আজকের শিরোনাম :

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে জনসংহতি সমিতির  গোপন মিশন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১৮:১৭

নৈসর্গিক শোভা মন্ডিত শহর পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এখানে রয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড় আর পাহাড়ের বুক জুড়ে রয়েছে স্রষ্টার অপার সৃষ্টি প্রাকৃতিক নিদর্শন। স্রষ্টা যেন আপন হাতে সাজিয়েছে রুপের রানী পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়ি, বান্দরবানকেসহ পার্বত্য এলাকাকে। সবুজ অরণ্যে ঘেরা এ জনপদের সৌন্দর্য অবলোকনে একসময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসতো হাজার হাজার পর্যটক। পর্যটন খাতে সংশ্লিষ্টদের আয় হতো লক্ষ লক্ষ টাকা। কিন্তু বর্তমানে অনেকটাই পর্যটক শূন্য বান্দরবান শহর। শান্তির এই জনপদে এখন শুধু আতঙ্ক আর আতঙ্ক, বাতাসে বাসছে বারুদের গন্ধ, পড়ছে লাশের পর লাশ। 

সূত্রমতে সম্প্রীতির এ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সাবেক গেরিলা নেতা ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লার্মাসহ দেশি বিদেশি একটি চক্র এবং আঞ্চলিক কয়েকটি স্বশস্ত্র সংগঠন। প্রথমে তারা বেঁছে নেয় ভৌগলিক দিক থেকে ভারত মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেষা বান্দরবান জেলাকে। সংগঠনটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু  করে থানচি ও রুমা সহ দুর্গম এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এরই মাঝে রেব পুলিশ সহ যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে বান্দরবানের গহীন অরণ্য থেকে বিপুল পরিমার অস্ত্র ও গোলাবার উদ্ধার করে।
এ সময় দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণের অভিযোগে জমাতুল ফিল হিন্দাল মুজাহিদিন নামের একটি জঙ্গির সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় যৌথ বাহিনী। 

এ ছাড়াও গত মঙ্গলবার (১৭ মে) রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়িতে সেনা টহল দলের ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় দুজন সেনা সদস্য নিহত এবং দুজন সেনা কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিলাইছড়ি উপজেলার জারুলছড়িপাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ওই স্থানের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। টহল দলটি জারুলছড়িপাড়ার কাছে পানির ছড়ার কাছাকাছি পৌঁছালে কেএনএ সন্ত্রাসীদের ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিবর্ষণের মুখে পড়ে এবং এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে এক নতুন আতঙ্ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এই কেএনএ। এটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একটি সামরিক শাখা। বছরখানেক আগে বান্দরবানে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। অভিযোগ রয়েছে কেএনএফকে অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা। আর এসব অস্ত্র আসছে  মিয়ানমার, পাকিস্তান সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে।

সম্প্রতি পাওয়া একটি সূত্রে জানাযায়, জনসংহতি সমিতির থাইল্যান্ড প্রতিনিধি হলেন যুব্বুর চাকমা। তার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার হরিনা এলাকায়। জানাযায় তিনি বার্মা ও থাইল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন। থাইল্যান্ডে অবস্থানকালে তিনি পাকিস্থান ও বার্মা সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করতে জনসংহতি সমিতিকে সাহায্যের অনুরোধ জানান।

সূত্রমতে জেএসএসের অনুরোধে পাকিস্তান রাজি হয়, তবে একটি শর্তে, আর তা হলো উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গ্রুপের কাছে অস্ত্র ও গোলা বারুদ পাঠাতে জেএসএস পাকিস্তানের আইএসআই-কে সাহায্য করবে। জেএসএস এতে সানন্দে রাজি হয়।

এরপর ঘটনা দ্রুত ঘটতে থাকে। গত ২০১৯ ও ২০২০ সালে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বার্মা-বাংলাদেশ সীমান্তের কোন একটি পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় বিদ্রোহীদের কাছে পাঠানোর জন্য দুই চালান অস্ত্র জেএসএস-এর হাতে তুলে দেয় । তখন জেএসএস সভাপতি এই সব অস্ত্র তাদের দলের জন্য বলে তার দলের লোকজনদের মধ্যে প্রচার করে। তথ্যমতে সমঝোতা মোতাবেক এইসব অস্ত্রের চালান থেকে জেএসএস একটি অংশ লাভ করে মাত্র। আর সেই অস্ত্র দিয়ে জেএসএসের সদস্যরা পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। স্থানীয়রা বলছেন এই অস্ত্র চালানগুলোর অপর একটি অংশ কুকি-চিন ন্যাশন্যাল ফ্রন্টের হাতে পড়ে থাকতে পারে।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জেএসএসের এই ভারত ও বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক তৎপরতা সম্পর্কে পুরোপুরি না জানলেও ভালোভাবে আঁচ করতে পারে। সম্প্রতি যুব্বুর চাকমা বাংলাদেশে আসলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং জিজ্ঞাসাবাদে জেএসএসের অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন।

জনসংহতি সমিতির এসব ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারত সরকার সন্তু লারমাকে ডেকে পাঠায়। সন্তু লারমার সাম্প্রতিক ভারত সফরের কারণ হলো এটাই।

অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তথ্য প্রমাণসহ জেএসএসের ভারত বিরোধী তৎপরতার বিবরণ সন্তু লারমার কাছে 
তুলে ধরেন এবং এ ব্যাপারে তার কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন। সন্তু লার্মা কিছু অভিযোগ স্বীকার করলেও আরও অনেক বিষয় এড়িয়ে যান বলে জানা যায়।

জেএসএসের মধ্যম সারির এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, জেএসএস আর আগের মতো কেবল ভারত সরকারের ওপর নির্ভরশীল নয়। জেএসএসের এখন অনেক আন্তর্জাতিক বন্ধু রয়েছে। তাদের কাছ থেকে তারা অর্থ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পেয়ে থাকে।

তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে সন্তু লারমা ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সাথে সংযোগ না রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি তা আদৌ রক্ষা করবেন কীনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ সন্তু লারমা হলেন এমন একজন ব্যক্তি যাকে কখনই বিশ্বাস করা যায় না। নিজ স্বার্থে তিনি এমন কোন কাজ নেই যা তিনি করতে পারেন না। বার্মা ও পাকিস্তান যদি জেএসএসকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারতের জল ঘোলা করতে চায় তাহলে তা এই দুই দেশের সরকারগুলোর জন্য এক বিরাট মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

অনেকের মতে সন্তু লারমার নির্বাধে এসব দেশবিরোধী কাজ চালিয়ে যেতে পারার কারণ হলো আঞ্চলিক পরিষদে তার অবস্থান। এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে তিনি অনেক কিছু করতে পারছেন এবং অনেক সুবিধা নিতে পারছেন। অথচ তারপরও সরকার সমালোচনার ভয়ে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে সময় থাকতে জেএসএস এবং বিশেষত সন্তু লারমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন পর্যায়ে চলে যেতে পারে। আর এতে বাংলাদেশ ও ভারতকে চরম মূল্য দিতে হবে। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত নির্বাচনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে সন্তু লারমাকে হটানোর ব্যবস্থা করা।

এবিএন/আনোয়ার হোসেন লিকন/জসিম/তানভীর হাসান

এই বিভাগের আরো সংবাদ