খোকসায় বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল স্কুলছাত্রী, দুইজনের কারাদণ্ড

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩, ১৮:০৭

কুষ্টিয়ার খোকসায় জোর করে বাল্যবিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলো নবম শ্রেণির ছাত্রী। ভ্রাম্যমাণ আদালত দালালসহ কথিত বরকে কারাদণ্ড দিয়েছে।

কুষ্টিয়ার খোকসার শোমসপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বুজরুখ মির্জাপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী মিনুকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার (ছাত্রী) দাদা ও দাদির বিরুদ্ধে।

ছাত্রীটির অভিযোগ বুধবার সকালে তাকে জোর করে কুমারখালী উপজেলার ঘাসখাল গ্রামে নিয়ে গিয়ে বাল্য বিয়েতে বসতে বাধ্য করা হয়। ওই ছাত্রীর বাবার নাম সোহেল হোসেন। তিনি পেশায় একজন ইটভাটার শ্রমিক। সে বিলাজানি দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির মানবিক শাখার ছাত্রী।

বিয়ের পর বুধবার বিকালে কথিত নতুন বর নূর হোসেন (২৫), বিয়ের দালাল রমজান আলী শেখসহ ছাত্রীটিকে তার বাবার বাড়ি ফিরে নিয়ে আসেন বিয়ের প্রধান আয়োজক দাদা আলাউদ্দিন ওরফে জান ও দাদি রেশমা খাতুন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় ছাত্রীটি প্রতিবেশী মামীকে সাথে করে থানায় গিয়ে হাজির হয়। রাতেই থানা পুলিশ ছাত্রীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নূর হোসেন ও দালল রমজানকে আটক করে। এ সময় ছাত্রীর দাদি ও দাদা আত্মগোপন করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনা স্থলে মোবাইল কোর্ট ঘোষনা করে কথিত বর নূর হোসেনকে দুই সপ্তাহ ও দালাল রমজানকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। বৃহস্পতিবার সকালে দন্ডপ্রাপ্তদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।

দন্ডাদেশ প্রাপ্ত নূর হোসেন কুমারখালী উপজেলার নন্দিগ্রাম-ঘাসখাল গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। দালাল রমজান একই উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জামাল শেখের ছেলে।

সাহসী ওই ছাত্রী মিনু জানায়, বাবা মা’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাদা দাদি তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের দুই ঘন্টা পর বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। এই সুযোগে সন্ধ্যায় সে থানায় গিয়ে হাজির হয়। সরাসরি বড় দারোগার কাছে গিয়ে অভিযোগ করে। ন্যায় বিচার পাওয়ায় সে খুশি। সে “কালো” এই অভিযোগে দাদা দাদি তার বিয়ে নামের কলঙ্ক চাপিয়ে দিয়েছে। সে পড়া লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধ পরিকার। এক বেলা পর এক বেলা খেয়ে হলেও সে উচ্চ শিক্ষা নেবে।

ছাত্রীর মা নাজমা খাতুন বলেন, দালালের খপ্পরে পরে তার শ্বশুর শাশুড়ি জোর করে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে খুতো করেছে। মেয়ে পড়তে চায়। বাবাও মেয়েকে পড়াতে চায়। নিজের কোন জমি নেই। স্বামী কাজ করেন তাই সংসার চলে। মেয়ে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর শাশুড়ি তাদের বিপদে ফেলেছে।

খোকসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিুল্লাহ জানান, ছাত্রীটি তার কাছে আসার সাথে সাথে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ছাত্রীটি ও ছেলে পক্ষের কথা শুনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপেন কুমার বিশ্বাস জানান, ছাত্রীটির বাবা-মা বিয়েতে রাজি না। কিন্তু দাদা দাদি আর দালালে কাজটি করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষের কথা শুনে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে সাজা দেওয়া হয়েছে।

এবিএন/সুমন কুমার মন্ডল/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ