ফুলবাড়িয়ায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ, পরিদর্শনে ইউএনও

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১০:৩৪

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১০নং কালাদহ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ গ্রামের ৭০নং বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন নতুন ভবনের ৩টি পিলারের ঢালাই খসে পড়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ৩টি পিলারে হাত দিলেই খসে পড়ছে ঢালাইসহ বালিমাটি। ইতিমধ্যে পিলারের সিমেন্ট, বালু মিশ্রিত খোয়া উৎসুক জনতা হাত দিয়ে ছুঁয়ায় অনেকাংশ খসে পড়েছে।

এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গতকাল মঙ্গলবার সকালে নির্মাণাধীন স্থাপনা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মুর্শেদ, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সাথে ছিলেন। এ সময় স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাতুড়ী হাতে নিয়ে পিলারগুলো যাচাই করেন।

স্থানীয়রা বলেন, বিদ্যালয়টি নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের ইট, বালি, সিমেন্ট ও সুরকি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করছে ঠিকাদার। ভবনটির পাইলিং থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজেই ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। এতে করে যে কোনো সময় স্থাপনাটি ধসে যেতে পারে। এতে আমাদের শিশুরা পড়বে ঝুঁকিতে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলম মিয়া বলেন, শুরু থেকেই নিন্মমানের রড ও সিমেন্ট দিয়ে কাজ করা হয়। এতে ভবনটি যেমন দীর্ঘস্থায়ী হবে না, তেমনি শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০ নং বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের চুক্তি করা হয় মেসার্স হৃদয় এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে। চুক্তি অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়।

কালাদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, নিম্নমানের কাজের কারণে দুদিন পরেই ভবনটি ধসে পড়তে পারতো। এতে করে ১০ জন শিক্ষার্থীও মারা যেতে পারত। আমরা এই ভবন নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। যারা এই ভবন নির্মাণে অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি হোক। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন এর আগেই ধরা পড়েছে।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রাবেয়া আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হৃদয় এন্টার প্রাইজের প্রতিনিধি আহসান হাবিবের সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া গেলেও অনিয়মের কথা শুনে কল কেটে ফোন বন্ধ করে দেন।

ভবন নির্মাণে অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মাহাবুব মোর্শেদ জানান, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমি এবং ইউএনও স্যারসহ আমরা কয়েকজন সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এখানে ভবনের তিনটি কলামে ত্রুটিপূর্ণ কাজ পাওয়া গেছে এবং কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা একটি টিম পাঠাবে। তারা সরেজমিনে তদন্ত করে যে সিদ্ধান্ত দিবে সে অনুযায়ী কাজ হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম জানান, ভবনটি পরির্দশন করে রিপোর্ট করা হয়েছে এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের অনিয়মের জন্য দায়ী সকলকে শোকজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এবিএন/হাফিজুল ইসলাম/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ