকরা জানান, দুই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস না পেয়ে আমরা কষ্টে দিনাতিপাত করিতেছি। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ, ছেলে মেয়েদের ঈদের ছোট ছোট আবদার রক্ষা করা তো দূরের কথা ডালভাত খাওয়াই এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম দানু বলেন, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে সারা মাস পাঠদান করেছেন, এখন বেতন ও সামনে ঈদুল আযহার বোনাস নিবেন এটাই স্বাভাবিক। প্রতি মাসেই বেতনের সময় সভাপতি বিল শীটে স্বাক্ষর দিতে গড়িমসি করেন। এখন মে-জুন মাসেও তিনি নানা অজুহাতে বিল শীটে স্বাক্ষর করছেন না। তিনি আরো বলেন, সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিনসহ শিক্ষকগণ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আমির শাহকে বেতন বিলে স্বাক্ষর করার জন্য অনেক বুঝিয়েছেন। তারপরও বিলে স্বাক্ষর না দিয়ে সভাপতি চলে গেছেন। আমরা এখন হতাশার মধ্যে রয়েছি। 

তাহিরপুর সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়,  গত সোমবার বিকাল পর্যন্ত বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মে ও জুন মাসের বেতন ঈদ বোনাস বিল আসেনি। মঙ্গলবার থেকে ব্যাংক ঈদের বন্ধ থাকবে। বিদ্যালয়ের সভাপতি আমির শাহ বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ৬ তারিখ এসে এক তারিখের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। গত ২৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের হিসাব ম্যানেজিং কমিটিকে জানাচ্ছেন না। লাইব্রেরির বই অনত্র সরিয়ে ছুরির নাটক করা হচ্ছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি করছেন তিনি। এ সমস্ত কারণেই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের বেতন বিলে স্বাক্ষর দেইনি। কমিটির বাকী সদস্যদের সাথে আলোচনা না করে আমি বিলে স্বাক্ষর করতে পারবো না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন শীটে সভাপতি স্বাক্ষর না করায় মাসিক বেতন বন্ধ রয়েছে শুনেছি। সভাপতি কোন অনিয়ম করে থাকলে তিনি লিখিত আকারে জানাতে পারতেন। কিন্তু সকল শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা তার ঠিক হয়নি। 

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আসাদুজ্জামান রনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইউএনও স্যার ট্রেনিংয়ের কারণে দেশের বাহিরে থাকায় আমি দায়িত্বে আছি। ইউএনও ফিরে আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ