আজকের শিরোনাম :

‘নির্যাতিত বাবা-ছেলে নির্দোষ, ধর্ষণের অভিযোগ সাজান শিক্ষিকা’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪:১৭

বাবা-ছেলেকে নির্যাতনের এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় তুলেছে।
ফরিদপুরের মধুখালীতে কিশোর রাজন মৃধা (১৫) ও তার বাবা ইয়ামিন মৃধার (৪০) বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণের যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তা এক স্কুলশিক্ষিকার সাজানো ছিল। ওই নিঃসন্তান শিক্ষিকা তার কাছে শিশুটিকে রাখতে চাইছিলেন। এজন্য শিশুটিকে বাবা ও ভাইয়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে দুজনকে স্কুলে ডাকেন। পরে শ্রেণিকক্ষে আটকে ওই কিশোর ও তার বাবাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই শিক্ষিকার কথায় বাবা-ছেলেকে নির্যাতনে নেতৃত্ব দিয়েছেন রুমা নামে এক তরুণী।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, দুইজনকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সোমবার পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথম দফায় গ্রেপ্তার হন তিনজন, এদের মধ্যে দুজন জামিনে বেরিয়েছেন। তবে প্রধান আসামি কুতুবউদ্দিন এখনো কারাগারে। দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন। এরা হলেন মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের মাঝকান্দি গ্রামের আসাদুল মোল্যার ছেলে ফরমান মোল্যা (২১), একই গ্রামের শাজাহান মোল্যার ছেলে সজিব মোল্যা (২২), শিবরামপুর গ্রামের নবিয়াল শেখের ছেলে জুবায়ের শেখ (২০) ও নূর ইসলাম ভূইয়ার ছেলে হাসিব ভূইয়া (২০)।

প্রথম থেকেই ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, ‘যে শিশুটির কথা এখানে বলা হচ্ছে, সে ইয়ামিন মৃধার প্রথম সংসারের মেয়ে। মেয়েটির জন্ম হওয়ার পরই তার মা মারা যায়। এরপর ইয়ামিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন, রাজন ওই সংসারের ছেলে। দুই মাস আগে মেয়েটিকে স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় তার সৎ ভাই রাজন। তবে মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চান ওই স্কুলেরই একজন নিঃসন্তান শিক্ষিকা। মেয়েটিকে তিনি দুবার তার ফরিদপুরের বাড়িতেও নিয়ে যান। শেষবার তিনি কাউকে না জানিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে যান। এ নিয়ে যোগাযোগের এক পর্যায়ে গত ১৭ মার্চ শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে তার বাবা ইয়ামিনকে স্কুলে ডেকে নেয়া হয়। এরপর তার ভাই রাজনকেও ডেকে নেয়া হয়। তারপর তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘বাবা ও ছেলেকে নির্যাতনের আগে মেয়েটির একটি ভিডিও করা হয়, যেখানে সে তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে। আর ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের ভিডিওটিও আমরা প্রথমে পাইনি। এজন্য প্রথমেই যৌন নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারিনি। তবে ঘটনার পরের দিন তার বাবা ও ছেলেকে ডেকে এনে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কথা বলে আমরা বুঝতে পারি যে, ইয়ামিন এ অভিযোগ থেকে মুক্ত। পরে মেয়েটিকে যখন মেডিকেল টেস্ট করার জন্য পাঠিয়েছি, তখন সে সত্য কথা বলেছে। সে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছে, তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়নি। সে মেডিকেল টেস্ট করাতে চায় না। ওই তরুণী (রুমা) তাকে প্রলোভন দেখিয়েছেন। টাকা দিয়ে বলেছেন যে, ভাই আর বাবার বিরুদ্ধে এসব কথা বলতে হবে। আর ওই তরুণীকে দিয়ে এ কাজটি করিয়েছেন সেই স্কুলশিক্ষিকা।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের কাছে এসব কথা বলেনি, বরং কোর্টে বলেছে। তার ভাষ্য পাওয়ার আগেই কিশোরটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এখন বুঝতে পারছি সে নির্দোষ। আমরা এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেব এবং সে সংশোধনাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে যাবে।’

গত ১৭ মার্চ মধুখালীর জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে ইয়ামিন মৃধা ও তার ছেলে রাজনকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এরপর নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। ওই ভিডিওতে মাঝকান্দি এলাকার নাজিমউদ্দিনের মেয়ে রুমার নেতৃত্বে পাশবিক নির্যাতনের ভয়াবহতা ফুটে ওঠে। অবশ্য সোমবার পর্যন্ত রুমা গ্রেপ্তার হননি।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ