যুব প্রজন্মের স্বপ্নপূরণের আলোকবর্তিকা এখন মেহেরপুর টিটিসি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ১৩:০২

মেহেরপুরের বর্তমান প্রজন্মের স্বপ্নপূরণে আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করছে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। বিশেষ করে যারা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জীবিকার উৎস বিনির্মাণ করতে চাওয়া যুবক-যুবতীদের জন্য আলো ছড়াতে শুরু করেছে টিটিসি।

মেহেরপুর জেলা শহরের উপকণ্ঠে-কুষ্টিয়া সড়কের বিসিক-সংলগ্ন এলাকায় মেহেরপুর গণপূর্ত অধিদপ্তর ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে টিটিসি নির্মাণ করেছে। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৭ সালে। উদ্বোধনের পর থেকে শুরু হয়েছে বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণ (পিডিও) কার্যক্রম। যে কার্যক্রমের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার জন বিদেশগামী কর্মী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া ২০১৭ সাল থেকে ৭ টি ট্রেডে মোট ১ হাজার ৮৩২ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অধিনে আরও ২৭০ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। যা থেকে বছরে প্রায় ১৩২ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বর্তমানে চলমান কোর্সে ৩০০ জন বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কম্পিউটার অপারেশন, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, সিভিল কন্সট্রাকশন, ইলেকট্রনিক্স, গার্মেন্টস, ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স ও জাপানি ভাষা প্রশিক্ষন কোর্স মিলে মোট ৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, টিটিসির তিনটি ভবনের একটি একাডেমিক, একটি ডরমেটরি, একটি প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের কোয়ার্টার ও হোস্টেল। একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাস হচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষনার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আছে দামি দামি সব যন্ত্র। যেগুলো ব্যবহার করে দক্ষ জনশক্তি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশিক্ষকরা।

ড্রাইভিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেয়া বাদশা মিয়া বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে আমি ড্রাইভিং কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছি। আমার বড়ভাই রাজু মিয়া সেও ড্রাইভিং শিখে সৌদি আরবে গাড়ি চালকের কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমি নিজেও একটা গাড়ি কিনেছি এবং আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।

মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক মোহাম্মদ ওহিদুজ্জামান বলেন, আমরা দক্ষ মানব শক্তি তৈরি করছি। বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও দেশেই বিষয়ভিত্তিক হাতের কাজ করতে পারবে তারা। এছাড়াও উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ডাটাবেজ তৈরি করছে বিএমইটি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো দেশে কর্মী পাঠানোর চাহিদা পেলে ডাটাবেজ অন্তর্গতরা অগ্রাধিকার পাবে।

আরেক প্রশিক্ষক শিখা খানম বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিভিন্ন কোর্সে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। যেমন মোটর ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, গার্মেন্টস, বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ বছর আমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী বিআরটিএর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হাওয়ায় প্রশিক্ষণার্থীদের হোস্টেলে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ আরিফ হোসেন তালুদার বলেন, এই টিটিসি দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা মেটাবে। ইতিমধ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ হাজারের বেশি এই টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছে। এছাড়াও স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়ে উপকৃত হচ্ছে অনেকেই। যদি একজন মানুষ দক্ষ হয় তাহলে তার কাজের কোনো অভাব হয় না। তিনি আরও বলেন, এই টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে কাউকে কাজের পেছনে দৌড়াতে হবে না। দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে উঠলে কাজই তাদের পেছনে দৌড়াবে।

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ